কুয়েতি মন্ত্রিসভার পদত্যাগ

ত্তপ্ত হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দেশ কুয়েতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিরোধীদলীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে তিক্ত বিরোধের জের ধরে গতকাল কুয়েতের মন্ত্রিসভা গতকাল পদত্যাগ করে। রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-সাবাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।গত কয়েক মাস ধরে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ নাসের মোহাম্মাদ আল-আহমাদ আল-সাবাহর


পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিল সরকারবিরোধীরা। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে তারা গতকাল রাজধানী কুয়েত সিটির ডিটারমিনেশন স্কয়ারে রাতভর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। এর পর পরই মন্ত্রিসভার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিরোধীদলীয় এমপি খালেদ আল-সুলতান গতকাল বলেন, 'কুয়েতের মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে এবং আমির তা গ্রহণ করেছেন। আমরা নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের অপেক্ষা করছি। এরপর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হবে।' এ ব্যাপারে পার্লামেন্টের স্পিকার জাসেম আল-খোরাফি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। এর আগে সাম্প্রতিক সময়ের পরিস্থিতিতে সরকারের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে বিচার, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নবিষয়ক তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
আমিরের ভাগ্নে শেখ নাসেরকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০০৬ সালে। এর মধ্যে তিনি নানান সংকটে মোট সাতবার পদত্যাগ করেছেন। আবার পদাসীন হয়েছেন। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে তিনবার।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ২৪ বিরোধীদলীয় কর্মীর আটকাদেশের মেয়াদ আরো তিন সপ্তাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন সরকারি কেঁৗসুলি। গত ১৬ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের পর বিক্ষেভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে।
আটকাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর পর বিক্ষোভকারীরা গতকাল বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়। ডিটারমিনেশন স্কয়ারে গতকাল রাতভর অবস্থান কর্মসূচি ছিল তাদের। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি জনগণের তহবিল বিদেশে পাচার করেছেন। এ ছাড়াও সরকারপন্থী ১৫ এমপি বিভিন্ন সময়ে ৩৫ লাখ ডলার ঘুষ নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, এতে প্রধানমন্ত্রীরও সংশ্লিষ্টতা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, বিক্ষোভকারীদের পূর্বপরিকল্পিত বক্তব্য দেওয়া শেষ হলে অবস্থান কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। তিনি জানান, স্কয়ারে কোনো ব্যক্তিকে রাত কাটাতে দেওয়া হবে না। অন্য কোনো লক্ষ্য অভিমুখেও তাদের মিছিল করতে দেওয়া হবে না বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দাহেম আল-কাহতানি বললেন, 'আমরা একেবারে সংঘাতের মুখে চলে এসেছি। এর থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে, পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন দেওয়া।' উপসাগরীয় অঞ্চলে কুয়েতই একমাত্র দেশ, যেখানে ৫০ বছর আগে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। যদিও দেশটির সর্বময় শাসন ক্ষমতা এখনো আমিরের হাতেই রয়ে গেছে। পৌরসভা পরিষদের সাবেক সদস্য খলিফা আল খোরাফি তাঁর এক টুইটে সতর্ক করে বলেন, 'কুয়েতকে কখনোই এতটা জটিলতা ও সংকটময় সময়ের মোকাবিলা করতে হয়নি। চরম বিপর্যয়ের আগেই সংকট নিরসনে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।' সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, আল-ওয়াতান, এএফফি।

No comments

Powered by Blogger.