সানিয়া মির্জা কি হারিয়েই যাচ্ছেন? by নাজমুল হাসান

মাত্র ২ দিন আগেই আরও একটি ব্যর্থতা মেনে নিতে হল সানিয়াকে মির্জাকে। দুবাই ওপেনের প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিতে হলো ভারতীয় টেনিস সেনসেশনকে।
স্পেনের আনাবেল মেডিনা গ্যারিগুয়েজের কাছে হেরে গেলেন সানিয়া। ফলে এ নিয়ে এ বছর তিনটি টেনিস আসরে অংশ নিয়ে তিনটিতেই প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিতে হল গ্ল্যামার গার্ল সানিয়াকে মির্জাকে। জানুয়ারি বছরের প্রথম গ্র্যান্ড সস্ন্যাম আসর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়েন তিনি। এরপর ইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পাতায়া ওপেনেরও প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিতে হয় তাকে। আর পরশু বিদায় নিলেন দুবাই ওপেন থেকে। ফলে নতুন বছরটা এখন পর্যনত্ম সাফল্যহীনই থেকে গেল সানিয়ার। আগামীতে গয়তো সাফল্য পাবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়গুলো যেভাবে ভারতীয় তারকার বিরম্নদ্ধাচারণ করছে তাতে করে সানিয়া ভবিষ্যত সাফল্য নিয়ে কেউ যদি প্রশ্ন তোলে তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ সময়টা মোটেও ভাল কাটছে না তাঁর। একদিকে ব্যক্তিগত জীবনের অনাকঙ্ৰিত ঘটনা, অন্যদিকে নতুন বছরের অশুভ যাত্রা, এর সাথে যোগ হয়েছে আবার ইনজুরি সমস্যা। সবকিছু মিলিয়ে সানিয়ার এখন সংগ্রামমুখর দিন। এ সময়টাকে জয় করে তিনি কোর্টে কতোটা সাফল্য আদায় করতেন পারবেন সেটা প্রশ্ন হয়েই থাকছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সানিয়ার টেনিস ক্যারিয়ার শেষ এমন কথাও উচ্চারিত হচ্ছে এখন কোন রকম রাখঢাক না করেই। সানিয়াও যে এর বিরম্নদ্ধে জোর দিয়ে কিছু বলবেন সেটাও পারছেন না , 'এটা কোন বিষয় নয়, সব প্রতিকূলতা জয় করে আবার সাফল্য পাব আমি'_আত্মবিশ্বাস নিয়ে এমন কথার পরিবর্তে সানিয়া বলছেন ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়া কব্জির সেই ভয়াবহ ইনজুরিটা আবার ফিরে এসেছে'। সোমবার দুবাই ওপেনে ম্যাচ হারার পর এমন কথাই বের হয় ভারতীয় টেনিসে সুন্দরীর মুখ থেকে। সানিয়া কি হারিয়েই যাচ্ছেন? প্রশ্নের পরিধিটাও তাই আরেকটু আরকেটু বড় আকার ধারণ করে।
বিশ্বের অনেক ক্রীড়া ইভেন্টের মতোই টেনিসেও এশিয়ান এখনও অনেক পিছনের সারিতে। মহিলা টেনিসে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বোন ভেনাস এবং সেরানা উইলিয়ামস, রাশিয়ার দিনারা সাফিনা, মারিয়া শারাপোভা, এলেনা দেমিনত্মিয়েভা, সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচ, জেলেনা জাঙ্কোভিচ কিংবা বেলজিয়ামের জাস্টিন হেনিন, কিম কিস্টার্স, ইয়ানিনা উইকমেয়াররা যেভাবে বিশ্ব টেনিসকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এশিয়ান কোন তারকার পৰে এখনও তা সম্ভব হয়নি। এ হিসেবে আনত্মর্জাতিক টেনিসে সানিয়াই এক উজ্জ্বল নাম। যদিও এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মহিলা এককের সেমিফাইনাল পর্য়নত্ম কোয়ালিফাই করে নিজেদের নতুন করে চিনিয়েছেন দুই চীনা তারকা লী না এবং ঝেং জি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই আনত্মর্জাতিক টেনিসে এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী বলতে গেলে সানিয়া আর ইসরাইলের সাহার পী'রই। সানিয়া সাফল্য-অসাফল্য নিয়ে তাই এশিয়ানদের বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে একটু বাড়তি কৌতূহলই। সানিয়ার খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও তাই আলোচনার বিষয়। সানিয়া টেনিস ভবিষ্যত নিয়েও তাই আলোচনার শেষ নেই।
কোর্ট এবং কোর্টের বাইরে সত্যিই কঠিন সময় কাটছে সানিয়ার। বিভিন্ন আসরে একের পর এক ব্যর্থতায় র্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে। পরশুদিন ডবিস্নউটিএ মহিলা এককের যে র্যাংকিং প্রকাশ করেছে তাতে ১৮ ধাপ নিচে নেমে গেছেন সানিয়া। বর্তমান অবস্থান ৭৭-য়ে। ওদিকে, ব্যক্তিগত জীবনেও কঠিন এক সময় পার করতে হচ্ছে তাকে। শৈশবের বন্ধু সোহরাব মির্জাকে আজীবনসঙ্গী হিসেবেই নির্বাচন করেছিলেন। গত বছর মহাধুমধামে তাঁর সাথে আংটি বদল করে বাগদানেরক কাজটিও সেরে ফেললন দুই পরিবারের আনত্মরিক সমর্থনে। বাক িছির ছিল বিয়ের পূর্ণাঙ্গ আনুষ্ঠানিকতার বিষয়টি। কিন্তু নতুন বছরে আরও একটি বিস্ময় উপহার দিলেন ভারতীয় টেনিস গার্ল। জানিয়ে দিলেন, সোহরাবকে বিয়ে করার সম্ভব নয় তাঁর পৰে। কারণ মতে মিলছে না, গত ছয় মাসে অনেক বিষয়েই চরম মতানৈক্য দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। কাজেই সম্পর্ক যতটুকু এগিয়েছে সেখানেই যবনিকা টানতে চান। সোহরাবের সাথে সানিয়ার বাগদান শেষ পর্যনত্ম তাই ভেঙ্গেই গেল। সানিয়ার বাবা ইমরান মির্জা, সাংবাদিকদের জানালেন দুই পরিবারের সিদ্ধানত্মেই এটা ঘটেছে। এতে করে দুই পরিবারের সম্পর্কে যেমন কোন ৰতি হয়নি তেমনি সোহরাব-সানিয়া বন্ধুত্বেও তা কোন প্রকার প্রভাবব ফেলবে না। তবে ইমারান মির্জার বক্তব্য যাইহোক না কেন , সানয়া-সোহরাব বাগদান ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে। কি কারণে এমনটা ঘটল এর কারণ অনুসন্ধানে কেউ বলল, টেনিস নিয়েই দু'জনের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। কারণ সোহরাব এবং তাঁর পরিবার চায় বিয়ের পর সানিয়া টেনিস ছেড়ে দিন। কারণ টেনিসের কারণে বছরে ৭-৮ মাস দেশের বাইরেই থাকতে হয় সানিয়াকে। ফলে ওই সময়টায় সোহরাবকে নিঃসঙ্গই থাকতে হবে। যেটা পছন্দ নয় তাঁর বাবার। অন্যদিকে সানিয়া এবং তাঁর পরিবারের ইচ্ছে এর বিপরীত। এ কারণেই শেষ পর্যনত্ম সানিয়ার বাগদান ভেঙ্গে গেল। অবশ্য সানিয়া নিজেই এ বছরের শুরম্নতে বলেছিলেন বিয়ের পর টেনিস ছেড়ে দিতে পারেন তিনি। সুতরাং টেনিস নিয়ে সোহরাব-সানিয়া সম্পর্কে ফাটল ধরেছে এ কথা মানতে নারাজ অনেকেই। তাদের ধারণা এর পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। সেই কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে কেউ আবার দাবি করলেন, সানিয়ার টেনিস পার্টনার মহেশ ভূপাতিকে নিয়েই আসলে ঝামেলার শুরম্ন। কারণ টেনিসের কারণেই মহেশ ভূপাতির সাথে বছরের বেশি সময় এক সাথে থাকতে হয় সানিয়াকে। বছরে অনত্মত ৪০ সপ্তাহ ভূপাতির সাথেই বিদেশে পড়ে থাকতে হয় সানিয়াকে। সাম্প্রতিক সময়ে দু'জনের এই পেশাদারী সম্পর্কটাও নাকি অন্যদিকেই টার্ন করেছে। সানিয়া সুন্দরী, প্রাণবনত্ম তরম্নণী; মহেশ একজন বিপত্নীক তারাক। যার কোন পিছুটান নেই। তাই দু'জনের মধ্যে মনের সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টিকে তাই অসম্ভব কিছু মনে করেন না অনেকেই। তাদের মতে, এই ভূপাতিকে নিয়েই ফাটল ধরেছে সানিয়া-সোহরাব সম্পর্কে। যদিও অনেকে এটা মানতে চান না এই কারণে যে বলিউড অভিনেত্রী লারা দত্তের সাথে ভূপাতির মন দেয়া নেয়ার খবর নিয়ে অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন চলছে। আবার ভূপাতির মতোই বলিউড অভিনেতা শহিদ কাপুরের সাথে সানিয়াকে জড়িয়েও গুঞ্জন উঠেছে এই অল্প কিছুদিন আগেই। তবে কারণ যাই হোক না কেন, ব্যক্তিগত এবং টেনিস ক্যারিয়ার নিয়ে ঝামেলাতেই রয়েছেন সানিয়া। এর ওপর জাগের ইনুজরি ফিরে আসায় নতুন করে সমস্যাতেই পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে অন্যসব ঝামেলা হয়ত এক সময় জয় করতে পারবেন, কিন্তু কব্জি যদি সুস্থ না হয় তাহলে টেনিস খেলা হবে না আর কোনদিনই। সানিয়া এখনই তাই নিজের কব্জির চিকিৎসা করার বিষয়টিকেই প্রাধান্য বিষয় হিসেবে দেখছেন।

No comments

Powered by Blogger.