সতর্ক থাকুন- তিনি কাঁটার খোঁচা দিচ্ছেন-চট্টগ্রামে পাঁচ ফ্লাইওভারের ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিগত সরকার আমলে ৰমতায় থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট দুনর্ীতি ও লুটপাট করেছে। তারা এদেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছে। বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রীই ৰমতায় থাকাকালে এদেশের সাধারণ মানুষকে তিনি পদে পদে কাঁটার খোঁচা দিয়েছেন। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।


প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হবে। আমরা বাংলাদেশকে দৰিণ এশিয়ার একটি শানত্মিপ্রিয় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের স্থান এদেশে হবে না। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বাড়াবাড়ির কারণে ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে সবাই কষ্ট পেয়েছে। দেশের ব্যবসাবাণিজ্যসহ সর্বৰেত্রে ভীতির সঞ্চার হয়। নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ৰমতায় আসায় জনমনে স্বসত্মি আসে। জনগণ এখন উন্নয়ন চায়।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপৰ (চউক) আয়োজিত নগরীতে ৫টি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রসত্মর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি নয়, একযোগে ৫টি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপনের মধ্য দিয়ে বন্দরনগরীর উন্নয়নের শুভসূচনা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আবারও ঘোষণা করলেন, 'চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে নিলাম।' উলেস্নখ্য, বিগত নির্বাচনের আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। এর আগে শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী একদিনের সফরে চট্টগ্রামে এসে পেঁৗছেন। দুপুরে তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আইইবির ৫১তম কনভেশন উদ্বোধন করেন। বিকেলে নগরীর বহদ্দারহাট চত্বরে আয়োজিত ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
কোন ধরনের দলীয় কর্মসূচী না হলেও নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন অনুষ্ঠান রূপ নেয় জনসভায়। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের হাজার হাজার নেতাকমর্ী ও সমর্থকরা বাদ্যবাজনা, বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ও পস্ন্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। মুহুমর্ুহু সেস্নাগানে প্রকম্পিত হয় বহদ্দারহাট ও সনি্নহিত এলাকাসমূহ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ এ চট্টগ্রামের উন্নয়নে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই আমরা করব। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের প্রায় ডজনখানেক মন্ত্রী লুটপাট ছাড়া কিছইু দিতে পারেনি। বর্তমান সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক ও কঙ্বাজার পর্যনত্ম রেলপথ নির্মাণ করবে। চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আজ একসঙ্গে ৫টি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করে গেলাম। এটি উন্নয়নের সূচনা মাত্র। ইতোমধ্যে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়োজিদ বোসত্মামী সড়কের চার লেনবিশিষ্ট রাসত্মার সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ৪০ কোটি টাকায় ফিরিঙ্গীবাজার-সদরঘাট সড়ক, ৪০ কোটি টাকায় বায়েজিদ বোসত্মামী হতে ঢাকা ট্যাঙ্ক রোড সড়কের কাজ এবং ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাপাসগোলা রোডের উন্নয়নের কাজও এগিয়ে চলেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খুলে দেয়া হবে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু। চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নয়নে অচিরেই কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেম লিমিটেডের কাজ শুরম্ন হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী এবং দৰিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রাণকেন্দ্রে রূপানত্মর করতে আমরা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করেছি। ৩৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদরঘাট হতে শাহ আমানত সেতু পর্যনত্ম বন্দর কর্তর্ৃপৰের আর্থিক সহযোগিতায় মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নদীর নাব্য রৰায় কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ইস্টার্ন রিফাইনারির ধারণৰমতা বৃদ্ধির লৰ্যে সরকার এর আধুনিকায়নের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এ কাজে ৭ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির আধুনিকায়ন সম্পন্ন হলে এ প্রতিষ্ঠানের পরিশোধন ৰমতা ১৩ লাখ টন থেকে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে। ২০১১ সালের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে। এর ফলে আমরা বিশ্ববাজার থেকে ব্যারেলপ্রতি ১০ ডলার কম মূল্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম এমএ হান্নান আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল। জোট সরকার ৰমতায় এসে এর নাম বদলানো ছাড়া আর কোন কাজ করেনি। এ বিমানবন্দরে যেন বেশিসংখ্যক বিদেশী বিমান ওঠানামা করে এজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নগরবাসীর পানীয় জলের সঙ্কট প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসার তৃতীয় ইন্টেরিম প্রকল্পের অধীনে ৫৯টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। ফলে দৈনিক পানির উৎপাদন ৭০ মিলিয়ন লিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জাপান সরকারের অর্থায়নে প্রায় ৯৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দৈনিক ১৩৬ মিলিয়ন লিটার পানি উৎপাদন ৰমতাসম্পন্ন কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরম্ন হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর দাবির প্রেৰিতে চট্টগ্রামকে আমরা আনত্মর্জাতিক ক্রিকেট ভেনু্য ঘোষণা করেছি। আগামী বছর আপনারা এখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা দেখতে পাবেন। তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সৌন্দর্যহানি করবেন না। পাহাড় কেটে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করবেন না। আপনারা সমুদ্র উপকূলবতর্ী বাসিন্দা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে সর্বপ্রথম আপনারাই ৰতিগ্রসত্ম হবেন। সুতরাং এগুলো রৰা করা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব।
জাতীয় ও আনত্মর্জাতিক প্রেৰাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে দৰিণ এশিয়ার একটি শানত্মিপ্রিয় দেশ হিসেবে গড়তে চাই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের স্থান এদেশে হবে না। অতীতে রাষ্ট্রৰমতায় থেকে যারা দুনর্ীতি ও লুটপাট করেছে, যারা এদেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছে তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। বক্তব্যের পর তিনি টেলি কনফারেন্সে ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রসংলগ্ন স্থানে সমবেত সাধারণ মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপৰের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম বছরেই চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করা হলো। এর আগে কোন সরকারপ্রধান নিজে এসে চউকের এ ধরনের কোন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে গেছেন এমন কোন নজির নেই। ৰমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মধ্যে আর কোন সরকার এত টাকা বরাদ্দও করেনি চট্টগ্রামের উন্নয়নে। ২৬০ কোটি টাকায় ৫টি ফ্লাইওভার ছাড়াও চট্টগ্রামের আরও ৩শ' কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেৰায় রয়েছে। তিনি বন্দরনগরীতে পানি, গ্যাস সঙ্কট নিরসন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং পতেঙ্গাকে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও জানান। অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রী ডা. আফসারম্নল আমিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নুরম্নল ইসলাম বিএসসি এমপি, এবিএম আবুল কাশেম এমপি, এমএ লতিফ এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.