কোনো বাধা মানবো না-শনিবার ১০ ডিসেম্বর ২০১১ by নবনীতা তপু

কটি গান আমরা প্রায়ই গেয়ে থাকি_ 'যমুনার নাইয়া মোরা উজানে নাও চালাইয়া যাই...।' সমবেতর গান এটি।আজ লিখতে বসে মনে হচ্ছে, সমকাল সুহৃদ সমাবেশের পথচলা যেন সত্যিই উজানে নৌকা বেয়ে চলার মতোই। বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের স্রোতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, স্বদেশপ্রেম আর মানবিকতার মতো সুকুমারবৃত্তিগুলো যখন প্রায় একঘরে, যুবসমাজ যখন ভোগবাদিতার বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি, তখন সুহৃদ


সমাবেশের মতো সামাজিক সংগঠনগুলোর এগিয়ে চলা তো প্রতিকূলে নৌকা বেয়ে চলার সমানই কষ্টকর। তার পরও আমরা বিশ্বাস করি মানুষের শক্তিতে আশ্রয় খুঁজি একতার গানে। যার প্রমাণও আমরা পেয়েছি বারবার, আমাদের সব আয়োজনে। এই তো সেদিনের কথা। যশোরে সুহৃদের স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন। শুরু থেকেই চিন্তা করেছিলাম, এবার যশোরের মানুষের সামনে তুলে ধরব এমন একজন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে, যার সাহসিকতা, বিজয়ের গাথা, সর্বোপরি মানুষটিকেই আমরা ভুলতে বসেছি। ভাবনা তো হলো। কিন্তু প্রথমেই সমস্যা। কে আমাদের এমন একজন বীরের নাম বলতে পারবেন। আমরা চাই এমন একজনকে যার কথা কেউ মনে রাখেনি। শুরু হলো খোঁজ। ইতিহাসের পাতা ওল্টানো। অনেকের সঙ্গে আলোচনার পর সাহায্য পাওয়া গেল যশোরের আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায়ের কাছ থেকে। বললেন একজন মাহমুদা খানমের কাহিনী। ঠিকানাও দিলেন_ মধুগ্রাম। ঠিকানা পাওয়ার পর ভাবলাম, কাজ বোধহয় কিছুটা সহজ হলো। কিন্তু বাধা যেন সেখানেই শুরু। ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে মধুপুর গ্রামে পেঁৗছলেও কেউ বলতে পারছিল না অনেক খুঁজে অবশেষে পাওয়া গেল তার বাড়ি। কিন্তু বাড়ির ভগ্নদশা, তার রুগ্ণ, শীর্ণ অবস্থা ও শতছিন্ন পোশাক দেখে আমরা যন্ত্রণা ও লজ্জায় কুঁকড়ে গেলম। একাত্তরের জননী সাহসিকার মাথার ওপর আজ চাল নেই, পেট ভরে খাবারের সংস্থান নেই। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেখলাম দারিদ্র্যের কশাঘাতে ন্যুব্জ মানুষটির মুখের অমলিন হাসি। দেখলাম মুক্তিযুদ্ধ তার গৌবর, অর্থ আয়ের হাতিয়ার নয়। আমরা সম্মাননা দেব শুনে তার আনন্দ যেন বাঁধ ভাঙল। আমরা যে তাকে বড় অবহেলা করেছি। তিনি সানন্দে রাজি হলেন আমাদের আয়োজনে আসতে।
নিজেদের আর্থিক সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা আমরা জানতাম। আয়োজনও ছিল সে রকম ক্ষুদ্র পরিসরেই। কিন্তু এবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম। সিদ্ধান্ত হলো, যশোরের মানুষকে বলতে হবে_ দেখ, আমরা কেমন আত্মবিস্মৃত জাতি। কেমন করে অবহেলা করেছি আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমরা ঘুরতে লাগলাম মানুষের কাছে, এবারের চাওয়া সম্মাননা আয়োজনটাকে একটু বড় পরিসরে করার জন্য সহযোগিতা আর মাহমুদা খানমের জন্য একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করা। প্রথম প্রথম দু-একজন আমাদের হতাশ করলেও আমাদের বিশ্বাসই জয়ী হলো। অনুষ্ঠান হলো শহরের প্রাণকেন্দ্র ভৈরব চত্বরে। মাহমুদা খানমকে সম্মাননা ছাড়াও আমরা দিতে পারলাম পরিধেয় বস্ত্র, কিছু নগদ টাকা, আহামরি না হলেও মাথার ওপর একটু আচ্ছাদন। সমকালের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পেঁৗছে গেল তার যুদ্ধজয়ের গল্প। ভৈরব চত্বরে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের ইতিহাস বিবৃত করতে করতে উড়িয়ে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে নারীর বীরত্বের জয়নিশান।
হ সুহৃদ, সুহৃদ সমাবেশ, যশোর

No comments

Powered by Blogger.