ইউলিয়া তিমোশেংকোর সাত বছরের জেল

উক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া তিমোশেংকোকে (৫০) সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাসচুক্তি স্বাক্ষর করায় গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে এ শাস্তি দেন আদালত। তবে তিমোশেংকোর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তিনি ইউক্রেনের গণতন্ত্রের জন্য লড়ে যাবেন।রায় ঘোষণার সময় আদালতের বাইরে তিমোশেংকোর বিপুলসংখ্যক সমর্থকের পাশাপাশি সরকার পক্ষেরও অনেক সমর্থক ছিলেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বড় কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।


ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তিমোশেংকোর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারাও এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছে। এ রায়ের কারণে ইউক্রেনের ইইউতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন বড় ধরনের হোঁচট খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজধানী কিয়েভের আদালতের বিচারক রোদিয়ন কিরেইয়েভ রায়ে বলেন, 'অপরাধমূলক তৎপরতায় নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন তিমোশেংকো। তিনি স্পষ্ট ও সচেতনভাবে তাঁর অধিকার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, যার জন্য দেশকে চড়া মূল্য দিতে হবে।' রাশিয়ার সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি এ চুক্তির কারণে ইউক্রেনের ১৯ কোটি ডলার ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান। বিচারক রায় পড়ে শোনানোর সময় তিমোশেংকোর সঙ্গে তাঁর স্বামী আলেঙ্ান্দার ও মেয়ে ইভজেনিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ মামলা চলাকালে গত আগস্টে আদালত অবমাননার অভিযোগে তিমোশেংকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিমোশেংকো শুরু থেকেই এ মামলাকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের একটি সাজানো নাটক বলে অভিযোগ করে আসছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই সরকার এ নাটক সাজিয়েছে।
বিচারক কিরেইয়েভ গতকাল কয়েক ঘণ্টা ধরে রায় পড়ে শোনান। প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর বিরতি নেন তিনি। এ সময় আদালক কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিমোশেংকো। আদালত কক্ষে শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
তিমোশেংকো সাংবাদিকদের বলেন, 'এ মামলা বানোয়াট, রায়ও বানোয়াট। এ প্রক্রিয়া ও রায়_সবই প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের নির্দেশে হচ্ছে। এর থেকেই কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিরেইয়েভ (বিচারক) যা বলছেন, তার একটি শব্দও সত্য নয়। আমি নিশ্চিত এর সবই প্রত্যাখ্যাত হবে। তবে ইউক্রেনের আদালতে নয়।' রায়ের আগে তিনি বলেন, 'আপনারা ভালো করেই জানেন রায় বিচারক নন, প্রেসিডেন্ট দেবেন। তবে সাজা যাই হোক, আমার লড়াই অব্যাহত থাকবে। ইয়ানুকোভিচের লেখা এ রায় আমার জীবন বা আমার লড়াইয়ের কিছুই পাল্টাতে পারবে না। কেউ আমার নাম কলঙ্কিত করতে পারবে না।'
রায়ের পর পরই ইইউ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করে তিমোশেংকোর জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানায়। ইইউর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন এক বিবৃতিতে বলেন, এ মামলা ইইউ-ইউক্রেনের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল বিল্ট বলেন, 'আমাদের ইউরোপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার জন্য কোনো জায়গা নেই।' সূত্র : এএফপি, বিবিসি, এপি।

No comments

Powered by Blogger.