মিয়ানমারে এক লাখ টন আলু রপ্তানির সম্ভাবনা by রাজীব আহমেদ

বাংলাদেশ থেকে এক লাখ টন আলু আমদানি করতে চায় মিয়ানমার। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার গেলে ওই দেশের ব্যবসায়ীরা এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের এ আগ্রহের কারণে বাংলাদেশের হিমাগার মালিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। কারণ তাঁরা শেষের দিকে আসা এ মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা করছেন।


মিয়ানমারের আগ্রহের কথা জানার পর তারা কোন ধরনের আলু কিনতে চায়, রপ্তানি লাভজনক কি না, কোন পথে রপ্তানি সম্ভব তা খতিয়ে দেখছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাত্র ১০ টাকা কেজিদরে রপ্তানিমানের আলু টেকনাফ পর্যন্ত পেঁৗছে দিতে পারবেন তাঁরা।
গত মৌসুমে দেশে এক কোটি টনের কাছাকাছি আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৬ লাখ টন আলু মজুদ করা হয়েছিল দেশের প্রায় সাড়ে ৩০০ হিমাগারে। এর মধ্যে সাত-আট লাখ টন বীজআলু। বাকিটা খাওয়ার আলু। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালো দাম না পাওয়ায় কৃষক নতুন শুরু হওয়া মৌসুমে আলুচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে তাঁরা বীজআলুও হিমাগার থেকে নিচ্ছেন না। খুব ধীরগতিতে হিমাগার খালি হচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে।
ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে নতুন আলু উঠতে শুরু করে। প্রথম কয়েক দিন এর কেজিপ্রতি দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন ৭০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আগাম জাতের এই আলু। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন আলুর সরবরাহ ব্যাপক হারে বাড়বে। ফলে পুরনো আলুর কদর কমে যাবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু ৯টি হিমাগারের মালিক। তাঁর হিমাগারগুলোর ধারণক্ষমতা আট লাখ ৫৭ হাজার বস্তা। প্রতি বস্তায় প্রায় ৮৫ কেজি আলু থাকে। গত রবিবার পর্যন্ত হিসাবে তাঁর হিমাগারগুলো থেকে ৬৬ শতাংশ আলু খালাস হয়েছে। এখনো দুই লাখ ৯৫ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে আছে, বর্তমান নিম্ন বাজার মূল্যে যার দাম প্রায় আট কোটি টাকা বলে জানান তিনি। আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রতি বস্তা আলুর হিমাগার ভাড়া ২৭৫ টাকা। কিন্তু আলুর দাম আছে ২৪০ টাকা। ফলে অনেক কৃষক আলু নিতে হিমাগারেই আসছেন না। তিনি আশঙ্কা করছেন, এ বছর তাঁর হিমাগারে মোট মজুদ করা আলুর ২০ শতাংশ অবিক্রীত থেকে যাবে, যার পুরোটাই তাঁকে লোকসান দিতে হবে।
অন্যদিকে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জসীম উদ্দীন কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি এখন তাঁর ৪০টি গরু ও পুকুরের মাছকে আলু খাওয়াচ্ছেন। ভুট্টার সঙ্গে আলু সিদ্ধ মিশিয়ে মাছের খাবার তৈরি করছেন তিনি। তিনি বলেন, এ বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকবে।
যখন বাংলাদেশে আলুর কেজিপ্রতি দাম হিমাগারে তিন থেকে চার টাকা, তখন মিয়ানমারের মানুষ প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে আলু কিনে খাচ্ছে। এ জন্য সে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানির আগ্রহ দেখান।
মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাওয়া এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি জসিম উদ্দীন কালের কণ্ঠকে জানান, 'আমরা তাদের বাংলাদেশ থেকে আলু কেনার প্রস্তাব দিয়েছি। তারা খুবই আগ্রহী। এখন এ দেশের আলু রপ্তানিকারকরা তাদের সঙ্গে আলাপ করে সবকিছু ঠিকঠাক করবেন।'
আরেক সফরসঙ্গী এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, তারা আলু কিনতে আগ্রহী। তবে সমস্যা হলো মিয়ানমার আন্তর্জাতিক ব্যবসা ঋণপত্রের মাধ্যমে না করে নগদ অর্থে করে। এ ক্ষেত্রে আলু পাঠানোর পথ ও অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি সুরাহা হলে আলু রপ্তানি সম্ভব হবে।'
এ বিষয়ে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জসীম উদ্দীন বলেন, 'মিয়ানমার আলু নিতে চায়_এ কথা বাণিজ্যমন্ত্রীও আমাকে বলেছেন। আমি রপ্তানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। তারা কী ধরনের আলু খায়, কোন পথে আলু রপ্তানি করা যায়, আলু রপ্তানি লাভজনক হবে কি না ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখছি।' তিনি বলেন, 'আলুর জাহাজ সিঙ্গাপুর হয়ে মিয়ানমারে পেঁৗছালে আলু রপ্তানি সম্ভব হবে না। কারণ তাতে খরচ অনেক বেশি পড়বে। আর সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ইয়াঙ্গুনে গেলে সেটা সম্ভব। আর সবচেয়ে ভালো হয় সড়ক পথে গেলে। আমরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছি।'
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, মিয়ানমার আলু নিতে চাইলে তিনি ১০ টাকা কেজিদরে রপ্তানি মানের আলু টেকনাফ পর্যন্ত পেঁৗছে দিতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.