মিসরে খ্রিষ্টান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহত ২৪

মিসরের রাজধানী কায়রোতে গত রোববার খ্রিষ্টান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং ২১২ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী এশাম শরাফ সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত অসংখ্য ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে মিসরের আসওয়ান প্রদেশে একটি গির্জায় হামলা হয়। ওই হামলার জন্য খ্রিষ্টানরা কট্টরপন্থী মুসলমানদের দায়ী করে আসছে। হামলার প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছিল খ্রিষ্টানসম্প্রদায়ের লোকজন। বিক্ষোভকারীরা আসওয়ান প্রদেশের গভর্নরকে অপসারণ এবং সামরিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ তানতাবির পদত্যাগ দাবি করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের ওপর নির্যাতন করছে। গত রোববার বিক্ষোভের একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের তুমুল সংঘর্ষ চলছে। বিক্ষোভকারীরা সেখানে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সহিংসতা প্রথমে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের বাইরে শুরু হলেও পরে তাহরির স্কয়ারসহ কায়রোর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গণ-আন্দোলনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতনের পর মিসরে এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষ।
মিসরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষে ২৪ জন নিহত ও ২১২ জন আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন সেনাসদস্য। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসাম শিহা জানান, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০৭ জন বেসামরিক নাগরিক। আর বাকিরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
অন্যদিকে দাউদ নামের একজন খ্রিষ্টান পুরোহিত বলেন, অন্তত পাঁচজন বিক্ষোভকারী সেনাবাহিনীর একটি দ্রুতগামী গাড়িচাপায় মারা যান। অন্যরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কায়রোর কিছু এলাকায় স্থানীয় সময় রাত দুইটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সরকারি বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী এশাম শরাফ। তিনি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা একধরনের আগুন। যেটা জ্বলতে শুরু করলে সবাইকে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়।
সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শরাফ বলেন, মোবারকপবরর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ এ সংঘর্ষের পর মিসরের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে। এ ঘটনা দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তিতে একটি আধুনিক দেশ গঠনের যে প্রচেষ্টা সামনের দিকে এগোচ্ছিল, তা বাধাগ্রস্ত করবে।
মোবারকের পতনের পর দেশটির সামরিক কাউন্সিল এশাম শরাফকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। আগামী ২৮ নভেম্বর দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সামরিক কাউন্সিল।
অন্যদিকে মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মনা বলেছে, খ্রিষ্টান, মুসলিম এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর বিশৃঙ্খলার ইন্ধনদাতা অসংখ্য ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তবে আটক ব্যক্তিরা খ্রিষ্টান না মুসলিম সম্প্রদায়ের, তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি।
এর আগে গত মে মাসে মিসরের একটি গির্জায় হামলায় ১২ জন নিহত হয়। আর গত মার্চে খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হয় ১৩ জন।

No comments

Powered by Blogger.