মিসরে সংঘর্ষ : দ্রুত তদন্তের নির্দেশ : তানতাবির পদত্যাগ দাবি করলেন ক্ষুব্ধ খ্রিস্টানরা

মিসরের রাজধানী কায়রোয় সেনা, পুলিশ ও খ্রিস্টানদের সংঘর্ষের ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সামরিক সেনা শাসকরা। কায়রোর মাসেপেরো এলাকায় রোববারের ওই সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়। ক্ষমতাসীন সেনা পরিষদ সরকার জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়ে এ নির্দেশ দেয়। সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল দ্রুত তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে আসল ঘটনা খুঁজে বের করতে সরকারের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে। টেলিভিশনে এ সংক্রান্ত এক বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়। এদিকে নেতারা সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।


বিবৃতিতে বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ ঘটনার জন্য যারা দায়ী বলে প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে নিহত ১৭ কপটিক খ্রিস্টানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজার হাজার খ্রিস্টান নাগরিক অংশ নেয়। সোমবার সংঘর্ষে নিহত ১৭ বিক্ষোভকারীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কায়রোর এক কপটিক গির্জায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল মিছিল সহকারে কপটিক হাসপাতাল থেকে নিহতদের লাশের কফিন নিয়ে আসা হায়। টেলিভিশনে তা সরাসরি দেখানো হয়।
মিসরে ২৬ খ্রিস্টান বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মিসরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়। তারা ক্ষমতাসীন সেনা পরিষদের প্রধান ফিল্ড মার্শাল মোহামেদ হুসেন তানতাবির পদত্যাগ দাবি করেছে। মিসরের রাজধানী কায়রোতে রোববার সেনা-পুলিশের সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হয়। একটি চার্চে হামলার প্রতিবাদে খ্রিস্টান ধমার্বলম্বীরা বিক্ষোভ করার সময় সেনা-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ওই নিহতের ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের সামনের ওই বিক্ষোভে সেনা-পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে ঢুকে পড়লে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। এ ঘটনায় মিসরীয় নাগরিকদের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণে সেনাবাহিনীর সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
কয়েক বছর ধরেই মিসরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ও সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মোবারকের পতনের পর কট্টর মুসলিম বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। তবে রোববারের সহিংসতার জন্য বিরোধী সব রাজনৈতিক দল একযোগে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বিক্ষোভে দমনে সেনাবাহিনীর হঠকারী আচরণের সমালোচনা এবং বেসামরিক প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়সীমা নির্ধারণ না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সোমবার রাতে কায়রোর প্রধান চার্চ থেকে কয়েক হাজার খ্রিস্টান বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে শহরের খ্রিস্টান হাসপাতালের দিকে এগিয়ে যায়। রোববারের ঘটনায় আহতদের এখানেই চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। এ সময় তারা ধর্মীয় ঐক্য ও সেনাপরিষদ প্রধান তানতাবির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেয়। মিছিলকারী অনেকে অভিযোগ করেন, মুসলিম ব্রাদারহুড বা সালাফিপন্থী কোনো কট্টর মুসলিম সংগঠন বিক্ষোভ করার সময় সেনাবাহিনী বিপরীত আচরণ করে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিসর আর তাদের দেশ নয় বলে অভিযোগ করে। ‘মিসরে শান্তি ফিরিয়ে আনার’ উদ্দেশে চার্চের পুরোহিতরা তিনদিন উপোষ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.