আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-বিচারপতি নিজামুল হকের ব্যাখ্যা চেয়ে আবেদন খারিজ

ন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক কোন বিবেচনায় বিচারকাজ পরিচালনা করছেন, এর ব্যাখ্যা চেয়ে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে অভিমতে বলেছেন, এ আবেদন আদালত অবমাননার শামিল, নজিরবিহীন ও হাস্যকর। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী এ ধরনের আবেদন করার এখতিয়ার নেই। দেশে কোনো উদাহরণও নেই।


একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীরা পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। বরং ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের পক্ষে বেশ কয়েকটি আদেশ দিয়ে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার সাঈদীর আবেদন খারিজ করে ওই অভিমত দেন। নিজামুল হককে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারক পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য সাঈদীর আবেদন খারিজ হওয়ার পর তাঁর দায়িত্ব পালনের ব্যাখ্যা চেয়ে দ্বিতীয় আবেদনটি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, গণতদন্ত কমিশন ছিল সুশীল সমাজের করা। এটা সরকারি কোনো আইন দিয়ে করা হয়নি। এ কারণে ওই কমিশনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আর ওই কমিশনের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনেরও আইনগত ভিত্তি নেই। আদেশে বলা হয়, তিনি ওই গণতদন্ত কমিশনের সচিবালয়ের সদস্য ছিলেন মাত্র। কমিশনের তদন্ত কার্যক্রম, প্রতিবেদন তৈরি কিংবা যাচাই-বাছাই করা, বানান সঠিক করার কোনোটিরই সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
প্রথম আবেদনের ওপর দেওয়া আদেশে ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ও এ কে এম জহির আহমেদ জানান, কোনো বিচারককে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার তাঁদের নেই। পদত্যাগের বিষয়টি বিচারপতি নিজামুল হকের সুবিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরও নিজামুল হক তাঁর দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখলে সাঈদীর আইনজীবীরা নিজামুল হকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে আবেদন করেন।
গতকালের আদেশে বলা হয়, সংবিধান ও আইনের অধীনে এ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ হয়েছে। তাই ট্রাইব্যুনালের বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলার আগে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়াটাই তাঁর নিরপেক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়। আদেশে আরো বলা হয়, একজন বিচারপতি শপথ নেওয়ার সঙ্গে বিচারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাটা তাঁর পবিত্র দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। 'পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা' বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, নিছক সন্দেহ, ধারণা বা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। বাংলাদেশে বিচার বিভাগের দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাসে এ রকম নজির নেই।
বিচারপতি নিজামুল জানান, এখন যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা এক মাস আগেও তাঁদের জানা ছিল। তখন অভিযোগ না করে বিচারকাজ বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে এখন আবেদন করা হয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যে মন্তব্য করেছেন, এর সঙ্গে একমত ট্রাইব্যুনাল।
আদেশের পর প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালকে বলেন, 'অবমাননার জন্য আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আদালত আইনি পদক্ষেপ নিন।' জবাবে নিজামুল হক বলেন, 'বিষয়টি অভিমত হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি, এ আবেদন উদ্দেশ্যমূলক। এ ব্যাপার সে পর্যন্তই থাকুক।'

No comments

Powered by Blogger.