বীমাকে মানবকল্যাণে কাজে লাগান ॥ প্রধানমন্ত্রী

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীমা মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শুধু মুনাফা নয় মানবকল্যাণে বীমাকে কাজে লাগান। এ সময়ে উৎপাদন ও অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বীমা কোম্পানিগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।
রবিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) আয়োজিত ‘কৃষি ও ক্ষুদ্র বীমা’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ এ্যাকচুয়ারি, এ্যাকচুয়ারি ফেয়ারের সাধারণ সম্পাদক হাম্মাম বদর, পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আসিব আরিফ, বিআইএর সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু প্রমুখ। এ ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনজিও ও বিভিন্ন চেম্বার এবং ফেডারেশনের প্রতিনিধিসহ ২২ দেশের অর্ধশতাধিক বীমা বিশেষজ্ঞ এতে অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান বীমা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন উল্লেখ করে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি গুরুত্ব দিতেও বীমা মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বীমা শিল্পের আধুনিকায়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকার নতুন বীমা আইন সংসদে পাস করেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করেছে। সেই সঙ্গে একজন এ্যাকচুয়ারিকে আইডিআরএর চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে বীমা শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আইডিআরএ গ্রাহদের জন্য নিরাপত্তা তহবিল গঠনে প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছে। যে তহবিল থেকে প্রয়োজন অনুসারে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কৃষিকে বীমার আওতায় আনা গেলে কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কর্মসংস্থান তৈরি দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু খরা, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষি উৎপাদন মাঝেমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে এ ধরনের দুর্যোগের পর কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারে না। ফলে ফসল উৎপাদন করতে কৃষককে ঋণ নিতে হয়। এভাবে কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। কৃষিকে বীমার আওতায় আনা গেলে কৃষককে ঋণের এই চক্র থেকে বের করে আনা সম্ভব। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে সরকারের ওপর চাপও কমে যাবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে বাস করে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এই দুই দেশের মানুষই মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশসহ বহু দেশের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পানির তলে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র জনগণ। তিনি বলেন, কৃষিকে বীমার আওতায় আনতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বর্তমান সরকার কাজ করতে চায়। তাই কৃষি বীমা ও ক্ষুদ্র বীমা বিষয়ে সুপারিশ করা হলে সরকারী তা বিবেচনা করবে বলেও তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বহুদিনের পুরনো ১৯৩৮ সালের আইন পরিবর্তন করে বীমা আইন-২০১০ প্রণয়ন করেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আইন প্রধান বীমা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রতিস্থাপনে প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া এই আইনের বীমা আইন-২০১০-এর যথাযথ বাস্তবায়নে বিধি-বিধান প্রণয়নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে একজন এ্যাকচুয়ারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বীমা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, উন্নত দেশের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বীমাভুক্তির হার অনেক কম।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আফ্রো-এশিয়ার অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান ব্যাপক। বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটেছে। তবে এখনও দেশের কৃষকগণ কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রকৃতির ওপরেই নির্ভরশীল হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খরা হঠাৎ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা ও সুনামিসহ প্রকৃতিসৃষ্ট মানব বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে উন্নত বিশ্বের মতো উন্নত বিশ্বের মতো উন্নত আবহাওয়া বিজ্ঞানের সহযোগিতায় কৃষিকে বীমার অধীনে আনা গেলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী মনে করেন।
বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেশীয় কাঠামোতে বীমা শিল্প নিয়ে কাজ করছি। যদিও বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলোতে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা রয়েছে। তবে এর সংখ্যা অনেক কম। দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ সেমিনারের মাধ্যমে বীমা সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল শ্রেণীর কর্মকর্তারা সরাসরি বিদেশী বীমা সম্পর্কে অভিজ্ঞ অর্জন করতে পারবে। একই সঙ্গে তাদের মতামতও দিতে পারবে। যার মাধ্যমে দেশীয় বীমা শিল্পকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বীমা খাত আন্তর্জাতিকমানে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিআইএ কাজ করছে। এই লক্ষ্য নিয়ে এবারের সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারকে কার্যকর করতে একটি সার সংক্ষেপ তৈরি করা হবে, যার পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছেও প্রেরণ করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ৪টি পৃথক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে কৃষি বিষয়ক, ক্ষুদ্র বীমা ও মাইক্রো হেলথের ওপর তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। আজ সোমবার ৬টি আলাদা সেমিনারসহ মোট ২৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। সেমিনারে বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.