রানী এলিজাবেথের নাতনি জারা ফিলিপসের রৌপ্যপদক by রুমেল খান

৩০তম লন্ডন অলিম্পিকের পঞ্চম দিনে পদক-লড়াই বেশ ভালই জমে উঠেছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। গত ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকের স্বাগতিক এবং সর্বোচ্চ স্বর্ণজয়ী চীন এবারের অলিম্পিকেও এগিয়ে আছে স্বর্ণসংখ্যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চীন ১০ স্বর্ণ, ৫ রৌপ্য এবং ৩ ব্রোঞ্জপদক (মোট পদক ১৮) নিয়ে পদক তালিকার এক নম্বর অবস্থানটি ধরে রেখেছে এখনও।


দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র পদকসংখ্যায় চীনের সমান থাকলেও স্বর্ণসংখ্যায় পিছিয়ে। তাদের স্বর্ণসংখ্যা ৬টি। এছাড়া করায়ত্ত করেছে ৭ রৌপ্য এবং ৫ ব্রোঞ্জপদক। তৃতীয় স্থানে আছে ফ্রান্স (৪ স্বর্ণ, ১ রৌপ্য এবং ৩ ব্রোঞ্জপদক)। উত্তর কোরিয়া চতুর্থ এবং ইতালি আছে পঞ্চম স্থানে। স্বাগতিক গ্রেট ব্রিটেনের অবস্থা হতাশাজনক। ২ রৌপ্য এবং ২ ব্রোঞ্জপদক নিয়ে তাদের অবস্থান অনেক নিচেÑ বিংশ। পদক পেয়েছে, এমন দেশের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৮। ব্রিটিশ রাজপরিবার প্রধান রানী এলিজাবেথের নাতনী জারা ফিলিপস তাঁর ‘ইকুয়েস্ট্রিয়ান’ (জাম্পিং ইভেন্ট) ডিসিপ্লিনের টিম ইভেন্টে স্বর্ণপদক লাভ করেন কি না, মঙ্গলবার এ নিয়েই ক্রীড়ামোদীদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। কিন্তু হতাশ করেন জারা। ২০০৪ ও ২০০৮ অলিম্পিকে ইনজুরির জন্য অংশ নিতে ব্যর্থ হওয়া জারার দল গ্রেট ব্রিটেন স্বর্ণ নয়, লাভ করে রৌপ্যপদক। স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয় জার্মানি। এ দলে ছিলেন পিটার থমসন, ডার্ক শেরাডে, ইঙ্গগ্রিড ক্লিমকে, সান্ড্রা আওফার্থ এবং মাইকেল জাং। রৌপ্যজয়ী ব্রিটেন দলে জারা ফিলিপস ছাড়াও ছিলেন নিকোলা উইলসন, ম্যারি কিং, ক্রিস্টিনা কুক এবং উইলিয়াম ফক্স-পিট। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পায় নিউজিল্যান্ড। উল্লেখ্য, এটাই জারা ফিলিপসরে প্রথম অলিম্পিক পদক। উল্লেখ্য, জারার বাবা-মা উভয়েই জারার মতোই ইকুয়েস্ট্রিয়ান ইভেন্টে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন! মা প্রিন্সেস এ্যানে ১৯৭৬ মন্ট্রিল অলিম্পিকে অংশ নিয়ে কোন পদক না জিতলেও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১৯৭১ সালে ১টি স্বর্ণ এবং ১৯৭৫ সালে ২টি রৌপ্যপদক অর্জন করেন। বাবা মার্ক ফিলিপসের রেকর্ড তো আরও উজ্জ্বল। তিনি ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিকে দলগত স্বর্ণ এবং ১৯৮৮ সিউল অলিম্পিকে দলগত রৌপ্যপদক করায়ত্ত করেন।
মঙ্গলবার লিথুনিয়া তাদের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক পেয়ে ইতিহাস গড়ে। আর এ সাফল্য আসে মাত্র ১৫ বছর বয়সী স্কুলছাত্র এবং কিশোরী রুটা মেলুটাইটের হাত ধরে। তিনি ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সোনা জেতেন। দুর্দান্ত ইতিহাস গড়ার পথে মেলুটাইট পরাজিত করেন আমেরিকার তারকা মহিলা সাঁতারু রেবেকা সনিকে, যিনি এ ইভেন্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং বেজিং অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী। ব্রোঞ্জ জেতেন জাপানের সাটোমি সুজুকি। আর এই ইভেন্টে গত বেজিং অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা অস্ট্রেলিয়ার লেইসেল জোন্স সাঁতার শেষ করেন পঞ্চম স্থানে থেকে।
গতবারে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মার্কিনীদের গর্ব ধুলোয় মিশিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব হরণ করে নিয়েছিল চীন। এবারও গত চারদিনের প্রতিযোগিতা থেকে একই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত চীনারা ধরে রেখেছে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। আর তাদের ঠিক পেছনেই আছে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র। তবে স্বাগতিক হয়েও এখন পর্যন্ত আহামরি কিছু করে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনের এ্যাথলেটরা।
এদিকে ছেলেদের ১০ মিটার সিনক্রোনাইজিং প্ল্যাটফর্ম ইভেন্টে দিনের প্রথম স্বর্ণ পান চীনের ১৭ বছর বয়সী কিশোর কাও ইউয়ান ও ১৮ বছর বয়সী ঝ্যাং ইয়াংগুয়ান। মেয়েদের ৫৮ কেজি শ্রেণীর ভারোত্তোলনে চীনের লি জুয়েইং, জিমন্যাস্টিকসের পুরুষ দলগত ইভেন্টে চীন স্বর্ণ পায়।
গতকাল একদিনেই ফরাসীদের হয়ে সাঁতারে দুটি স্বর্ণ জিতেছেন ইয়ানিক এ্যাগনেল (ব্যক্তিগত ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ও ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে)। এই ইভেন্টে মার্কিন ফেবারিট রায়ান লোচটে হন চতুর্থ।
অন্যদিকে পরশু যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেভারস ম্যাথু ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে জিতেছেন স্বর্ণ। ১৭ বছর বয়সী মার্কিনী মহিলা সাঁতারু মিসি ফ্র্যাঙ্কলিন ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে স্বর্ণ জেতেন আর এটা করতে তিনি ভেঙ্গে দেন নিজের পূর্বের অলিম্পিক রেকর্ড। অনন্য নৈপুণ্যের কারণে ইতোমধ্যেই ‘মহিলা ফেলপস’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে মিসিকে। এছাড়া শূটিংয়ের স্কিট ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের ভিনসেন্ট হ্যানকক, ক্যানোয়িংয়ে ফ্রান্সের টনি এস্টানগুয়েট, মেয়েদের ১০ মিটার সিনক্রোনাইজড প্ল্যাটফর্মে চীনের চেন রুলিন এবং ওয়াং হাও জুটি স্বর্ণ জেতেন।

No comments

Powered by Blogger.