কোণঠাসা ভিপি জয়নাল by শাহজালাল রতন

ফেনী থেকে নির্বাচিত দেশের বহুল আলোচিত বিএনপিদলীয় সাংসদ জয়নাল আবেদিন ভিপির (ভিপি জয়নাল) রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ছোট হয়ে আসছে। ফেনী বিএনপির কার্যক্রমে এখন তার উপস্থিতি খুবই কম। তার এক সময়ের সহযোগীদের অনেকে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে শুরু করেছেন। জাসদে থাকাকালে গড়া গণবাহিনীর এখন অস্তিত্ব নেই। অনেকে দল ত্যাগ করে ভিন্ন দলে যোগ দিয়েছেন।


ভিপি জয়নাল ফেনী থেকে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভিপি জয়নাল বিএনপি প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এর আগে ভিপি জয়নাল জাতীয় পার্টির আমলে সিট ভাগাভাগির নির্বাচনে জাসদ (রব) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
ভিপি জয়নালের বিরুদ্ধে ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি বলে অভিযোগ ওঠে বিএনপি থেকে। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বণ্টনের সময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ ভিপির মনোনয়নের বিরোধিতা করে। পরে অবশ্য ভিপিই মনোনয়ন পান।
২০০৯ সালে জেলা বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনে ভিপি জয়নালকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়নি। এমনকি ভিপি জয়নালপন্থিদের জেলা কাউন্সিল অধিবেশনে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। কাউন্সিল অধিবেশনে দলীয় এমপি হিসেবে ভিপি জয়নালকে তার অনুপস্থিতিতে জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এরপর থেকে ভিপি জয়নাল ফেনী বিএনপিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ফেনীর রাজনৈতিক নেতারা জানান, ফেনী বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানেই তাকে আর দেখা যায় না। ফেনীতে দলের কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন না। এমনকি ফেনীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের জনসভায় ভিপি জয়নালকে দেখা যায় না।
বিভাজনের রাজনীতি
সূত্র জানায়, ভিপি জয়নাল ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে তাকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দু'তিন বছর যাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, ভিপি জয়নাল তার সঙ্গে আসা জাসদ নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। তিনি পরীক্ষিত ও পুরনো বিএনপি নেতাদের আমলে নিতে চান না। এ অভিযোগের পর থেকে জাসদ বিএনপি ও মূল বা রামপুর বিএনপি দুটি স্রোতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় ফেনীর উত্তরাঞ্চল ফলেশ্বর ও দক্ষিণাংশ রামপুর বিভাজন। উত্তরাঞ্চলের নেতৃত্বে ভিপি জয়নাল ও দক্ষিণাঞ্চলের নেতৃত্ব নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দার। এ বিভাজনে জয়লাভ করেন রামপুরের সমর্থকরা। পিছিয়ে পড়েন ভিপি জয়নাল।
ফেনী পৌর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, ভিপি জয়নাল বিএনপিতে যোগদান করলেও কখনও মন ও মননে বিএনপি হতে পারেননি। দলে তিনি জাসদ বিএনপি বলে একটি গোষ্ঠী তৈরি করেন। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ভিপি জয়নাল কয়েক বছরে দলকে বিভক্তি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রেহানা আক্তার বানু বলেন, দলের কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ভিপি জয়নাল উপস্থিত হন না।
ভিপি এখন একা
একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, ভিপি জয়নাল জেলা বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে থাকা অধিকাংশ নেতা তাকে ত্যাগ করেছেন। জাসদ থেকে আসা একটি অংশ ভিপি জয়নাল ও বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে চলে যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান, যুবদল নেতা মাহামুদুল হক মাধু, মশিউর রহমান মাসুম প্রমুখ। জেলা শ্রমিক দল নেতা আজমের সঙ্গে অবশ্য আগেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল। আজম এখন আওয়ামী লীগে। ভিপিপন্থিদের একটি অংশ বর্তমানে সাঈদ এস্কান্দারের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সাবেক পিপি আবু তাহের। আবার অনেকে বর্তমানে রাজনীতি থেকেই দূরে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক জাসদ (রব) সভাপতি বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খাজা মঈন উদ্দিন, অ্যাডভোকেট বাহার উল্লাহ, ভিপি আবুল খায়ের, অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ।
ভিপির মন্তব্য
ফেনী সদর আসনের বিএনপিদলীয় এমপি ভিপি জয়নালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি বিএনপিতে আছেন ও থাকবেন। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ফেনী বিএনপির সাংগঠনিক দায়িত্বে তিনি নেই। যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সঙ্গে দূরত্ব নেই। এমপি হিসেবে উন্নয়নমূলক কাজে সময় ব্যয় করছেন। দলের কর্মীদের বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি নিজেকে মাঠের লোক এবং মাঠে কাজ করবেন বলে উল্লেখ করেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন কতটুকু নিশ্চিত_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দল যাকে চাইবে তার পক্ষে কাজ করব।'

No comments

Powered by Blogger.