সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলার পলাতক তিন আসামি গ্রেফতার

সিপিবি সমাবেশে নৃশংস বোমা হামলা মামলার চার্জশীটভুক্ত পলাতক ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ মামলায় এক জামায়াত নেতা গ্রেফতার হয়েছে। অপরজন পলাতক।
গ্রেফতারকৃত ও পলাতক দু'জামায়াত নেতাই বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর আত্মীয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২জন একইসঙ্গে সিপিবি ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার পলাতক আসামি ছিল।
শনিবার রাত ১১টা র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের গোয়েন্দারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালায়। পরে গোপন বৈঠকরত অবস্থায় মাওলানা মোঃ ইদ্রিস আলী (৩২), মাওলানা মোঃ আব্দুল লতিফ (৩১) ও মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ওরফে দুলালকে (৩৯) গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকারও উদ্ধার হয়। পরে র্যাব সদর দফতরে গ্রেফতারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, বোমা হামলা চালানোর মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বোমাগুলো কিভাবে ঘটনাস্থলে এসেছিল সে বিষয়টি বের করার চেষ্টা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই নিয়ে এ পর্যনত্ম সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় ১৩ জন গ্রেফতার হলো। এর আগে গ্রেফতারকৃত ১০ জন কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামি হিসেবে মাওলানা ইদ্রিস আলীর ভায়রা মাওলানা মনির হোসেন পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মাওলানা ইদ্রিস আলী ও পলাতক মাওলানা মনির হোসেন উভয়ই বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় কারাবন্দী এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর আত্মীয়। সালাম পিন্টুর ছোট ভাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি মাওলানা তাইজউদ্দিন, মাওলানা ইদ্রিস আলীর খালাতো বোনের জামাই। মাওলানা ইদ্রিস আলী এ মামলার ২ নম্বর চার্জশীটভুক্ত আসামি। মাওলানা ইদ্রিস আলীর পিতার নাম আব্দুল খালেক। বাড়ি মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলা মহলস্নার ২৮/২ নম্বরে। মাওলানা মোঃ আব্দুল লতিফের পিতার নাম আবুল হোসেন। সে এ মামলার ২০ নম্বর চার্জশীটভ্থক্ত আসামি। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার নাগপাড়া গ্রামে। গ্রেফতারকৃত অপরজন সাখাওয়াত হোসেন ওরফে দুলাল এ মামলার ২২ নম্বর চার্জশীটভুক্ত আসামী। তার পিতার নাম আব্দুল খালেক আকন। বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার পূর্বভান্ডারিয়া গ্রামে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাওলানা ইদ্রিস আলী ও মাওলানা আব্দুল লতিফ ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলারও আসামি।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাওলানা ইদ্রিস আলী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিনের সঙ্গে এলিফেন্ট রোড়ে আসত্মিন নামে একটি পাঞ্জাবির দোকান চালাত। জোট সরকারের আমলেই তাইজউদ্দিন একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সহায়তায় পাকিসত্মান চলে যায় বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন সিপিবি সমাবেশে বিকাল ৫টায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ৫ জন নিহত ও অর্ধশত মানুষ আহত হন। নিহতরা হলেন, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু ম-ল, রূপসা উপজেলা সিপিবি নেতা ও খুলনা দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের সিপিবি নেতা আবুল হোসেন হাশেম, খুলনার ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায় ও মাদারীপুর জেলার মোক্তার হোসেন বাদল। এ ব্যাপারে মতিঝিল থানায় ৬০ (১) নম্বর মামলা হয়। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদনত্ম কমিটি গঠন করে। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২২ জানুয়ারি পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করে। ২০০২ সালে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়। ২০০৩ সালে সরকার গঠিত তদনত্ম কমিশন রিপোর্ট দাখিল করে। ওই সময়ই তদনত্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপত্তি ওঠে।

No comments

Powered by Blogger.