ভিওআইপির অবৈধ কারবার বেড়েছে-* প্রতিরোধে বিশেষ কমিটি হচ্ছে -* দুর্নীতির আখড়া বিটিসিএল!

য়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের (ভিওআইপি) মাধ্যমে বৈদেশিক টেলিফোন কলের অবৈধ কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না, বরং সম্প্রতি আরো বেড়েছে। এই বাস্তবতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তা প্রতিরোধে উচ্চপর্যায়ের বিশেষ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোস জানান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)


স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খানকে প্রধান করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে বিটিআরসির তিনজন, মন্ত্রণালয়ের দুজন ও দুজন বিশেষজ্ঞ থাকবেন। কমিটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটর থেকেও বিশেষজ্ঞ নিতে পারবে। তিনি বলেন, কমিটি ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেবে।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিযোগাযোগ কম্পানি বিটিসিএল ও টেলিটকের বিরুদ্ধে অবৈধ এই কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগ জোরদার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সচিব গতকালও ওই অভিযোগ সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভিওআইপির অবৈধ কারবারে টেলিটকের সিম ব্যবহার হচ্ছে। এর অর্থ এই নয়, টেলিটকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে জড়িত। বিটিসিএল সম্পর্কে যে অভিযোগ তাও অনুমাননির্ভর। ভিওআইপির অবৈধ কারবারিরা এখন নম্বর জেনারেট করে ব্যবসা চালাচ্ছে।'
এদিকে বিটিসিএলের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর মহাখালীতে বৈদেশিক টেলিযোগাযোগ দপ্তরটি ভিওআইপির অবৈধ কারবারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ দপ্তরে সাধারণের প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দপ্তরটির আইটিএঙ্ বিভাগের এডি পদের একজন নারী কর্মকর্তা ভিওআইপি কারবারিদের 'এসটিএম-১' (এক হাজার ৮৯০টি ভয়েস সার্কিট) গোপন হিসাব সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, মহাখালী আইটিএঙ্রে কল ডাটা রেজিস্টারে (সিডিআর) বিদেশি ক্যারিয়ারদের কাছ থেকে আসা ইনকামিং কলের সব তথ্য যাতে না আসে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওই সব ক্যারিয়ারের মধ্যে গোপন চুক্তিভুক্ত কলগুলো পিক-আওয়ারে সিডিআরে রেকর্ড করা হয় না। এসব ক্যারিয়ারের মধ্যে রয়েছে কানাডার রাইয়ান ও মাইয়াবরা, রুমানিয়ার মারোবা, হংকংয়ের সাইন টাউন ও সাবিল আইটি, সিঙ্গাপুরের ক্লিয়ারস্টিম, ডিজিটেক, এইচএসি জাপান, আই-পাওয়ার, টাচটুন, ব্লু-ব্রেরি ও সাইন ওয়ার্ল্ড, যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, সিম্পলটেল, ম্যাঙ্টেল ও ওয়েস্টার্ন টেল। এসব ক্যারিয়ারের বেশ কয়েকটির বাংলাদেশে শাখা রয়েছে এবং বাংলাদেশিরাও এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
বিটিসিএলে ব্যাপকভাবে চলমান ভিওআইপি দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ওই কর্মকর্তারা আরো জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বিটিটিবির (বর্তমানে বিটিসিএল) গডফাদার হিসেবে পরিচিত যে কর্মকর্তা এ ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযুক্ত ছিলেন, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে যাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, তিনিই এখন বিটিসিএলের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। ভিওআইপি দুর্নীতির ব্যাপকতার এটি একটি অন্যতম কারণ। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও মামলা নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা প্রভাবশালী মহলের চাপে নিতে পারেনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ২২ নভেম্বরের বৈঠকে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সাইদ খান অভিযোগ করেন, ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসায়ীরা তাঁদের কম্পানিতেই রয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাধর হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাচ্ছে না। তিনি নিজেও হুমকির মুখে রয়েছেন বলে জানান।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ জানান, বিটিসিএল ও টেলিটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.