জনগণের ধাক্কায় পড়ে যাবেন by মোশাররফ বাবলু,

লাপ-আলোচনার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, 'আপনারা সব কিছুতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর বেশি দেরি করবেন না। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নইলে জনগণের ধাক্কায় পড়ে যাবেন।'সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চারদলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বর্তমান সরকারের তিন বছরের শাসনামলের ব্যর্থতা তুলে ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'এ সরকারকে জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।


তারা দেশকে গোপন চুক্তির মাধ্যমে পঙ্গু রাজ্যে পরিণত করতে চায়। তাই দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমি এই বয়সে আন্দোলনে নেমেছি। হজরত শাহ জালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করে এখান থেকে আমরা কর্মসূচির যাত্রা শুরু করেছি। দেশ রক্ষার যুদ্ধে আমরা কামিয়াব হব। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত এবং তা বেশি দূরে নয়। জালেম সরকারকে হটিয়ে আমরা ঘরে ফিরব।'
ঢাকা থেকে রোডমার্চ করে সোমবার রাতে খালেদা জিয়া সিলেট পেঁৗছান।
গতকাল জনসভায় আসার আগে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরানের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। বর্তমান সরকারের আমলে সিলেটে চারদলের প্রথম জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারা ক্ষমতায় আসবে। সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বাদ দিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সরকার আরেকবার চুরির পথ বের করার ষড়যন্ত্র করছে। চামচা ইলেকশন কমিশন বলছে, ইভিএম দিয়ে ইলেকশন করাবে। কিন্তু ইভিএম দিয়ে নির্বাচন হবে না। এটা বাদ দিতে হবে। কারণ ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়া যায়।'
সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'দেশে গণতন্ত্রের পথ বজায় রাখতে চাইলে এখনো সময় আছে, আলোচনা করে পথ বের করুন।' মহাজোট সরকার হটানোর আন্দোলনে 'বিজয় সুনিশ্চিত' মন্তব্য করে তিনি দেশবাসীকে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বলেন, 'বর্তমান জালেম, অত্যাচারী সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।'
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। বক্তব্য দেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকীব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জমিয়তে উলামা ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, জামায়াতের সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ প্রমুখ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ জ্যেষ্ঠ নেতারা জনসভায় বক্তব্য দেন। বৃহত্তর সিলেটের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা রাব্বানী, শফি আহমেদ চৌধুরী, দিলদার হোসেন সেলিম, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, কলিম উদ্দিন মিলন, মহানগর সভাপতি এম এ হক, সহসভাপতি নাসিম হোসেইন, বদরুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট নোমান মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক তারেক আহমেদ চৌধুরী, আজমল বকত সাদেক, জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার, সহসভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট নূরুল হক, মাহবুবুর রহমান ফয়সল, সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, শাম্মী আখতার, জামায়াতের ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন বিএনপির সিলেট মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমেদ ও মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
খালেদা জিয়া বলেন, 'গতকালের রোডমার্চ ও জনসভা দেখে এ সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তিন বছরে তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। অনেক ব্যবসায়ী দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে। ঘরেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। স্বাধীনতার পরেও তারা একই কাজ করেছে। রক্ষী বাহিনী, লাল বাহিনী গঠন করে চলি্লশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে।'
বিচার বিভাগ দলীয়করণের অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। মানবতাবিরোধীদের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদা জিয়া বলেন, 'ট্রাইব্যুনালে সম্পূর্ণ দলীয় লোকদের বসানো হয়েছে।' সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বিচার করতে চাইলে আগে নিজের ঘর থেকে শুরু করুন। মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ধরেছেন। এরা যদি মানবতাবিরোধীদের মধ্যে পড়েন, তাহলে নিজের ঘরের মানুষদের প্রথমে ধরা উচিত ছিল। নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী হলে তাদের সঙ্গে নিয়ে বিগত সময়ে আন্দোলন করেছিলেন কেন? ১৯৮৬ সালে এরশাদের সঙ্গে যখন নির্বাচন করেছিলেন তখন তো নিজামীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিলেন।' তিনি নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অন্য নেতাদের মুক্তি দাবি করে বলেন, 'তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে। তাঁরা কোনো অন্যায় করেননি। এভাবে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় গ্রহণযোগ্য নয়।'
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ। বিদেশ থেকে অনেক সাহায্য এসেছে। মানুষ না খেয়ে মারা যাবে কেন? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকার কাউকে লিখতে দেয় না। সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা চার বেলা খেতে পারলেও সাধারণ মানুষ কোনো রকমে দুই বেলা খেয়ে জীবন বাঁচাচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'এ সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল ক্ষমতায় যেতে পারলে কেজিপ্রতি ১০ টাকা দরে চাল খাওয়াব। কিন্তু চালের কেজি এখন ৫০ টাকা।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'সারা দেশে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, নারী নির্যাতন চলছে। সরকারি দলের লোকজন মন্দিরের জায়গা দখল করছে। হিন্দু ভাইদের বলব, আপনারা আওয়ামী লীগের মতো বেইমানদের ছেড়ে চলে আসেন, অনেক ভালো থাকবেন। সাতক্ষীরায় পূজামণ্ডপে নারীদের ওপর হামলা হয়েছে। এটা কেন হলো?' প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, '২০১০ সালে ভারতে গিয়েছিলেন। গোপন চুক্তি করেছেন। সংবিধানে ছিল বিদেশের সঙ্গে চুক্তি করলে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। কী চুক্তি করেছেন, তা প্রকাশ করুন। তবে সরকার যত চুক্তিই করুক না কেন, দেশবিরোধী কিছু হলে দেশের মানুষ তা বাস্তবায়ন করতে দেবে না।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য সরকারকে সরাসরি অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, 'তাদের দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থ ছাড় বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ এ সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু হচ্ছে না।' দুর্নীতির আরো ফিরিস্তি দিয়ে তিনি বলেন, বিনা টেন্ডারে ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে এ সরকার দায়মুক্তি আইন করেছে। ওএমএসের চাল ও কাবিখার অর্থ লুণ্ঠন করছে ক্ষমতাসীনরা।
খালেদা জিয়া বলেন, 'সরকারি দলের একজন নেতা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি অসাংবিধানিক সরকার। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার তো কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। তারা অবৈধভাবে সরকার গঠন করেছিলেন। আর ওই সরকারকে সমর্থন করেছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ছিল ওই সরকার। এজন্যই আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন তাঁরা। বিদেশি পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে বিদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা এনে সরকার ক্ষমতায় বসেছে।'
সীমান্ত এখন অরক্ষিত অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, 'সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল-মাদক আসে আর আমাদের ভালো ভালো জিনিস চলে যায়। সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রতিনিয়ত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। লাশ কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়। অথচ সরকার প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তারা প্রতিবাদ করলে আমরা সমর্থন করতাম। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারা সাহস পায়নি।'
ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এ বাঁধ হলে পুরো সিলেট অঞ্চল শুকিয়ে যাবে। পরিবেশ ও জনসাধারণের ক্ষতি হবে। আমি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই বাঁধ নির্মাণ না করার জন্য বলেছি। কিন্তু আমাদের সরকার এতই নতজানু যে টিপাইমুখ নিয়ে তারা কিছু বলছে না।' তিনি গঙ্গার পানি চুক্তিকে 'নামকাওয়াস্তে চুক্তি' অভিহিত করে বলেন, 'ওই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ কখনো পানি পায়নি। এখন তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিরও কোনো খবর নেই।' সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিনা শুল্কে ভারতের পণ্য বাংলাদেশের ভেরত দিয়ে যাচ্ছে। এটা চলতে পারে না। জনগণ তাদের মতামত ছাড়া এভাবে ট্রানজিট মেনে নেবে না।' খালেদা জিয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, সিলেটে বিএনপির সময়ে সব উন্নয়ন হয়েছে। এতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন সাইফুর রহমান।
দেড় হাজার স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের আহ্বান অলির : বর্তমান সরকারকে হটাতে এক সঙ্গে দেশের দেড় হাজার স্থানে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে বক্তৃতা করার সময় তিনি বলেন, 'একই সঙ্গে দেড় হাজার স্থানে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিন। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।'
এলডিপি সভাপতি অলি এই প্রথম চারদলের জনসভায় যোগ দিলেন। ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে এলডিপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনসভায় অলি বলেন, 'বর্তমান সরকারকে হটাতে না পারলে বাংলাদেশ অঙ্গরাজ্যে পরিণত হবে।'
জনসভায় বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতে সরকার ২২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আমার দাবি_বর্তমান সরকার আমলে রাজনীতিবিদদের যেভাবে হয়রানি ও জামায়াত নেতাদের যেভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে, আপনি ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের ডিজিটাল মন্ত্রীদেরও সেভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর ব্যবস্থা করবেন।'
মিছিলের নগরী : খালেদা জিয়ার জনসভা উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই সিলেট মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। রিকাবিবাজার ভিআইপি সড়ক, চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার রোড, দরগা গেট সড়ক, আম্বরখানাসহ দরগার আশপাশের এলাকার সড়কে মানুষের ঢল নামে। দুপুর সাড়ে ৩টার মধ্যে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আশপাশের ভবন ও গাছের ওপরও লোকজনের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। খালেদা জিয়া জনসভাস্থলে আসার আসার পরও বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিলের স্রোত আসছিল।
সিলেট মহানগর ছাড়াও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে বিএনপিসহ চারদলের নেতা-কর্মীরা বাস-ট্রাকে করে জনসভায় যোগ দেয়। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রোডমার্চে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীরা জনসভায় যোগ দেয়। মিছিলের কারণে দুপুর আড়াইটার পর শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জনসভাস্থল মাদ্রাসা মাঠের চারপাশে রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন এবং জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি টাঙানো হয়। জনসভায় ছিল জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, তাসনীম আলম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার। সিলেট জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি সংবলিত ব্যানারও দেখা গেছে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয় বিশাল মঞ্চ। মূল মঞ্চে চারদলের শীর্ষ নেতা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সহসভাপতি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ সমমনা দলের নেতারা বসেন। মঞ্চের নিচে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চারদলের নেতা ও সাংবাদিকদের জন্য আসন নির্ধারিত ছিল।
পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সোমবার থেকে জনসভাস্থল নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসে। জনসভা মঞ্চের চারপাশে বসানো হয় আটটি সিসি টিভি ক্যামেরা। পুলিশের পাশাপাশি বিএনপিও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিরাপত্তার তদারক করে।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর সিলেটে খালেদা জিয়ার এটিই প্রথম জনসভা। বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়া সিলেট সার্কিট হাউসে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। পরে তিনি সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

No comments

Powered by Blogger.