কেরানীগঞ্জে দেড় হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ- ছাত্রলীগ নেতা জড়িত

সরকার গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষায় শত শত বাড়ির মালিকেরা। গ্যাস পাওয়ার জন্য অফিসের কর্মকর্তাদের রাজি খুশি করতে দিচ্ছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ।
সবচেয়ে  বেশি নতুন বাড়ির মালিকেরা ধরনা দিচ্ছে। ঠিক ওই মুহূর্তে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঢাকার কেরানীগঞ্জে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন মেট্রো বিক্রয়কেন্দ্র জিনজিরা জোন-২ অফিসের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে রয়েছে শতাধিক দালালচক্র ও জিনজিরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাহবুব আহম্মেদ মামুন। এ ছাত্রলীগ নেতা গ্যাস অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শেল্টার দিয়ে ক্ষমতার দাপটে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। কেরানীগঞ্জের গ্যাস অফিসের দুই কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ দিতে চুল্লিপ্রতি ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা  নেয়া হয়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক হিসেবে টাকা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু গ্যাস কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে বসার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের গ্যাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেরানীগঞ্জে ১২টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৭০০ আবাসিক গ্রাহক, কমার্সিয়াল ৩৬০টি ও ৮০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রয়েছে। রাজধানীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০০ অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। কেরানীগঞ্জে গ্যাস অফিসে ৪৮ জন ঠিকাদার রয়েছে। এসব ঠিকাদারের মধ্যে সরকারদলীয় নেতাকর্মী বেশি। এসব ঠিকাদার বাড়ির মালিক ও কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। সেখান থেকে ঠিকাদারেরা সুবিধা আদায় করছে। কেরানীগঞ্জের ডাকপাড়া, হাসনাবাদ, কোণ্ডা, বন্দডাকপাড়া, কালিন্দি, বাকা চড়াইল, জিনজিরা, শহিদনগর, মডেল টাউন, আগানগর আমবাগিচা, পশ্চিম গোলাম বাজার, চড়াইল, শুভাঢ্যা, খেজুরবাগ এলাকায় নতুন নতুন বাড়িঘরে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ ছড়িয়ে পড়ছে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়য়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন মেট্রো বিক্রয় কেন্দ্র জোন-২ অফিসের দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে দালাল ও অসাধু ঠিকদারেরা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়া অব্যাহত রেখেছে। সরকারি আদেশ অমান্য করে ওই দুই কর্মকর্তা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন। ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব আহম্মেদ মামুন সারা দিন জিনজিরা জোন-২ অফিসে থাকেন। জিনজিরা তিতাস গ্যাস অফিস মামুন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এই নেতা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার সাথে জড়িত। অবৈধ গ্যাস সংযোগের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই ছাত্রলীগ নেতা।  এসব এলাকায় গ্যাসসঙ্কট আরো নতুন করে চরম আকার ধারণ করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কেরানীগঞ্জে কলকারখানায় ও বাড়িঘরে চরম গ্যাসসঙ্কট দেখা দেয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা মো: জাহিদ  হাসান জানান, কেরানীগঞ্জে মডেল টাউন এলাকায় নতুন বাড়ি উঠছে। তাদেরকে বেশির ভাগ অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না এই নিয়েও চলছে কোন্দল। অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যাস কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে জিনজিরা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন জানিয়েছেন, সরকার সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় লোকজন চরম বিপাকে পড়েছে। নতুনভাবে সংযোগ চালু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায় তারা। শহিদনগর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্যাস ব্যবহারকারী পুরনো গ্রাহক জানান, তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন মেট্রো বিক্রয় কেন্দ্র জিনজিরা জোন-২ অফিস এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্যাস কর্মকর্তাদের উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে বসার জন্য বলা হয়েছে। তবে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হবে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ জানান, গ্যাস কর্মকর্তাদের সাথে বুধবার বসা হবে। অবৈধ সংযোগ থাকার কথা শুনেছি। জিনজিরা জোন-২ অফিসের ব্যবস্থাপক মো: মনিরুল হক ও সেলস ম্যানেজার মো: মাহবুব হোসেন খান অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছন্ন অব্যাহত রয়েছে। তবে কেরানীগঞ্জের গ্যাস অফিসের কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়।

No comments

Powered by Blogger.