চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা একাদশ

চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্রিকেটের এবারের আসরটা ব্যাটে-বলে মাতিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্য থেকেই সেরা একাদশ বেছে নিয়েছে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো। কালের কণ্ঠ পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো...
ডেভিড ওয়ার্নার (৩২৮ রান)শুরুতে কিছুটা দেখে খেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। বোলারের ওপর চড়াও হন উইকেটে থিতু হয়ে গেলে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। প্রথম তিন ম্যাচের স্কোর ছিল ২০, ৩৮ ও ১২। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিপক্ষে ৩৮ রান করতে খেলেন আবার ৩৬ বল। তবে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠেন চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচটিতে।


৬৯ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ৮ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১৩৫ রানে। তারপর বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে সেমিফাইনালে আবার ৬৮ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কায় ১২৩ রানে অপরাজিত থেকে গড়েন নতুন ইতিহাস। টোয়েন্টি টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন টানা দুটি। পুরো টুর্নামেন্টে ১৭২.৬৩ স্ট্রাইক রেটে ৩২৮ রান করে গোল্ডেন ব্যাটও জিতেছেন এই অস্ট্রেলিয়ান।

ক্রিস গেইল (২৫৭ রান)
গত আইপিএলের মাঝপথে যোগ দিয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হয়েছিলেন গেইল। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে ২৫৭ করে হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুটো ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সমারসেটের বিপক্ষে জিততেই হতো বেঙ্গালুরুকে। সেই ম্যাচে ৪৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৮ ছক্কায় ৮৬ করে ম্যাচসেরা হন এই ক্যারিবীয়। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও ৪১ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৮ ছক্কায় ৯২ করে বেঙ্গালুরুকে জিতিয়েছেন ২০৩ রান তাড়া করে। ফাইনালে হাসেনি তাঁর ব্যাট, তাই বেঙ্গালুরুও পারেনি শেষ হাসি হাসতে।

ক্রেগ কিসওয়েটার (১৪৪ রান)
উইকেটের পেছনে তিনি স্বচ্ছন্দ। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন উইকেটের সামনেও। সমারসেটের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ২৩টি ওয়ানডে আর ১৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দুটি ফিফটি করেছেন ওয়ারিয়র্স (৫৬*) আর সেমিফাইনালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের (৬২) বিপক্ষে। বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাট উইকেটে যেমন ছুটিয়েছেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি তেমনি চেন্নাইয়ের ধীরগতির টার্নিং উইকেটেও রান নিয়েছেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে।

বিরাট কোহলি (২৩২ রান)
'আমি গেইলের মতো এক ওভারে ২৫ রান নিতে পারব না, তবে দরকারের সময় রানের গতিটা বাড়াতে পারব ঠিকই'_সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় ৭০ করার পর এ কথা বলেছিলেন বিরাট কোহলি। তাঁর ওই ইনিংসের সুবাদেই বেঙ্গালুরু ম্যাচটা জিতে যায় ২১৪ তাড়া করে আর ম্যাচসেরা হন কোহলি। সেমিফাইনালেও ৪৯ বলে অপরাজিত ৮৪ করে ম্যাচসেরা তিনিই।

ক্যালাম ফার্গুসন (১৪৭ রান)
বিরাট কোহলির মতো নিউ সাউথ ওয়েলসের এই ব্যাটসম্যানও রানের গতি বাড়াতে পারেন স্লগ না করে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৪০ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় করেছিলেন অপরাজিত ৭০। ৪৩ বলে আবার ঠিক ৭০ রানই করেন বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে। কিন্তু ড্যানিয়েল হ্যারিসের সেঞ্চুরি আর কোহলি-দিলশান ঝড়ে চলে যান আড়ালে।

রোয়েলফ ফন ডার মারউই (১৩৯ রান)
মূলত স্পিনার। তবে ব্যাটিংটাও খারাপ করেন না সমারসেটের দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্রিকেটার। কিসওয়েটার না থাকায় ওপেন করতে নেমে নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৪০ বলে ৭৩ করে প্রথম ম্যাচেই জয় এনে দিয়েছিলেন সমারসেটকে। কিসওয়েটার দলে ফেরার পর তাই ওয়ান ডাউনে রাখা হয় তাঁকে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৩৬ রানে, ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে ২৫ রানে আর সেমিফাইনালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ৩২ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট।

কেভন কুপার (৩ উইকেট ও ৬৫ রান)
ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ২২ বছর বয়সী এই মিডিয়াম পেসার বাছাই পর্বে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ব্যাটিংয়ের অবশ্য সুযোগ পাননি। তবে লোয়ার অর্ডারে ঝড় তোলার সামর্থ্যটা ভালোই বুঝিয়েছেন কেপ কোবরাজ আর চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে। কেপ কোবরাজের ১৩৭ রানের জবাবে ১৭ ওভারে ১০৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ত্রিনিদাদ। কিন্তু কুপারের ১১ বলে ১ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ২৫ রানের সহায়তায় ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ত্রিনিদাদই জেতে ২ বল বাকি থাকতে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষেও ১৭ বলে ১ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ২৮ করে জয় এনে দিয়েছিলেন দলকে। এ ছাড়া বল হাতেও ৩ উইকেট নিয়েছেন কুপার।

হরভজন সিং (৭ উইকেট)
বাদ পড়েছিলেন জাতীয় দল থেকে। তারপর আবার শচীন টেন্ডুলকারের অনুপস্থিতিতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। সেরা খেলোয়াড়দের না পেয়েও সেই চাপ সামলে মুম্বাইকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে ৬.২৭ ইকোনমি রেটে ৭ উইকেট নেওয়া হরভজন সিংয়ের। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাট হাতে করেছিলেন অপরাজিত ১৯। আর ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিপক্ষে ২২ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর জ্বলে উঠেছিলেন ফাইনালেও। গেইল, কোহলিকে ফেরানোর পাশাপাশি ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের ম্যাচসেরা তিনিই।

লাসিথ মালিঙ্গা (১০ উইকেট, ৬৮ রান)
আইপিএলের সর্বশেষ আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট ছিল লাসিথ মালিঙ্গার। চ্যাম্পিয়নস লিগেরও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ১১.৭০ গড় আর ৫.৮৫ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১০ উইকেট। এবার অবশ্য ম্যাজিক দেখিয়েছেন ব্যাট হাতেও। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ১৮ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৩৭ করে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছিলেন মুম্বাইকে। ত্রিনিদাদের বিপক্ষেও ৮ বলে ১৫ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ম্যাচ জেতানোয়। ফাইনালে করেন আবার ১১ বলে ২ ছক্কায় ১৬। ১০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১৮৩.৭৮ স্ট্রাইক রেটে ৬৮ রান করায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা খেলোয়াড় এই শ্রীলঙ্কান।

রবি রামপাল (৬ উইকেট)
বাছাই পর্বের দুই ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোকে মূল মঞ্চের টিকিট পাইয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন রবি রামপাল। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসার সফল মূল আসরেও। উইকেট পেয়েছেন ৪ ম্যাচের সব কটিতেই। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে লো স্কোরিং ম্যাচটিতে ১৭ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। দল হারলেও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তিনিই। পরের তিন ম্যাচেও পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।

সুনীল নারায়ণ (৮ উইকেট)
৪ ম্যাচে ১০.৫০ গড় আর মাত্র ৪.৩৭ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ উইকেট। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর এই অফস্পিনার চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এ ছাড়া বেঙ্গালুরুর বিপক্ষেও ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। চ্যাম্পিয়নস লিগের এমন পারফরম্যান্সে ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ স্বপ্ন দেখতেই পারেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার।

No comments

Powered by Blogger.