মনজিল মোরসেদ একজন পরিবেশবাদী আইনজীবী by আশরাফ-উল-আলম

দেশের পরিবেশ রক্ষায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন যে মানুষটি, তিনি মনজিল মোরসেদ। পেশায় একজন আইনজীবী। দেশে প্রচলিত আইনকে কাজে লাগিয়ে বা আইনের আশ্রয় নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় নেমে এরই মধ্যে তিনি একজন পরিবেশবাদী আইনজীবী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।


শুধু পরিবেশ নিয়ে নয়, মানবাধিকার রক্ষায়ও তিনি আইনি লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি তাঁর ভূমিকা মানবাধিকার বঞ্চিত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তিনি। মানবাধিকারবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতির দায়িত্বে আছেন তিনি।
মনজিল মোরসেদ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। এ সংগঠনটি ইতিমধ্যে লাখ লাখ মানুষের একটি প্রিয় নামে পরিণত হয়েছে। অন্যায়, অবিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হলেই এগিয়ে আসে অ্যাডভোকেট মনজিলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংগঠনটি।
শুধু মানুষের জন্য সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পরিবেশ রক্ষার কাজেই ক্ষান্ত হননি এই আইনজীবী। লক্ষ রেখেছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিও। এরই ধারাবাহিকতায় খাদ্যে ভেজাল মেশানো ও রাসায়নিক প্রয়োগের অনৈতিক কার্যকলাপ রোধে তাঁর সংগঠন এইচআরপিবি জনস্বার্থে রিট আবেদন করে হাইকোর্টে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট প্রতিটি জেলায় ফুড কোর্ট গঠন ও পাবলিক ফুড অ্যানালিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম উপাদান নদী। এই নদী দখলে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা যখন উঠেপড়ে লেগেছে ঠিক তখনই সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এইচআরপিবি। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত ওই জরিপের মাধ্যমে নদীর প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণসহ কিছু নির্দেশনা দেন।
একটি জাতির পরিচয় তুলে ধরে তার ইতিহাস-ঐতিহ্য। আর এই ইতিহাস-ঐতিহ্যসংশ্লিষ্ট স্থানগুলোকে দখল হয়ে যাচ্ছে। এই দখলবাজি ঠেকাতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন এ আইনজীবী। লালবাগ কেল্লার সম্পত্তি রক্ষার জন্য উচ্চ আদালত ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ভূমিকম্প। স্থায়িত্ব স্বল্প সময় হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি বর্ণনাতীত। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ জোনে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঘনবসতির এ নগরীতে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ৩০ শতাংশ ঘর-বাড়ি ভেঙে যাবে। ঢাকা হয়ে উঠবে লাশের নগরী। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের নেই তেমন কোনো প্রস্তুতি। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধারকাজে সংশ্লিষ্ট অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম সংগ্রহে সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার দাবিতে মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং অর্থ সরবরাহের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকার পরিবেশ রক্ষায় আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। কোরবানির সময় চলাচলের রাস্তা দখল করে গরু-ছাগলের হাট বসে। এসব হাটের বর্জ্য অপসারণ না করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মানুষের ভোগান্তি হয়। এটি বন্ধে রিট আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মানুষের চলাচলের রাস্তা দখল করে গরুর হাট না বসানোর নির্দেশ দেন।
জনস্বার্থ বিবেচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন মনজিল মোরসেদ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে হাইকোর্ট বেশ কয়েকটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করলে হাইকোর্ট বিএসটিআই ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষকে ঢাকার ১০টি স্পট থেকে ওয়াসার পানির নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি টেস্টের পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আরেক আদেশে স্থানীয় সরকার সচিবকে ঢাকায় ওয়াসার পানির নমুনা সংগ্রহ করে তাতে ট্রাইহ্যালোমেথেন নামক ক্যান্সারের উপাদান রয়েছে কি না তা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএসটিআই এরই মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে এবং তাতে ওয়াসার পানিতে জীবাণু থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম ও ঢাকায় একাধিক স্থানে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করার সংবাদ প্রকাশিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশন দায়ের করেন মনজিল মোরসেদ। হাইকোর্ট ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না- এ মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন এবং সিভিল অফিসারদের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর অভ্যন্তরে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জনস্বার্থে এইচআরপিবির পক্ষে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- এ মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন।
জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তায় অবৈধ দখল বন্ধ করে বিচারক ও আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থী মানুষের যাতায়াত সহজ করার জন্য একটি রিট মামলা করেন তিনি। ঢাকা জজকোর্টে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি দূর করতে মামলাটি করা হলে আদালতের নির্দেশে ওই রাস্তার ফুটপাতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়। বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করার জন্য জনস্বার্থে রিট মামলা দায়ের করে এইচআরপিবি। শুনানি শেষে আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বাল্ব ব্যবহার বন্ধ এবং সব বেআইনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষায় অনেক রিট আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ। জনস্বার্থে করা এসব রিট আবেদনের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত জনগণের পক্ষেই রায় দেন।

No comments

Powered by Blogger.