পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন-এডিবি ও জাইকার ঋণচুক্তির মেয়াদ এক মাস বাড়ল

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে এডিবি ও জাইকার ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়ানোর খবরে হালে পানি পেলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের পর অনেকেরই ধারণা ছিল, অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোও এই সেতুতে অর্থায়ন করবে না।


গতকাল সংস্থা দুটির ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ এক মাস বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সেই আশঙ্কা অনেকটাই উবে গেল। উজ্জ্বলতর হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার সম্ভাবনাও। একই রকম আশা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। কারণ, এর ফলে সরকার বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন ও ঋণচুক্তি পুনর্বহাল বিষয়ে আলাপ-আলোচনার সুযোগ পেল।
এডিবি ও জাইকার ঋণচুক্তি কার্যকর করার মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, 'এইমাত্র আমি জানতে পেরেছি। আমি মনে করি এটা ইতিবাচক। এর ফলে আমরা দাতা সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে পারব।'
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রতিনিধিরা গতকাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ এক মাস বাড়ানোর চিঠি হস্তান্তর করেন। সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইল ফোনে সময় বাড়ানোর খবর অর্থমন্ত্রীকে জানান ইআরডি সচিব। গতকাল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এ ঋণ কার্যকর করার কথা ছিল।
বিশ্বব্যাংকের চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্নভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চুক্তি বাতিলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।' বিশ্বব্যাংক না এলে এই প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়ন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সেটা এখনই বলা যাবে না। এটা একটা গ্রুপ লোন। এই গ্রুপ লোন একবার বাতিল হলে তা নতুন করে শুরু করতে হয়। তবে আমি আশাবাদী, বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করবে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এডিবি ও জাইকার চুক্তি কার্যকরের মেয়াদ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হলো। ওই কর্মকর্তা বলেন, জাইকার প্রধান দিন কয়েক আগে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। এর পরই জাইকা চুক্তি কার্যকরের মেয়াদ বাড়াল। এডিবি ও জাইকা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ বাড়ায়নি বলে ধারণা ওই কর্মকর্তার।
গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। এডিবি, জাইকা ও আইডিবি ঋণ বাতিলের ঘোষণা না দিলেও বিশ্বব্যাংকের কারণে তাদের অর্থায়নও স্থগিত রয়েছে। গত ২৩ জুলাই এডিবি ও জাইকার সঙ্গে ঋণ কার্যকারিতার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সরকার মনে করে, তারা সময় বাড়ালে এই বর্ধিত সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতু অর্থায়নের কাঠামো চূড়ান্ত করতে পরিকল্পনা নেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের ঋণের মেয়াদও ছিল ৩১ জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু তাদের ঋণ বাতিল ঘোষণা করায় ওই তারিখের কোনো মূল্য নেই। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে পদ্মা সেতু প্রকল্পের স্ট্যাটাসে 'ক্লোজড' লেখা রয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার এখন এডিবি ও জাইকার কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছে। এডিবি ও জাইকা বাংলাদেশের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল থাকলেও প্রধান দাতা বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপর তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। পদ্মা সেতু একটি চলমান প্রকল্প। বিশ্বব্যাংক তাদের ১২০ কোটি ডলার ঋণ বাতিল করেছে। কিন্তু এডিবি, জাইকা ও আইডিবি চুক্তি বাতিল করেনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার পক্ষে বিশ্বব্যাংকের নিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক এম এন প্রসাদকে সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী আমিনুল হককে গত ৩ জুলাই অর্থমন্ত্রী নানাভাবে পরামর্শ দিয়েছেন। গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও জাইকার প্রেসিডেন্টের মধ্যে এক বৈঠকে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট শর্ত সাপেক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। শর্তগুলো সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.