সন্ত্রাসী হরতাল!

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস পরিচয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলে ইতিহাসের এক জঘন্যতম নৃশংসতা চালিয়েছিল।
হত্যা, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণ; এমন কোন কাজ ছিল না, যা তারা করেনি। আর এসব কিছুই তারা করেছিল ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে। তারা ধর্ম ও পাকিস্তানকে এক ও অভিন্ন হিসেবে অপব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং অগণিত মানুষ হত্যা করে, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে; অনেককে হত্যা করে। বস্তুত মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা ও অমানবিকতা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়; যার ব্যাপকতা, বহুমাত্রিকতা ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিমাপ করা দুর্সাধ্য।
একাত্তরের সেই চিহ্নিত ঘাতকদের কয়েকজনের এখন বিচার চলছে। সেই বিচার বন্ধ করার দাবিতে নানা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির পাশাপাশি হরতালের মতো কর্মসূচিও দিচ্ছে। হরতালের নামে তারা যেভাবে জ্বালাওপোড়াও, যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের ওপর বোমা-গুলি নিক্ষেপ ও তাদের আহত করাসহ সন্ত্রাস-সহিংসতার বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে তাতে সমাজের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাদের ঝটিকা আক্রমণসহ সহিংস, জঙ্গী তৎপরতা বর্তমানে এমনই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, কঠোর হাতে এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে স্বাভাবিক নাগরিক জীবন বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়তে পারে। বৃহস্পতিবার হরতালের নামে যে বেপরোয়া সন্ত্রাস চালানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়, তা সেই আশঙ্কারই অশনিসংকেত বলে মনে করছে সচেতন মহল। এই ‘সন্ত্রাসী হরতালে’ পাঁচজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে বহুসংখ্যক; আটকও করা হয়েছে অনেককে।
কেন এই জঙ্গী হরতাল? কেন এই নৈরাজ্য? এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত সাদামাটা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা। জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা চায় না একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার হোক। তারা জানে, আটক ও বিচারের মুখোমুখি শীর্ষ নেতাদের অপকর্মের পরিমাণ এতই ভয়াবহ আর সুনির্দিষ্ট যে, বিচারে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি অনেকটা নিশ্চিত। এ কারণেই তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায় এবং যে কোন প্রকারে তাদের নেতাদের কারাগার থেকে বের করে আনতে চায়। কিন্তু তাদের এই পন্থা দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা কি তারা একবারও ভাবছেন? একটি বিচারাধীন বিষয়ের মোকাবেলা করতে হবে আইনী প্রক্রিয়ায়, আদালতে; রাজপথে সন্ত্রাসী পন্থায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আইনী বিষয়ের মোকাবেলা কখনই হতে পারে না। কোন গণতান্ত্রিক দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি সেই অন্যায় প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে না; সমর্থনও করতে পারে না।
সন্ত্রাস-সহিংসতাসহ যে কোন ধরনের বেআইনী তৎপরতা প্রতিরোধ করে জনজীবন নিরাপদ ও স্বস্তিময় রাখার দায়িত্ব সরকারের। সেভাবেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.