পিলখানা হত্যার নেপথ্যে ছিল সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র- ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনের সময় এসেছে ॥ আওয়ামী লীগ

পিলখানায় নৃশংস হত্যাকান্ণণ্ডের পেছনের কুশীলব ও ষড়যন্ত্রকারীদেরও বিচারের দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচনের দাবি জানিয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন,
"যারা হত্যার রাজনীতিতে অভ্যস্ত, তারা হত্যা করেই ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু হত্যা করে নয়, মানুষকে ভালবেসে, তাদের মন জয় করেই ৰমতায় আসতে হবে। বিকল্প কোন পথে নয়।"
ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের দাবি- গণতন্ত্র, নির্বাচন ও আইনের শাসনে যারা বিশ্বাস করে না, সেই স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে এবং মহাবিজয় নিয়ে ৰমতায় আসা মহাজোট সরকারকে উৎখাতের লৰ্যেই এই পৈশাচিক হত্যাকা- ঘটিয়েছে। এখন সময় এসেছে, নেপথ্যের ষড়যন্ত্র-কারীদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করে দেয়া।
বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতারা একথা বলেন। এক বছর আগে পিলখানায় কথিত বিডিআর বিদ্রোহে নিহত শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আওয়ামী লীগ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে। সভার শুরম্নতেই শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে নীরবতা পালন এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা ইলিয়াছ হোসাইন বিন হেলালী। দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরম্ন, সাংগঠনিক সম্পাদক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, নগর আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অশানত্মির পথ পরিহার করে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ৰমতায় পাঠিয়েছে। তাই পাঁচ বছর অপেৰা করম্নন। এরপর চেষ্টা করে দেখুন ৰমতায় আসতে পারেন কি-না। তিনি বলেন, যারা হত্যার রাজনীতি করতে অভ্যসত্ম, তারা হত্যা করেই মতায় আসতে চায়। কিন্তু হত্যা করে কোনদিন মতায় আসা যায় না। মানুষকে ভালবেসেই মতায় আসতে হয়। বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকির কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আন্দোলন-মিছিল কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী- আওয়ামী লীগ তা জানে। শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়া মাত্র রাজপথে এমন মিছিল করা হবে, ওদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না। মার্চ-এপ্রিল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্নর কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এবার রাজাকারদেরও বিচার করতে গ্রামপর্যায় থেকে রাজাকার তালিকা তৈরি করতে হবে।
মতিয়া চৌধুরী বিডিআর হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিরোধী দল জড়িত অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়া সেদিন ভেবেছিলেন সরকার পড়ে যাবে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার কচু পাতার পানি না যে, টোকা দিলেই পড়ে যাবে। তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকা-ের ধারবাহিকতায় মহাজোট সরকারের পতন ঘটানো এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না।
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, যারা নির্বাচন-গণতন্ত্র-আইনের শাসনে বিশ্বাসী নয়, সেই অশুভ শক্তিই সেদিন বিডিআর বিদ্রোহের নামে জঘন্য সেনা হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছিল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী এই জঘন্য হত্যাকা-ের বিচার শুরম্ন হয়েছে। বিচার কাজ যখন এগোবে, তখন এর নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে অনেক বিষয়ই জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দেশ থেকে চিরতরে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের মূলোৎপাটনের অঙ্গীকার করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিডিআর হত্যাকা-ের পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবার রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে অশানত্মি ও অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। এবার রগকাটা জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার হবে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের নামে যারা নির্বাচিত সরকার উৎখাত এবং দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল- সেই নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশও উন্মোচন করতে হবে। কী কারণে এবং দুবাই থেকে কার টেলিফোন পেয়ে ওই সময় খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে তিনদিন পালিয়ে ছিলেন- সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, দেশকে ধ্বংস করে খালেদা জিয়া কোনদিনই হারানো মতা ফিরে পাবেন না।

No comments

Powered by Blogger.