মনের জানালা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন। স্থানস্বল্পতার কারণে সব চিঠির উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আমরা দুঃখিত। —বি. স.
সমস্যা: মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগ পাইনি। এটা ছিল আমার ভর্তি হওয়ার শেষ সুযোগ। আর কখনোই পড়া হবে না আমার মেডিকেল কলেজে। এ লেখা যখন লিখছি , আমি খুব কাঁদছি। কারণ দ্বিতীয়বার অনেক পরিশ্রম করেছি। পরিবারের সবাই জানে কত কষ্ট করেছি আমি। তার পরও আমার ভাগ্যে মেডিকেল কলেজ নেই। আমি কলেজজীবনের প্রথম দিনই একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম। গত বছর ও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমি খুব পরিশ্রম করেছিলাম সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়ে ওর যোগ্য হতে। ফলাফল বের হওয়ার পর তিনবার চেষ্টা করেছি আত্মহত্যা করতে, কিন্তু পারিনি।
প্রাণ, সিলেট।
পরামর্শ: আমি বুঝতে পারছি তুমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করনি। সে কারণে তুমি অনেক কষ্ট পাচ্ছ। বুঝতে পারছি না, তুমি ঠিক কী কারণে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে। সেটি কি সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার জন্য, অর্থ উপার্জনের জন্য, অভিভাবকদের খুশি করার জন্য, মেয়েটির যোগ্য হওয়ার জন্য, নাকি সত্যিকারের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের সেবার জন্য? যদি এর কোনোটি সত্যি হয়, তাহলে আমি বলব, আমাদের দেশের অসহায় মানুষ তোমার আন্তরিক সেবা থেকে তখনো বঞ্চিত হবে। আর যদি বল পাঁচটি কারণই তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তবু বলব সততার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম না করলে তুমি একজন আদর্শ চিকিৎসক হতে পারবে না। পরিবারের লোকেরা তো দেখেছে তুমি কত শ্রম দিয়েছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য, তাই না? তারা নিশ্চয়ই তোমার সঙ্গে রয়েছে এবং তোমাকে অধ্যবসায়ের জন্য স্বীকৃতি দিচ্ছে। তুমিও সেই স্বীকৃতিটুকু নিজেকে দিও এবং আত্মীয়স্বজনের মন্তব্য শুনে নিজেকে একটুও ছোট কোরো না। নিজের প্রতি যথেষ্ট সম্মান এবং ভালোবাসা নিয়ে অন্য কোনো আগ্রহের বিষয়ে পড়াশোনা কোরো। যেকোনো শিক্ষাকে ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারলে তুমি নিশ্চয়ই অন্য কোনো ক্ষেত্রেও একজন সফল মানুষ হতে পারবে।

সমস্যা: আমি সাজগোজ আর কেনাকাটা করতে খুব পছন্দ করি। যেমন: জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিকস, গয়না ইত্যাদি। কিন্তু কেনার পর দারুণ অস্বস্তিতে ভুগি। মনে হয় কেন কিনলাম এগুলো, না কিনলেও হতো; শুধু টাকা অপচয়। আর মনে হয়, দাম বেশি নিয়েছে, এটা না কিনে ওটা কিনলে ভালো হতো। বাড়িতে আসার পর আমার প্রচণ্ড মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আমার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, আমি প্রতিনিয়ত অন্যের সঙ্গে তুলনা করি। ওর এটা আছে, আমার নেই কেন, ইত্যাদি। কেন আমার এমন হয়?
উপা, আরমানিটোলা।
পরামর্শ: তুমি তোমার ব্যক্তিত্বের দুটি বৈশিষ্ট্য খুব সচেতনভাবে অল্প কথায় তুলে ধরেছ। তুমি সাজতে পছন্দ কর, সেটা তো এই বয়সে করতেই পার। রুচিসম্মতভাবে সাজলে অন্যরা প্রশংসাই করে এবং সেই সঙ্গে নিজেরও মন ভালো থাকে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাজগোজের সরঞ্জাম কেনা সমস্যাই বটে। মনে হচ্ছে, তুমি যখন কিছু ভাব, তা তোমাকে খুব গভীরে নিয়ে যায়। ভাবনাগুলো বেশির ভাগই নেতিবাচক অর্থাৎ একধরনের অবসেশনে ভুগছ তুমি। হয়তো বা অবচেতনভাবেই এই অবসেশন থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য তোমার কম্পালসিভ শপিংয়ের অভ্যাস তৈরি হয়েছে। এ কাজ তুমি অবচেতন মনের প্রভাবে পড়ে করছ। তাই পরে সচেতন মন থেকে বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, কাজটি ঠিক হয়নি। এই আচরণ এখন আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে, যেটির ইংরেজি নাম হচ্ছে শপাহলিজম। তুমি তো ইচ্ছা করে এই অভ্যাস গড়ে তোলোনি। তাই শুধু নিজেকে দোষারোপ কোরো না। ভালো হয়, তুমি যদি এর জন্য সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নাও। এর দ্বারা অবচেতন মনের গতিবিধি বুঝে তুমি সচেতন মনটি আরও দক্ষভাবে ব্যবহার করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ক্রিয়া অথবা ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে গিয়ে তুমি কোনো ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে সাইকোথেরাপির সাহায্য নিলে নিজেকে অনেক ভালো রাখতে পারবে এবং সেই সঙ্গে আদর্শ মা-ও হতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.