লিভারের বিষ ফোঁড়া

লিভার এ্যাবসেস অর্থ লিভারের ফোঁড়া - অ্যাৎকে ওঠার মতো বিষয়ই বটে। ছোট ফোঁড়াতেই যখন কত বিড়ম্বনা সেখানে খোদ লিভারে ফোঁড়া বলে কথা। তবে কথাটা অবশ্য আংশিক সত্য।
কারণ একথা ঠিক যে, লিভারে ফোঁড়া ফেটে গিয়ে তা রোগীর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তবে আজকের দিনে সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে এ ধরনের ঘটনা খুব বিরল। লিভারে ফোঁড়া কেন হয়? লিভারে মূলত দু’ধরনের ফোঁড়া হয়, পায়োজেনিক ও ক্র্যসিবিক। ইকোলাই, স্টাফাইলোকক্কাই, স্ট্রেপ্টোকক্কাই, ক্লেবসিয়েলা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া। পায়োজেনিক লিভার এ্যাবসেসের জন্য দায়ী, আর এ্যমিবিক লিভার এ্যাবসেস হয় এ্যমিক থেকে। তবে এসব জীবাণু ঠিক কি কারণে লিভারে ফোঁড়া তৈরি করে তা সব সময় জানা যায় না। তবে ডায়াবেটিস, এপেন্ডি সাইটিস, গ্যাস্ট্রো এন্টারাইসস, রক্তের ইনফেকশন, নবজাত শিশুর নাভির ইনফেকশন, অতিরিক্ত মদ্যপান, পেটে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি কারণে লিভারে ফোঁড়া হতে পারে। একজন রোগীর লিভারের একটি বা একাধিক ফোঁড়া হতে পারে।
রোগের লক্ষণ : লিভারের ফোঁড়ার কোনো বিশেষ লক্ষণ নেই। রোগীদের সাধারণত খাবারে অরুচি, ডবর ও পেট ব্যথা থাকে। অনেক সময় কাশি কিংবা ডান কাঁধে ব্যথা থাকতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে রোগীর জন্ডিস হতে পারে।
রোগ নির্ণয় : রক্ত পরীক্ষা লিভার এ্যাবসেস নির্ণয়ে খুব বেশি কার্যকর নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্লাড কালচারে জীবাণু ধরা পড়তে পারে। লিভার এ্যাবসেসের জন্য মূল পরীক্ষা হলো পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম কোন কোন ক্ষেত্রে রোগের শুরুতে আল্ট্রাসনোগ্রাম এ্যাবসেস ধরে পড়ে না। এজন্য ৭-১০ দিন পর আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপিট করলে ভাল। সিটি স্ক্যান ও এমআর আই আল্ট্রাসনোগ্রামের চেয়ে ভাল হলেও এসব পরীক্ষায় খরচ বহুগুণ বেশি; আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় ও বটে।
লিভার এ্যাবসেসের চিকিৎসা : লিখার এ্যাবসেস সাধারণত এন্টিবায়োটিক ওষুধে সেরে যায়। তবে লিভার থেকে পুজ বের করে দেয়াটা জরুরী- বিশেষ করে লিভারে যদি বড় বা একাধিক এ্যাবসেস থাকে। এক সময় এজন্য অপারেশনের প্রয়োজন পড়লেও আজ আর তার দরকার পড়ে না। এখন আমরা লোকাল এনেসথেসিয়া করে খুব অল্প খরচে আল্ট্রাসনোগ্রাফি গাইডেনসে লিভার থেকে পুজ বের করতে পারে। আর এরপর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে লিভারের ফোড়া সারাতে বাধ্য।
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল
লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক লিভার বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.