মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন-ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণের ফলে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ব-তিব্বতীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি চীনের ভূমিকায় উদ্বেগ

ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে বিশ্ব পিছিয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে চীনে। দেশটির সরকার তিব্বতের বৌদ্ধদের দমনে শক্তি প্রয়োগ করছে।


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১১-তে এ অভিযোগ করা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সরকারি দমন-পীড়নের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাম রয়েছে।
চীন গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ প্রতিবেদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না করলেও সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এক মন্তব্য প্রতিবেদনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
মার্কিন প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই দিনই ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসে দেওয়া এক বক্তব্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, 'ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা দিতে নতুন প্রযুক্তিগুলো সরকারের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।' বিশ্বজুড়েই কয়েকটি ধর্মীয় গ্রুপের ওপর চাপ বাড়ছে। '১০০ কোটিরও বেশি মানুষ এমন সরকারের অধীনে বাস করে, যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা দমনে অভ্যস্ত। স্থিতিশীল, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ সমাজ নিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ এলে বলতেই হয়, বিশ্ব পিছিয়ে পড়ছে' বলেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর সরকারগুলো 'ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত করতে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার দমনে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণ্ডিবদ্ধ করতে' অধিক হারে ধর্ম অবমাননা নিরোধ আইন প্রয়োগ করে। এতে বলা হয়, 'চীনে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সরকারের শ্রদ্ধা ও সুরক্ষা গত বছর অনেকটাই কমে যায়। সরকার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বিশেষ করে তিব্বতি বৌদ্ধদের ওপর অতিমাত্রায় বিধিনিষেধ আরোপ করে।' তিব্বতীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে 'সরকারের হস্তক্ষেপের' কারণেই গত বছর অন্তত ১২ তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মাহুতি দেন।
এ প্রসঙ্গে সিনহুয়ায় গতকাল এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ওয়াশিংটনের দাম্ভিকতা ও অজ্ঞতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনটিকে তারা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, চীন ও উত্তর কোরিয়ায় কোনো ধরনের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। প্রতিবেদনে মোট আটটি দেশের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করা হয়েছে। চীন ও উত্তর কোরিয়া ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে_মিয়ানমার, ইরিত্রিয়া, ইরান, সৌদি আরব, সুদান ও উজবেকিস্তান। এতে ইন্দোনেশিয়া এবং সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার বিষয়টি উল্লেখ করে আফগানিস্তানেরও সমালোচনা করা হয়। পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা নিরোধ আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খ্রিস্টান নারী আয়েশা বিবির কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আলোচনায় এসেছে আরব বসন্ত ঘটে যাওয়া দেশগুলোও। মিসর প্রসঙ্গে বলা হয়, কপটিক খ্রিস্টানদের ওপর সহিংসতা রোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। হিলারি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগেই মিসর সফর করেন তিনি। 'ওই সময় খ্রিস্টানদের সঙ্গে খুব আবেগঘন ও ব্যক্তিগত আলাপ হয়েছে আমার। আমি দেখেছি, তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।' বার্ষিক এই প্রতিবেদনে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রসঙ্গে সতর্কতা ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভীতি, ইহুদিবিদ্বেষ, মুসলিমবিদ্বেষ ও অসহনশীলতা বাড়ছে। সূত্র : এএফপি, এপি।

No comments

Powered by Blogger.