বিএনপির তিন নেতার ব্রিটেনে পাচার অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা- ৪০ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন মওদুদ সিগমা হুদা ও লবী by মহিউদ্দিন আহমেদ

 বিরোধী দল বিএনপির সাবেক ও বর্তমান তিন প্রভাবশালী রাজনীতিকের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা ফেরত আনতে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে তিনটি এমএলএআর (মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট) পাঠাবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে পাঠাতে এরই মধ্যে কমিশনসভায় এর অনুমোদন দেয়া হয়। শীঘ্রই পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে দুদক। দুদক জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের নামে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১টি ফ্ল্যাট, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী বিএনপি নেতা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদা ও সন্তানদের নামে ২টি ফ্ল্যাট ও বিএনপি নেতা আলী আসগর লবির ২ ছেলের নামে ২টি ফ্ল্যাট কেনার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তিন রাজনীতিকের কেনা ৫টি ফ্ল্যাটের মূল্য চল্লিশ কোটি টাকার মতো।
দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাচার করা অর্থে ওই দেশে কেনা ফ্ল্যাটের নথিপত্র দুদকের কাছে রয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ২০১০ সালের ৫ মার্চ লন্ডনের ১৫, হান্টিংটনে প্রায় পৌনে ৪ লাখ পাউন্ডে ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেছেন। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী এ্যাডভোকেট সিগমা হুদা ও তার কন্যাদের নামে ২টি ফ্ল্যাট ক্রয় করা হয়। স্ত্রী সিগমা হুদা ও কন্যা সেলিনা হুদার লন্ডনে বাড়ির ঠিকানা হচ্ছে ১৫৩, দ্য ওয়াটার গার্ডেন। টাইটেল নম্বর এনজিআই ৬৪৯৭৮৭। অপর বাড়িটি কেনা হয়েছে স্ত্রী ও আরেক কন্যা শ্রাবন্তী হুদার নামে। এ বাড়ির ঠিকানা হচ্ছে চার নম্বর দিনহাম রোড। একটি বাড়ি কেনা হয় তিন লাখ ৮০ হাজার ইউরো দিয়ে। আরেকটির সঠিক মূল্য খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া আলী আসগর লবির ছেলে ফয়সল আসগর ও সাকিব আসগরের নামে আলাদাভাবে কেনা হয় দুটি ফ্ল্যাট। এর মধ্যে একেকটি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় আড়াই লাখ পাউন্ড। অবৈধ উপায়ে অর্থ পাঠিয়ে বিদেশে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগে এরই মধ্যে তিন রাজনীতিকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। দুদকের তথ্যানুযায়ী মওদুদ আহমেদ ওই ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য ঢাকায় তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে লন্ডনে তাঁর স্ত্রী হাসনা মওদুদের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠিয়েছিলেন। পরে ওই টাকায় ফ্ল্যাটটি ক্রয় করা হয়। উপ পরিচালক হারুনুর রশীদ এ অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন। তিনি এ অভিযোগটি অনুসন্ধান শুরু করেছেন ২০১২ সালের আগস্টের দিকে। প্রায় ৬ মাস অনুসন্ধানের পর কমিশন পাচার করা অর্থের তথ্য জানতে এমএলএআর পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। এমএলআরের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হবে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে তারা কি ব্যাংক চেকে নাকি নগদে অর্থ পরিশোধ করেছেন। তারা ডলার, পাউন্ড নাকি টাকায় ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করেছেনÑ সে তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে।
জানা গেছে, লন্ডনে ওই তিন ভিআইপির সম্পদের বিষয়ে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তারা বিদেশে ফ্ল্যাট ক্রয় করতে টাকা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়নি। নিয়মানুযায়ী বিদেশে টাকা পাঠানোর জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। দুদক ওই তিন ভিআইপির আয়কর রিটার্নে লন্ডনে তাদের ফ্ল্যাটের হিসাব পায়নি। আয়কর রিটার্নে বিদেশে অর্জিত সম্পদের হিসাব উল্লেখ না করায় রাজস্ব^ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। যার কারণে অর্থ পাচারকারীদের দিকে দুদক নজর দিয়েছে। তাদের এ তৎপরতায় প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অর্থ পাচার না করে দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে দেশের বেকার মানুষ কাজের সুযোগ পেত। একই সঙ্গে বেড়ে যেত রফতানি আয়। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হতো।
অর্থ পাচার মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯-এর ৪(২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার করে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হলে মুদ্রা পাচার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাদের ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.