চট্টগ্রামে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যেও গায়েবানা জানাজায় হাজার হাজার মানুষ

হরতাল চলাকালে গতকাল রক্তাক্ত জনপদ চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে চার শহীদের নামাজে জানাজার আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী।
গনি বেকারি থেকে শুরু করে অলি খাঁ মোড় পর্যন্ত এবং প্যারেড ময়দানের চার দিকে অগণন বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ ও সাদা পোশাকি সশস্ত্র পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে জানাজায় শরিক হন হাজার হাজার জামায়াত ও শিবিরকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এ সময় তাকবির ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় প্যারেড ময়দান। আল্লামা সাঈদীর দীর্ঘ দিনের স্মৃতিবিজড়িত প্যারেড ময়দানে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার জামায়াত ও শিবিরকর্মীর দীপ্ত শপথ ‘সাঈদীর কিছু হতে দেবো না, প্যারেড ময়দানে আবারো তাফসির মাহফিলে সাঈদীকে হাজির করব’। শোকাহত এসব মানুষের দীর্ঘণ অপো পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় নিহত শিবির নেতা ইমরান খান ও আবিদ এবং জামায়াত কর্মী আফজাল হোসেন ও শফিকুলের কফিনের জন্য। কিন্তু বিকেল ৪টা পর্যন্ত কফিন না পেয়ে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা-পূর্ব বক্তৃতায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম এমপি বলেন, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। বৃথা যেতে পারে না। ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চার শহীদের রক্তের বদলা নেয়া হবে। জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়ে ইসলামি আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি পুলিশ প্রশাসনকে সভা-সমাবেশে বাধা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিল করতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শাহাদাত বরণ ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের জন্য গৌরবের। বাধা দিয়ে খুন করে ইসলামি আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। তিনি সবাইকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জান ও মাল দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠিত গায়েবানা  জানাজার আগে সমবেত মুসল্লি এবং জামায়াত ও শিবিরকর্মীদের উদ্দেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মুমিনুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দণি জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ জাফর সাদেক, উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্য মুহাম্মদ আমিরুজ্জামান, প্রবীণ বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী ঐক্যজোটের নগর সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী প্রমুখ।

খুনিদের বিচার দাবি চট্টগ্রাম অঞ্চল জামায়াতের

এ দিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শিবির নেতা ইমরান খান, আবিদ, জামায়াত কর্মী শফিকুর রহমান ও আফজল হোসেনকে হত্যার তীব্র নিন্দা এবং ােভ প্রকাশ করে ও অবিলম্বে হত্যার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা এবং চিহ্নিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম অঞ্চল নেতৃবৃন্দ।

গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র, শ্রমিকসহ নিরীহ জনতার ওপর গুলি চালিয়ে ইসলামি আন্দোলন দমন করা যাবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ কর্তৃক দলীয় ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় মানে না। রাজনৈতিক প্রতিপকে ধ্বংস করতে দেয়া এ রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসাচরিতার্থ করার জন্য। আওয়ামী লীগ দেশের মতা নিয়ে জনগণের সমস্যা সমাধান না করে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে দেশে অনৈক্য ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে-বিদেশে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ এ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, দুই দিন সফল হরতাল পালনের মাধ্যমে জনগণ সরকার নির্দেশিত শাস্তির রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত রায় বাতিল করে নিরপরাধ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

বিবৃতিদাতা জোনাল নেতৃবৃন্দ হলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মুমিনুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম এমপি ও নায়েবে আমির অধ্যাপক আহছানুল্লাহ, কক্সবাজার জেলা আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম দকিষণ জেলা আমির মুহাম্মদ জাফর সাদেক, উত্তর জেলা আমির অধ্য মুহাম্মদ আমিরুজ্জামান, খাগড়াছড়ি জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল মোমিন, বান্দরবান জেলা আমির মাওলানা আবদুস সালাম আজাদ, রাঙ্গামাটি জেলা আমির অধ্যাপক আবদুল আলিম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.