ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া জালিয়াতরা-জাল নোটের ২৩ চক্রকে শনাক্ত করেছে পুলিশ ও র‌্যাব by নজরুল ইসলাম

রাজধানীর ঈদবাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দিতে তৎপর ২৩টি চক্রকে শনাক্ত করার দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ডিবি ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, খুচরা দোকান থেকে শুরু করে বড় বিপণিবিতান, এমনকি ব্যাংকের এটিএম মেশিনেও ঢুকে পড়ছে জাল টাকা।


ডিবি ও র‌্যাবের তদন্তকারীরা বলছেন, গত দুই দিনে গ্রেপ্তার হওয়া দুটি চক্রের দুই প্রধানসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা এখন ২৩টি চক্রেরই প্রধানের নাম জানেন।
ডিবি পুলিশ গত শুক্রবার রাজধানীর মুগদা ও মান্ডা থেকে ৪৭ লাখ টাকার জাল নোট, পাঁচ সহযোগীসহ একটি চক্রের সন্দেহভাজন প্রধান মো. সেলিমকে এবং শনিবার র‌্যাব মিরপুর থেকে জাল নোট প্রস্তুতকারী হিসেবে অভিযুক্ত রাকিব হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করে। জাল নোট তৈরির দুটি কারখানা থেকে প্রিন্টারসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও উপকরণও উদ্ধার করা হয়।
ডিবি ও র‌্যাব সূত্রের তথ্যমতে, জাল নোট তৈরিতে সক্রিয় বাকি ২১টি চক্রের প্রধানেরা হলেন: হুমায়ুন কবির, জাহাঙ্গীর আলম, ছগির মাস্টার, সাইফুল ইসলাম, মো. সুমন, পলাশ মিয়া, আলাউদ্দিন, কাওছার হোসেন, জাকির হোসেন, আবদুর রশীদ, মাহবুব মোল্লা, মো. জহির, মো. আবদুল্লাহ, মিন্টু ওরফে রাজা, হাবিবুর রহমান, রুবিনা আক্তার, মামুনুুর রহমান, আয়নুল হক, সোলায়মান মজুমদার, পারভেজ আহমেদ ও আবুল কালাম। একেকটি চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে।
এসব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান ও র‌্যাব-৪-এর অপ্স কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে জাল নোট তৈরি ও বাজারজাত করার সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের প্রধানদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে।
মশিউর রহমান বলেন, ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৭ জুলাই পর্যন্ত সাতটি চক্রের প্রধান সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে সম্প্রতি তিন চক্রের প্রধান যথাক্রমে আলাউদ্দিন, ছগির মাস্টার ও হুমায়ুন কবির জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আবার ব্যবসা শুরু করায় তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও ডিবির উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত চক্রগুলোকে ধরতে ডিবি নজরদারি বাড়িয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে বিপণিবিতানের প্রবেশপথে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে জাল শনাক্তকরণ যন্ত্র বসাতে বলা হবে। তিনি বলেন, জাল নোট চেনার সহজ উপায় হলো নোটের রঙিন স্থানে থুতু বা পানি লাগিয়ে ঘষা দিতে হবে। এতে রং উঠে গেলে বুঝতে হবে, নোটটি জাল।
চক্র গড়ার কৌশল: ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ধরা পড়া চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, জাল নোটের কাঁচামাল সংগ্রহ ও তৈরির কাজে আত্মীয়-পরিজন বা ঘনিষ্ঠজনদের যুক্ত রাখা হয়। এতে বাইরের লোকের কলাকৌশল শিখে ফেলা ঠেকানো ও গোপনীয়তা রক্ষা—দুটিই হয়। শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া একটি চক্রের প্রধান সেলিম জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁর বেয়াই জাকির ও ভগ্নিপতি হামিদ দুটি জালিয়াত চক্রের প্রধান। তাঁদের কাছে কৌশল শিখে তিনি দল গড়েন।
ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সেলিমের সহযোগী জালাল বলেছেন, তিনি গুলিস্তানের নতুন টাকা বিক্রেতা ও ব্যাংক থেকে ৫০০ টাকার মাপের ১০০ টাকার নোট সংগ্রহ করে সেলিমের কাছে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করতেন। সেলিম ১০০ টাকার নোটের ওপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছাপ দিয়ে ৫০০ টাকা তৈরি করতেন। এক হাজার টাকার নোটের মাপের কাগজের ওপর নকশা ও ছাপ বসিয়ে তৈরি হতো হাজার টাকার নোট। সেলিম খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে রাজবাড়ী, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও খুলনায় এসব নোট পাঠাতেন।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, এক বছরে জাল নোট তৈরি ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এদের অনেকেই অল্প দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার পুরোনো পেশায় যুক্ত হয়।
বাজারজাতের কৌশল: ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, সাধারণত কাঁচাবাজার ও বিপণিবিতানে কেনাকাটা করে জাল নোট বাজারজাত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.