বুয়েটের আন্দোলন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি ও প্রোভিসির পদত্যাগ দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আন্দোলন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।


এ রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বুয়েট ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। শিক্ষাসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার, বুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এবং বুয়েটকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মো. ইউনুস আলী আকন্দের দাখিল করা রিট আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়। জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করা হয় বলে আদালতকে জানান ড. ইউনুস আলী আকন্দ। আদালতে ড. ইউনুস আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও বুয়েটের পক্ষে এ এফ এম মেজবাহউদ্দিন শুনানি করেন। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশিরউল্লাহ ও নুসরাত জাহান।
আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, আদালত রুল জারির পাশাপাশি বুয়েটের চলমান আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
আদেশের পর রিট আবেদনকারী ড. ইউনুস আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, এ আদেশের পর বুয়েট খুলবে। ছাত্রছাত্রীরা আবার ক্লাস করতে পারবে। এ আদেশের ফলে তাদের পড়াশোনার জন্য সুবিধা হয়েছে।
রিট আবেদনে বুয়েট বন্ধের আদেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার, ভিসি ও প্রোভিসির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, বুয়েটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বুয়েটের ঘটনা তদন্তে সাত দিনের মধ্যে একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করার জন্য শিক্ষা সচিবের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে আদেশের তিন দিনের মধ্যে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের সম্মান শ্রেণীর প্রথমবর্ষে ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ ছাড়া চলমান আন্দোলন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, ৪৪ দিন ছুটি ঘোষণা কেন অবৈধ ও বাতিল করা হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়। গত রবিবার দাখিল করা এ রিট আবেদনের সঙ্গে বুয়েটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তার কারণ জানতে রুল জারির জন্য সম্পূরক আবেদন করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, গত ১০ জুলাই বুয়েট উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪৪ দিনের বন্ধ ঘোষণা করেন। বর্ষাকালে বুয়েটে ৪৪ দিনের গ্রীষ্মের ছুটি দেওয়া হয়েছে। আগে বুয়েটে গ্রীষ্ম বা বর্ষায় কোনো ধরনের ছুটিই ছিল না। এর ফলে মেধাবী অসংখ্য শিক্ষার্থী তাঁদের মূল্যবান সময় হারাচ্ছেন। এ ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বুয়েটে দেওয়া হয়নি। অথচ প্রতিবছর বুয়েটই সবার আগে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে।
গতকাল শুনানিতে ড. ইউনুস আলী আকন্দ সংবাদপত্রে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের প্রকাশিত ছবি দেখিয়ে বলেন, বুয়েটে আন্দোলন চলছে। ছাত্ররা প্ল্যাকার্ড বহন করছে। তিনি সিলেটে এমসি কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় সচেতন নাগরিক হিসেবে আদালতে এসেছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুয়েটের ভিসি ও প্রোভিসিকে সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে বলেন। কিন্তু তাঁরা তা না করে বুয়েট বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী নিজেই এ বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। এ সময় আদালত তাঁর কাছে জানতে চান, সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের বক্তব্য জানতে চান। এম কে রহমান বলেন, সরকার বিষয়টি নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষকরা তাঁদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, বুয়েট আন্দোলনের কারণে নয়, রমজান উপলক্ষে এ ছুটি দেওয়া হয়েছে। এরপর বুয়েটের পক্ষে এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বুয়েটের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি অবগত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আলোচনা চলছে। এরপর আদালত আদেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.