মাননীয় পাকি রাষ্ট্রদূত, যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাপরাধীর পার্থক্যটা আপনি জানেন কি ? by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা যতই দ্রম্নততর হচ্ছে, ততই পাকিস্তানের শিরপীড়া বেড়ে যাচ্ছে মনে হয়। বিস্ময়ের কথা, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন হওয়ার দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নিজামী,
মুজাহিদী প্রমুখ জামায়াতী নেতাদের কণ্ঠে যেসব প্রলাপোক্তি শোনা যাচ্ছে, সেই একই প্রলাপোক্তিতে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন পাকিস্তানের কোন কোন প্রতিনিধি এবং ঢাকায় নিযুক্ত হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূতেরাও। মনে হয় এ যেন যমজ সনত্মানের কান্না।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যখন নুরেমবার্গে ফ্যাসিস্ট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, তখন স্পেনের তৎকালীন ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটর জেনারেল ফ্রাঙ্কো নানাভাবে আপত্তি তুলতে শুরম্ন করেছিলেন। তখন লন্ডনের একটি দৈনিক মনত্মব্য করেছিল, হিটলার-মুসোলিনীর মতো ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটর জেনারেল ফ্রাঙ্কোও। তারা যমজ ভাই। পার্থক্য এই যে, ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কো এই বিচার থেকে অব্যাহতি পেয়ে গেছেন। তাই হিটলার মুসোলিনীর মতো যমজ ভাইদের দুঃখে তিনি বিচলিত।
বাংলাদেশে পাকিসত্মানের স্বৈরাচারী শাসকদের যমজ ভাই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতী নেতারা। প্রায় চলিস্নশ বছর এরা নানা ছলচাতুরি করে বিচার এড়িয়ে চলেছে। এখন হাসিনা সরকার দেশব্যাপী প্রচ- জনদাবির মুখে যখন একাত্তরের ঘাতক দালাল তথা দেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন, অমনি তাদের পাকিসত্মানী যমজ ভ্রাতাদের নাড়িসন্ধিতে টান পড়েছে। এই বিচারের উদ্যোগে তারা শুধু ৰুব্ধ নয়, ক্রুদ্ধও।
তাদের এই ৰোভের প্রকাশ বাংলাদেশ সফরে আসা তাদের কোন কোন প্রতিনিধির মুখে নগ্নভাবে ঘটতে দেখা গেছে। কখনও দেখা গেছে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিসত্মানের সাবেক কূটনৈতিক ইরফান রাজার লাগামহীন বক্তব্য ও কার্যকলাপে। সম্প্রতি এই ক্রোধ প্রকাশ পেয়েছে, ঢাকায় পাকিসত্মানের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার আশরাফ কুরেশির বক্তব্যেও। এই বক্তব্যে কোন কূটনেতিক শালীনতা নেই, কোন রাখঢাক নেই। বাংলাদেশে এসে এই পাকি প্রতিনিধিরা ও দূতেরা (পাকি শব্দটি আমি মুনতাসীর মামুনের লেখা থেকে কয়েন করেছি) তাদের এখতিয়ারবহিভর্ূতভাবে যখন যা খুশি তাই বলেন এবং পার পেয়ে যান।
এটা শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে পাকি ডেপুটি হাইকমিশনার ইরফান রাজার বেলাতেও ঘটতে দেখেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রকাশ্যে অবমাননাকর উক্তি করার পরও শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রক তাকে পার্সন নন গ্রাটা (অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি) ঘোষণা করে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কারাদেশ দিতে দীর্ঘ সময় নিয়েছে। তারপর বহিষ্করাদেশ দেয়ার পরও ইরফান রাজা নানা টালবাহানা করে ঢাকায় আরও দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন এবং ইফতার পার্টি করার নামে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের দাওয়াত করে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছেন। অনুমান করা যায়, বাংলাদেশে তাঁর অনুপস্থিতিতে পাকিসত্মানের গোয়েন্দা চক্র আইএসআইয়ের নেটওয়ার্কটি কে পরিচালনা করবে এবং বিএনপি ও জামায়াত মিত্রদের কিভাবে মদদ যোগাবে তারই আলোচনা তখন করা হতো।
পাকিসত্মানের গোয়েন্দা চক্র ও জামায়াতীদের যুক্ত চক্রানত্মের এই নেটওয়ার্কটি পুনর্গঠনের কাজে বাধা দিতে তৎকালীন আওয়ামী সরকার সবলতা ও সাফল্য দেখাতে পারেনি। তার পরিণতি তাদের ভুগতে হয়েছে ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনে। তখনই ঢাকার কোন কোন বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট পাকিসত্মানের সঙ্গে সম্পর্ক রৰার ৰেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারকে নতজানু নীতি গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁরা এমন কথাও বলেছিলেন, কোন দেশে কোন বিদেশী কূটনীতিক অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত হলে তাঁর সঙ্গে সরকারবিরোধী দলও আর কোন সম্পর্ক রাখে না। কিন্তু বাংলাদেশে এর অন্যথা হতে দেখা যায়। পাকি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কে অবমাননাকর ও আপত্তিকর কথা বলে 'অবাঞ্ছিত ব্যক্তি' ঘোষিত হওয়ার পরও বিএনপি ও জামায়াতের অনেক নেতাকেই তার সঙ্গে হবনব করতে দেখা গেছে। এদের সম্পর্কেও ব্যবস্থা গ্রহণে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের গড়িমসিকে এই বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্টরা সরকারের দুর্বলতা আখ্যা দিয়েছিলেন।
ঢাকায় নবনিযুক্ত পাকিসত্মানের হাইকমিশনার আশরাফ কুরেশি সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনির সঙ্গে সৌজন্য সাৰাত শেষে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন তা শুধু তাঁর কূটনৈতিক অধিকারের সীমাবহিভর্ূত নয়, অত্যনত্ম আপত্তিজনক। বাংলাদেশে এসে পাকিসত্মানের কোন কোন সরকারী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত এখনও এমনভাবে কথাবার্তা বলেন, যেন তারা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে না এসে তাঁদের কোন কলোনিতে এসেছেন এবং তাঁরা রাষ্ট্রদূত নন, তাঁরা এ দেশটির ভাইসরয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত, এসব রাষ্ট্রদূতকে তাঁদের অবস্থান ও অধিকারের সীমা সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া। তাঁরা সতর্ক না হলে আনত্মর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী তাঁদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
২৬ ফেব্রম্নয়ারি তারিখের প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, পাকিসত্মানের হাইকমিশনার ডা. দীপুমনির সঙ্গে সৌজন্য সাৰাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত ত্রিপৰীয় চুক্তিতে। ওই চুক্তি বিষয়টির চূড়ানত্ম নিষ্পত্তি ঘটিয়েছে বলে মনে করে পাকিসত্মান। ওই চুক্তি পাকিসত্মান মেনে চলেছে।
ঢাকার জাতীয় দৈনিকগুলোর রিপোর্ট থেকেই জানা যায়, পাকিসত্মানী হাইকমিশনার শুধু সাংবাদিকদের কাছেই একথা বলেননি। তার আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাৰাতের সময়ও তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গটি তুলেছেন। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বলে আশরাফ কুরেশিকে আশ্বসত্ম করেছেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকারের বাধ্যবাধকতা আছে। কারণ, আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি ছিল ৰমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা। জনগণ ভোটের মাধ্যমে এর প্রতি রায় দিয়েছে। দীপুমনি সর্বোচ্চ আনত্মর্জাতিক মান নিশ্চিত করে সুস্থ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, এতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। (প্রথম আলো, ২৬.২.১০)।
এই রিপোর্ট দৃষ্টে মনে হয়, পাকিসত্মানী হাইকমিশনার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাৰাতের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন এবং এই ব্যাপারে তার দেশের সরকারের উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই তাঁর উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করেছেন এবং তাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যার জন্য পাকিসত্মান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ৰমা চায়নি। আটকেপড়া পাকিসত্মানীদের ফিরিয়ে নেয়া এবং বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদের হিস্যার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পাকিসত্মানের বর্তমান সরকার এসব অমীমাংসিত সমস্যার মীমাংসায় এগিয়ে আসবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিষয়টি এখানেই চুকেবুকে যায়নি। পাকিসত্মানী হাইকমিশনার সৌজন্য সাৰাত শেষে বাইরে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রানত্ম ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপৰীয় চুক্তিতেই যুদ্ধাপরাধের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তার এই অসত্য ও আপত্তিকর বক্তব্যের বিরম্নদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সারাদেশে। এই প্রতিবাদের মুখেও পাকি হাইকমিশনার তার মনত্মব্যের কোন কারিফিকেশন ও ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেননি। কেবল ঢাকার কোন কোন মিডিয়ায় বলা হয়েছে, আশরাফ কুরেশি পাকিসত্মানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে মনত্মব্য করেছেন। তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে কিছু বলেননি। এটি বাংলাদেশের অভ্যনত্মরীণ ব্যাপার বলে মনে করেন।
এই ব্যাখ্যাটি পাকিসত্মানের দূতাবাস থেকে এসেছে বলে আমি এখন পর্যনত্ম জানি না ঢাকার কোন কোন মিডিয়া খবরটি প্রকাশ করছে। তাদের খবরের সূত্র কতটা নির্ভরযোগ্য তাও বা কে বলবে? প্রশ্ন হলো_ হাইকমিশনার নিজে এই ব্যাপারে নীরব কেন? তিনি যদি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে তার মনত্মব্যটি না করে থাকেন, তাহলে সে কথাটি স্পষ্ট করে বলতে আপত্তি কোথায়?
তার বক্তব্য সম্পর্কে বাংলাদেশের জনমনে সন্দেহ গাঢ় হওয়ার একটি বড় কারণ, এই কিছুদিন আগেও পাকিসত্মানের এক সরকারী প্রতিনিধি ঢাকায় এসে বাংলাদেশ সরকারকে প্রকাশ্যেই সতর্ক করে গেছেন যে, "যুদ্ধাপরাধীদের অর্থাৎ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলেও তা বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিসত্মানের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।" এই মনত্মব্য কি বাংলাদেশের অভ্যনত্মরীণ বিষয়ে পাকিসত্মানের নির্লজ্জ এবং নগ্ন হসত্মৰেপ নয়? এই মনত্মব্যটি পাকিসত্মান আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রত্যাহার করেনি। তাহলে কিভাবে বিশ্বাস করা যাবে, পাকি রাষ্ট্রদূত ডা. দীপুমনির সঙ্গে সাৰাতের সময় কিংবা সাৰাত শেষে সাংবাদিকদের কাছে যা বলেছেন, তাতে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের কথা অনত্মভর্ুক্ত ছিল না? তার বক্তব্যের একটি স্পষ্ট কারিফিকেশন বাংলাদেশের মানুষ দাবি করতে পারে। বাংলাদেশ যদি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের (পাকিসত্মানীসহ) বিচারের ব্যবস্থাও করে তাহলে বর্তমান পাকিসত্মানের ৰুব্ধ হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে? জার্মানি ও ইতালির নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের নুরেমবার্গ বিচারে শাসত্মি দেয়ায় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার বিরম্নদ্ধে তো কোন অভিযোগ তুলেনি হিটলারপরবতর্ী গণতান্ত্রিক জার্মান সরকার বা মুসোলিনীপরবতর্ী ইতালি সরকার। তাহলে কি পাকিসত্মানের বর্তমান নির্বাচিত সরকারও অতীতের সামরিক জানত্মার গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের দায়িত্ব বহন করতে চায়?
১৯৭৪ সালে সিমলা চুক্তি নামে স্বাৰরিত ত্রিপৰীয় চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং পাকিসত্মান চুক্তিটি মেনে চলেছে_ পাকি হাইকমিশনারের এই উক্তিও সত্য নয়। তিনি যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাপরাধীদের পার্থক্যটি বোঝেন কি? হানাদার বাহিনীর যারা নিজ দেশের সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশে লড়াই করতে এসেছিল তারা সকলেই যুদ্ধাপরাধী নয়। তাদের মধ্যে যারা নিরস্ত্র ও নিরীহ জনগণের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন চালিয়েছে এ ধরনের ১৯৫ জন পাকিসত্মানী সেনা অফিসার ও সৈন্যকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সিমলা চুক্তি অনুসারে পাকিসত্মান তাদের বিচার করবে বলে অঙ্গীকার করায় তাদের পাকিসত্মান সরকারের হাতে অর্পণ করা হয়েছিল। পাকিসত্মান চুক্তির সেই শর্ত মেনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। তাহলে সেই চুক্তির অসত্মিত্ব আর থাকে কি?
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৯০ হাজার পাকিসত্মানী সৈন্য ও অফিসার বন্দী হয়েছিল। তাদের সকলকেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়নি। অধিকাংশকেই যুদ্ধবন্দী হিসেবে গণ্য করে সেই অনুযায়ী সুযোগসুবিধা দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে দু'পৰের মধ্যে বন্দী বিনিময় হয়। কোরিয়া যুদ্ধের পর পানমুনজন চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন ও চীনা যুদ্ধবন্দী (কোরিয়ান বন্দীসহ) বিনিময় হয়েছিল। উপমহাদেশে সিমলা চুক্তির পর এই ধরনের বন্দী বিনিময় কোন নতুন ঘটনা নয়। তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টির চূড়ানত্ম নিষ্পত্তি হয়ে গেছে_ এ কথা বলা সত্যের অপলাপ। যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাপরাধী কথা দুটির পার্থক্য বুঝতে পাকি হাইকমিশনার কি সত্যই অৰম? তাছাড়া সিমলা চুক্তির অসত্মিত্ব এখনও আছে কি? চুক্তিটি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে কাশ্মীরে স্থিতাবস্থায় বজায় রাখার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে পাকিসত্মান কয়েক দফা (কারগিল যুদ্ধসহ) যুদ্ধ চালায় এবং বাংলাদেশে গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধী পাকিসত্মানী সেনা ও সেনা অফিসারদের বিচার করার প্রতিশ্রম্নতি ভঙ্গ করে।
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'আমরা পাকিসত্মানী নয়, বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি।' তিনি ইচ্ছা করলে বলতে পারতেন, পাকিসত্মান তাদের দেশের যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচার না করে ত্রিপৰীয় চুক্তি ভঙ্গ করেছে, আমরা তাদেরও আমাদের বিচারের আওতায় আনব, তিনি যে এ কথা বলেননি, এটা বর্বর গণহত্যাকারীদের প্রতি বাংলাদেশের অসীম উদারতা। পাকি রাষ্ট্রদূত এই উদারতাকে সম্মান জানাতে শিখুন।
আগেই বলেছি, একাত্তরের পাকিসত্মানী গণহত্যাকারীরা এবং বাংলাদেশে তাদের সহচর জামায়াতীরা যেন যমজ ভাই। দু'য়ের কণ্ঠে এখন বিচার-ভীতি থেকে একই প্রলাপোক্তি। পাকিসত্মান বলছে, একটি চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশের জামায়াতীরা বলছে, বঙ্গবন্ধু নাকি তাদের ৰমা করে গেছেন। এটাও একটা ডাহা মিথ্যা। বঙ্গবন্ধু সাধারণ ৰমা দিয়েছিলেন সাধারণ অপরাধের জন্য। নরপিশাচ যুদ্ধাপরাধীদের তিনি ৰমা করেননি। আরেকটি কথা, জামায়াতীরা '৭১ সালে যদি যুদ্ধাপরাধ না করেই থাকে তাহলে বঙ্গবন্ধু তাদের ৰমা করেছিলেন বলে যে দাবি তারা তুলছে, সেই ৰমা তিনি করেছিলেন কিসের জন্য? জামায়াতীরা অতি চালাকি করতে গিয়ে নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই পড়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ৰমা লাভের মিথ্যা দাবি জানাতে গিয়ে তারা নিজেদের অগোচরে নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন তারা যুদ্ধাপরাধী। তাদের জঘন্য অপরাধের বিচার ও শাসত্মির ব্যবস্থা করা রাষ্ট্র ও সরকারের নৈতিক ও বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব বর্তমান সরকার এড়াতে পারে না।
লন্ডন, ২ মার্চ মঙ্গলবার ২০১০।

No comments

Powered by Blogger.