পাঠকের মাথায় শাহবাগ আন্দোলন, ভিড় বেশি ১৩১ নতুন বই- অমর একুশে গ্রন্থমেলা by মোরসালিন মিজান

মোটামুটি একই চিত্র। মেলার গেট খুলে দেয়ার পর থেকেই উপচেপড়া ভিড়। শুক্রবার শনিবার নেই, দল বেঁধে আসছেন পাঠক। পছন্দের বই খুঁজে নিচ্ছেন। স্টলের কর্মীরাও পাঠকের হাতে বই তুলে দিতে যারপরনাই ব্যস্ত।
তবে মেলায় লোক সমাগমের তুলনায় বিক্রি কম বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। এ প্রসঙ্গে ঐতিহ্যের স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ইতোমধ্যে প্রচুর বই এনেছি আমরা। মেলায় আগতদের সংখ্যাও অনেক। তবে বিক্রি সেই তুলনায় কম। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে শাহবাগের আন্দোলনটাই মানুষের মনোযোগ বেশি কাড়ছে। বই নিয়ে ভাবনাটা প্রকাশিত হবে আরও কিছুদিন পর। সেজন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানান তিনি। ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, বই বিক্রি মন্দ হচ্ছে বলা যাবে না। তবে লোক যে পরিমাণ সে পরিমাণে হলে আরও ভাল লাগত। শাহবাগ আন্দোলন একটি পরিণতি পেলে বই বিক্রি বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় রবিবারও শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন করেছে পাঠক সমাজ। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি তুলেছেন তারা। এ ইস্যুতে মেলার সবকটি প্ল্যাটফর্ম থেকে কথা বলতে দেখা গেছে সচেতন অংশটিকে।
নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিনে মেলায় এসেছে প্রচুর পরিমাণে নতুন বই। শুধু বাংলা একাডেমীতে জমা পড়া বইয়ের সংখ্যা ছিল ১১৩টি। এগুলোর মধ্যে গল্প ২০টি, উপন্যাস ১৯টি, প্রবন্ধ ৪টি, কবিতা ৩২টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ৩টি, জীবনী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ১, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ৪টি, চি:/স্বাস্থ্য-২, রম্য/ধাঁধা ৩টি, সায়েন্স ফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য বিষয়ে লেখা ১৫টি বই। একই দিন মেলার নজরুল মঞ্চে ১০টি নতুন বইয়ের মোড়ক করা উন্মোচন হয়েছে।
মেলামঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস : অনন্য লেখকের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং কথাশিল্পী আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি গবেষক, কথাশিল্পী ড. ফজলুল আলম।
প্রাবন্ধিক বলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ব্যক্তিগত তার বৃত্ত ভেদ করে ক্রমশ স্পর্শ করেছেন বৃহত্তর বাঙালী জীবনের ক্যানভাস। বাংলা কথাসাহিত্যের আবহমান ঐতিহ্যকে ধারণ করে তিনি জন্ম দিয়েছেন নতুন কথাসাহিত্যিক ঘরানার। তিনি বলেন, ইতিহাসের স্থিরচিত্র নয় বরং ইতিহাসের ভেতরের প্রাণের স্পন্দনকে ইলিয়াস শিল্পে অন্বিত করেছেন। এভাবে তিনি হয়ে উঠেছেন আমাদের কালের দায়বদ্ধ-অনন্য কথাশিল্পীর প্রতিকৃতি। আলোচকরা বলেন, প্রথম দিককার ছোটগল্পে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ব্যক্তিবিশ্বের অনুপম রূপকার হলেও ক্রমশ তিনি বৃহৎ উপন্যাসের কাঠামোয় ধরতে চেয়েছেন বিস্মৃত সমাজবিশ্ব। বিপুল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের শিল্পসত্তাকে গঠন করেছেন। মধ্যবিত্ত জীবনের ক্ষয়, ধস, নিরন্তর সংগ্রাম এবং মুক্তির আকাক্সক্ষাকে বাঙময় করে তুলেছেন তাঁর অসামান্য কথাসাহিত্যিক কীর্তিতে। সভাপতির বক্তব্যে ফজলুল আলম বলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন জীবন-উপলব্ধির শিল্পী। বিষয় হিসেবে যেমন তিনি ছিলেন মানুষলগ্ন তেমনি রচনারীতির নিজস্বতায় উত্তর প্রজন্মের লেখকদের কাছে স্থাপন করে গেছেন বিরল দৃষ্টান্ত। ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে নতুন মূল্যায়নের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কারণ ইতিমধ্যে তাঁর শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে বিস্তার করেছেন বিপুল প্রভাব।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী নাদিরা বেগম, পাগলা বাবুল, ফকির শাহাবুদ্দিন, মোঃ নূরুল ইসলাম, আলম দেওয়ান, আজগর আলীম, আনিমা মুক্তি গোমেজ, আমজাদ দেওয়ান, সাইদুর রহমান বয়াতি এবং টুকু বাউল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), হোসেন আলী (বাঁশি), আবদুস সোবহান (ঢোল), রতন কুমার রায় (দোতারা) ও নাজমুল আলম খান (মন্দিরা)।
আজকের অনুষ্ঠান ॥ আজ সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবেদ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রাহাত খান, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং মোহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করবেন হারুন অর রশিদ। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.