শীতলক্ষ্যায় দুই সহস্রাধিক সীমানা পিলার পুনঃস্থাপনের কাজ বন্ধ by দিলীপ কুমার মণ্ডল,

নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। ভূমি প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স এ বছর মে মাসে শীতলক্ষ্যা নদী পরিদর্শন শেষে দুই সহস্রাধিক পিলার পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। বরং জেলা প্রশাসন ও বিআইডাবি্লউটিএ কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালির ও জেদাজেদির কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীসহ রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী চারটি নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডাবি্লউটিএকে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসন ও বিআইডাবি্লউটিএ যৌথ উদ্যোগে সিএস ও আরএস অনুযায়ী জরিপ করে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে। পরে আরএস অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ৩২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হয়। চলতি বছরে শুরু হয় সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপনের কাজ। তবে শীতলক্ষ্যা নদীতে সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় চলতি বছরের ১৬ মে ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান শীতলক্ষ্যা নদী পরিদর্শন করেন। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ওই টাস্কফোর্স নদীর সীমানা পিলার স্থাপন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে নদীর তীর ও ফোরশোরের জায়গা এবং নদীগুলোর বর্ষাকালীন স্বাভাবিক প্রবাহ বিবেচনায় এনে সীমানা নির্ধারণপূর্বক হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে পিলার পুনঃস্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয়।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিএস ও আরএস অনুযায়ী সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য বিআইডাবি্লউটিএর চেয়ারম্যান ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সহায়তায় স্ব স্ব জেলা প্রশাসনের ওপর এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নদীর ফোরশোর নির্ধারণ করে অক্টোবর মাসের মধ্যে পিলার পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেয় ভূমি প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটি।
জেলা প্রশাসন ও বিআইডাবি্লউটিএ সূত্র জানিয়েছে, শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ে ১৩ শতাধিক ও পশ্চিম পাড়ে ৭ শতাধিক পিলার পুনঃস্থাপন করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, পিলার পুনঃস্থাপনের কাজ জেলা প্রশাসন ও বিআইডাবি্লউটিএর জেদাজেদির কারণে শুরু করা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি মৌজার সোহরাব ভেজিটেবল অয়েল মিলস লি. এবং আম্বর পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলসের কয়েকটি পাকা স্থাপনা আরএস অনুযায়ী স্থাপিত নদীর সীমানা পিলার থেকে নদীর অভ্যন্তরে অবস্থিত। বন্দরে আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির উত্তর পাশে সাতটি সীমানা পিলার বাউন্ডারি দেয়ালের ভেতর। শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ে শান্তিনগর গুচ্ছগ্রাম থেকে মদনগঞ্জ লঞ্চঘাট পর্যন্ত ২২টি পিলার, সামিট গ্রুপের পাওয়ার
প্ল্যান্টের সামনে ১২টি পিলার, আলিফ ডকইয়ার্ডের সামনে চারটি, সিমেঙ্ সিমেন্টের সামনে সাতটি, রূপালি মাঠের সামনে ১০টি, সিএসডি খাদ্যগুদামের সামনে ছয়টি, সুরুচী ভেজিটেবল ফ্যাক্টরির সামনে ১৮টি, শামসুল আলামিন কটন মিলসের সামনে ২৫টি, রূপায়ণ গ্রুপ ও কুড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ২৯টি, জামান ডকইয়ার্ডের সামনে ১৫টি, কাঁচপুরের সুপার ক্রিট সিমেন্ট, মালেক জুট মিল, সিনহা গ্রুপ, জয়া গ্রুপ, স্ক্যান সিমেন্ট, সোনালি পেপার মিল, নিশান জুট মিলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সামনে ৯৪টি, সাবনাম ভেজিটেবলের সামনে ৩৯টি, জুটো ফাইবার গ্লাসের সামনে ৬৫টি, রূপচাঁদা ফ্যাক্টরির সামনে ৫০টি, সিটি গ্রুপের সামনে ১০০টি, ক্রিয়েটিভ পেপার মিল, মির সিমেন্ট, হাসেম ফুডের সামনে ৭০টি, গাউছিয়া জুট মিলের সামনে ৬০টি, এসিআই সল্ট, এন এন আই পাম্প হাউস, পারটেঙ্ গ্রুপের সুগার মিল, পূর্বাঞ্চল পেপার মিল, আলফা কনক্রিটের সামনে প্রায় ৪০০টি সীমানা পিলার পুনঃস্থাপন করতে হবে।
জানা গেছে, প্রতিটি সীমানা পিলার ২০ থেকে ৭০০ ফুট পর্যন্ত ভেতরে পুনঃস্থাপন করতে হবে। অনেক স্থানে সীমানা পিলার নদীর ভেতরেই স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, আরএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ করা হয়েছিল। পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সের নির্দেশের পরে স্থানীয় সার্ভেয়ারদের নিয়ে আবার সীমানা নির্ধারণ করার উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে। তবে বিআইডাবি্লউটিএর সার্ভেয়ার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তারা কাজটি শুরু করতে পারেনি। চলতি মাসেই আবার সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হবে। তিনি পিলার নির্মাণে অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে বিআইডাবি্লউটিএর ঊর্ধ্বতন উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বিআইডাবি্লউটিএর সার্ভেয়ারদের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করার অভিযোগটি সত্য নয় উল্লেখ করে বলেন, সীমানা পিলার স্থাপনে কার কী কাজ, তা হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সীমানা পিলার স্থাপন কার্যক্রম সঠিক না হওয়ার বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানাই।' এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুনভাবে ৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শীতলক্ষ্যায় সীমানা পিলার নির্মাণ সঠিকভাবে স্থাপনের জন্য আবার সার্ভে কার্যক্রম চলছে। এতে বিআইডাবি্লউটিএ সব কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সহযোগিতা করছে বলে তিনি দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.