পাকিস্তান এগিয়ে কিন্তু বাংলাদেশ তো বিপজ্জনক দল! by সাইদুজ্জামান

গালিভার আর লিলিপুটের গল্পটা তো এমনই অসম লড়াইয়ের। আজ মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ৫০তম ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তান টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সফল দল। আর এ ফরম্যাটের সবশেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পরও বাংলাদেশ দিন-রাতের এ ম্যাচে লিলিপুট। প্রতিপক্ষ এর আগের ৪৯ ম্যাচে ৩০টিতে জেতা দল। সেখানে ম্যাচসংখ্যায় সবচেয়ে নিচে থাকা জিম্বাবুয়েকে ছুঁয়ে ফেলছে মাত্র বাংলাদেশ।
১৮ নম্বর ম্যাচে বাংলাদেশ তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে, এ স্বপ্ন ক্রিকেট মহলে কেউ দেখলেও আপাতত নীরব আছেন তিনিও।
অবশ্য মোহসীন খানের সরকারি ভাষ্যটা অন্য রকম। ম্যাচ শুরুর আগে গতকাল সব প্রশ্নেই পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে দেখে তাঁর বিনয়, 'আপনাকে ধন্যবাদ পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রশংসা করার জন্য। তবে আমি ছেলেদের সব সময় বলি যেন কেউ কোনো প্রতিপক্ষকেই হালকাভাবে না নেয়।' সেটি শুধু টোয়েন্টি টোয়েন্টিই নয়, ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেবে না দল_এ ঘোষণা দিয়ে গেছেন পাকিস্তান কোচ। স্টেডিয়ামপাড়ায় গুঞ্জন, পাকিস্তান যেন মন দিয়ে ক্রিকেটটা খেলে, স্পট ফিঙ্ংি কেলেঙ্কারির যুগে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এ সিরিজে রঞ্জন মাদুগালেকে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে আইসিসি!
পাকিস্তান দলটা বড্ড বিপজ্জনক। নিজেদের দিনে বিশ্বের যেকোনো প্রতিপক্ষই তাদের সামনে অসহায়। আবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের নাস্তানাবুদ হওয়ার দৃশ্যও দেশের ক্রিকেট স্মৃতিকে এখনো নাড়া দিয়ে যায়। কিন্তু ওই একবারই আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচে পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ২০০৩ সালের মুলতান টেস্ট ছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিরোধের গল্পও নেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এ দুই দলের দ্বৈরথ যথারীতি একপেশে, ৪-০। তবু কম ওভারের খেলা বলেই বাংলাদেশকে মোহসীন খানের বাড়তি সমীহ দেখানোর মাঝে পেশাদারিত্বের চেয়ে 'দূতিয়ালী'র ভদ্রতার ছাপটাই যেন বেশি, 'নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল।' বিশ্বে 'বিপজ্জনক' দল হিসেবে 'খ্যাতি' জুটে গেছে বাংলাদেশের ভাগ্যেও। বিপজ্জনক পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাবনার 'ছুরি'ও আচমকা প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা। যদি তামিম ইকবাল একটা বিস্ফোরক ইনিংস খেলে ফেলেন। যদি এ ম্যাচেই ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে জেগে ওঠেন ইমরুল কায়েস। কিংবা রুবেল হোসেন অথবা আবদুর রাজ্জাকের একটা স্বপ্নের স্পেল থামিয়ে দেয় পাকিস্তানের ঝড়ো ব্যাট। অনেক 'যদি'র ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় টোয়েন্টি টোয়েন্টি জয়। সব মিলিয়ে পঞ্চম। টানা তিন ম্যাচ জিতে ঢাকায় আসা পাকিস্তান তো 'ল অব অ্যাভারেজ' ঘূর্ণাবর্তেও আটকে যেতে পারে!
ক্রিকেটে ভাগ্যের হাত এতটাই প্রকাশ্য যে শতভাগ কুসংস্কারমুক্ত খেলাটার সঙ্গে জড়িত প্রায় কেউই নন। আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার করেন না। তবে পাকিস্তানকে শুরুতেই মিরপুরের তিন নম্বর উইকেটে ফেলে দেওয়ার পেছনে কি কোনো সংস্কারের প্রভাব নেই? এ উইকেটেই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫৮ রানে প্রায় সব হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। যে দুঃসহ স্মৃতি অক্টোবরে সেই ক্যারিবীয়দের টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে হারায় মুশফিকুর রহিমের দল। কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার মুখে তালাও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে। তাই বলে মিরপুরের তিন নম্বর উইকেট রাতারাতি গতিময় হয়ে উঠবে, সে সম্ভাবনা নেই। অঙ্কটা পরিষ্কার। ধীরগতির উইকেটে স্ট্রোক খেলার জন্য পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের অপেক্ষায় রেখে যদি রানটাকে নাগালের মধ্যে রাখা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এ ফরম্যাটে রানের ফোয়ারা ছোটানো পাকিস্তানকে কতটা বাগে রাখা যাবে, তা নিয়ে বিস্তর সংশয় আছে। ওপরে ফর্মের তুঙ্গে থাকা মোহাম্মদ আসিফ কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডারে শহীদ আফ্রিদি একটা 'বুম বুম' মার্কা ইনিংস খেলে দিলে দেড় শ' ছুঁয়ে ফেলা অসম্ভব নয় পাকিস্তানের জন্য। তিন নম্বর উইকেটের দেড় শ' পরে ব্যাট করা দলের জন্য কার্যক্ষেত্রে আরো বেশি রান। উইকেটের কারণে এ রানটা বাংলাদেশ করে ফেললে বদলে যেতে পারে ম্যাচের চিত্রনাট্য।
মুশফিকুর রহিম বরাবরই আশাবাদী মানুষ, 'টোয়েন্টি টোয়েন্টি সংক্ষিপ্ত খেলা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার আগে ওরাও ফেভারিট ছিল। কারণ এ খেলাটা আমরা সচরাচর ভালো খেলে থাকি না। ওই ম্যাচটা কিন্তু আমরা জিতে বেরিয়েছিলাম। কালকের ম্যাচে আমরা ভালো শুরু করলে এবং সেটা ধরে রাখতে পারলে ফল আমাদের পক্ষেও আসতে পারে। হ্যাঁ, ওরা ভালো ফর্মে আছে। কিন্তু কাল তো সেই প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। ওরা যা করে এসেছে সেসব এখন ইতিহাস।' সাম্প্রতিক সুসময়কে 'অতীত' বলে তা মাঠে নিয়ে আসার কোনো আগ্রহ নেই পাকিস্তান কোচ মোহসীন খানেরও, 'কাল যা হয়েছে, তা অতীত। আজ আরেকটি নতুন শুরুর দিন।' এটাও মিসবাহ-উল হকদের পাখি পড়ানোর মতো করে বলছেন তিনি। কিন্তু ড্রেসিংরুমটা পাকিস্তানের। সেখানে 'বাধ্য'তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানে ক্রিকেটবিশ্ব। কোচের পরামর্শ উপেক্ষা করে একটু ঢিলেমি চোরাবালির কিনারে নিয়ে যাওয়া পাকিস্তানকে যদি জোর ধাক্কা দিতে পারে বাংলাদেশ। তাহলে অসম্ভব নয়।
লিলিপুটের দেশে গালিভারের ভড়কে যাওয়ার গল্পটা তো সবারই জানা!

No comments

Powered by Blogger.