সামর্থ্যের শেষ বিন্দুও ঢেলে দেবে পাকিস্তান

চ্ছে না কী পাকিস্তান ক্রিকেটে? দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে সে দেশ সফরে যাচ্ছে না অন্য কোনো দল। ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে জেলখানায় এখন তাদের ক্রিকেটাররা। কোচ-অধিনায়ক দ্বন্দ্ব রূপ নেয় প্রকাশ্য কাদা ছোড়াছুড়িতে। সাবেক এক অধিনায়ক আদালত পর্যন্ত নিয়ে যান সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে। দলে বিভেদের চোরাস্রোত, অন্তর্কলহের সুস্পষ্ট প্রমাণ।


কিন্তু মাঠের ক্রিকেটটা দেখুন। সব ছাপিয়ে কী দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠছে তারা! পাকিস্তান ক্রিকেটে ওই সমস্যাগুলো যেমন প্রায় অনাদিকালের, তেমনি এসবের মাঝেও ব্যাট-বলে ব্যক্তিগত কারিশমার ঝলক। এবারের পার্থক্যটা হচ্ছে, ব্যক্তি ছাপিয়ে দল হয়ে উঠছে তারা। ২০১১ সালে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স সে কথাই বলে। বাংলাদেশের জন্য তাই এবারের চ্যালেঞ্জটি দুরূহের চেয়েও বেশি কিছু। অধারাবাহিক পাকিস্তান যে ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে।
এ বছর খেলা ৮ টেস্টের মধ্যে পাকিস্তান জিতেছে চারটি, তিন ড্রর পাশাপাশি হেরেছে মাত্র একটিতে। যে চারটি সিরিজ খেলেছে, তার মধ্যে ড্র করেছে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে। জিতেছে নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২৯ ওয়ানডের মধ্যে জিতেছে তারা ২১টিতে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কা_এই পাঁচ দলের বিপক্ষে খেলা সব দ্বিপক্ষীয় সিরিজেই জয় তাদের। চারটি টোয়েন্টি টোয়েন্টির মধ্যে জয় তিনটিতে। পাকিস্তান ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিকতা! বিস্ময়কর বললেও তো কম বলা হয়!
পাকিস্তানের কোচ মহসিন খান তার পরও সমীহ করছেন বাংলাদেশকে। সিরিজ শুরুর আগের সংবাদ সম্মেলনে মনে করিয়ে দিয়েছেন তা, 'পাকিস্তান টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে খুব ভালো করেছে। এই ফরম্যাটে আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আমরা ভীষণভাবে সমীহ করি। তাদের খেলোয়াড়দের প্রতিভা ও সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আর দলকে আমি সব সময়ই বলি, কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটেই কোনো দলকে কখনোই হালকাভাবে নিও না। বাংলাদেশকেও আমাদের হালকাভাবে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।' তবে আজ কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে যে তারা ফেভারিট, সেটি মানছেন তিনি, 'হয়তো আমরা ফেভারিট হিসেবে শুরু করব। তবে টোয়েন্টি টোয়েন্টি কিন্তু মজার এক ফরম্যাট। এক-দুই ওভারেই ম্যাচের রং পাল্টে যেতে পারে। আমরা তাই ম্যাচ নিয়ে খুব সিরিয়াস। আশা করি, জমজমাট এক খেলাই হবে।'
শুধু বলার জন্যই কি বললেন মহসিন খান? বারবার যেভাবে বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন, তাতে তা মনে করাটা কঠিনই, 'ক্রিকেটে প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি ম্যাচই নতুন ম্যাচ। অতীতে যা হয়েছে, সেটি ইতিহাস। আমাদের তাকাতে হবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে। আমরা মনে করছি, শক্ত এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই আমাদের কাল (আজ) লড়তে হবে। সেখানে আমরা সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে খেলব। আর সত্যি করেই বলছি, বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা যে জিতবই, সেটি ধরে নিয়ে মাঠে নামব না।'
কিন্তু অধারাবাহিক পাকিস্তানের এমন সাফল্যের রহস্য কী? মাইক্রোফোনের পেছনে বসে সহাস্যে এর খানিকটা খোলসা করেছেন কোচ মহসিন খান, 'পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আমাকে এখন কোচের দায়িত্ব দিয়েছে। তার আগে থেকেই আমি নির্বাচক কমিটির প্রধান। আমাদের নির্বাচক কমিটি সব ক্রিকেটারকেই এ বার্তা দিয়েছি যে জাতীয় দলে কারো জায়গাই নিশ্চিত নয়। নবাগত হও কিংবা অভিজ্ঞ, পারফরম্যান্স দিয়েই টিকে থাকতে হবে। এ কারণেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে উমর আকমলকে বাদ দিয়েছিলাম। তাতে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছি, দলে থাকতে হলে সামর্থ্যের শতভাগ ঢেলে দিয়ে পারফরম করতে হবে, কারণ পুরো জাতি তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।'
ঘরের মাঠ ছেড়ে পরবাসী বনে যাওয়া_ বদলে যাওয়া এ পাকিস্তানের বিপক্ষেই আজ থেকে লড়াইয়ে নামতে হবে মুশফিকুর রহিমের দলকে।

No comments

Powered by Blogger.