জনগণ রায় প্রত্যাখ্যান করেছেঃ জামায়াত

ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে আবদুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামী আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও আগামীকাল শুক্রবার দোয়া দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
একই সাথে আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়ের ব্যাপারে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ রাজনৈতি উদ্দেশ্যেই এ রায় দেয়া হয়েছে। তাই জনগণ হরতাল পালনের মাধ্যম এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। অবিলম্বে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আবদুল কাদের মোল্লাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পৃথক বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ হরতাল পালনের মাধ্যমে জনগণ আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি করেন।

বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসাচরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে গঠিত বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল, সরকার নির্দেশিত ছকে আবদুল কাদের মোল্লাকে শাস্তি দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও আটক জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকার জনগণের দাবি উপেক্ষা করে মঙ্গলবার আবদুল কাদের মোল্লাকে মিথ্যা মামলায় শাস্তি দিয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের নির্দেশনায় ঘোষিত রায় জনগণ প্রত্যাখ্যান করে ও জামায়াত আহূত হরতাল পালনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয়।

তিনি বলেন, জনগণের আন্দোলন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিতে সরকার রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করছে। গত দুই দিনের হরতালে পুলিশ গুলিবর্ষণ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ব্যাপক হামলা চালিয়ে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের চার শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। পুলিশের গুলিতে আহত হন ১২০ জন। চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তিন কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের গুলিতে আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে বলেছি, ৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল কাদের মোল্লার মামলায় প্রদত্ত রায়ে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রতিফলিত হয়েছে। রায়ে আবদুল কাদের মোল্লাকে রাজনৈতিকভাবে আলবদরের সদস্য হিসেবে অভিহিত করে জড়ানো হয়েছে। প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী আলবদর বাহিনী গঠিত হয় ১৯৭১ সালের মে মাসে। আর মার্চ-এপ্রিল মাসে সংঘটিত ঘটনার সাথে আবদুল কাদের মোল্লাকে জড়ানো হয়। এ থেকেই প্রমাণিত হয় কোনো ধরনের যুক্তি বা আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আবেগতাড়িত হয়েই এ রায় দেয়া হয়েছে। আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষের ছয়জন সাক্ষী আদালতে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ১৯৭১ সালে আবদুল কাদের মোল্লা ঢাকা শহরেই ছিলেন না। ছিলেন তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। অথচ তা বিবেচনায় না নিয়ে মিরপুর অঞ্চলে বিহারি সম্প্রদায়ের কৃত অপরাধ আবদুল কাদের মোল্লার ওপর চাপানো হয়েছে।

জনগণ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে : মকবুল

জামায়াতে ইসলামীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গতকাল দেশব্যাপী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করায় দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের জুলুম-নির্যাতন, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, গুলি উপো করে দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া সরকারের নির্দেশিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ রায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আমি আশা করি সরকার জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও আবদুল কাদের মোল্লাসহ আটক সব নেতাকে মুক্তি দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.