বিড়িশ্রমিক আক্তারী পেলো জিপিএ-৫ by টিএম মামুন

তিনভাই বোনসহ ৫ সদস্যের সংসার। নুন আনতে পানতা ফুরায়, কোনমতে একটা জিনিসের প্রয়োজন মেটে তো আরেকটা প্রয়োজন এসে দাঁড়ায় সামনে। অভাব অনটন যেন পিছু ছাড়ে না তাদের। এমন পরিবারে জন্ম নিয়ে দারিদ্রের কষাঘাতে বেড়ে ওঠা বিড়িশ্রমিক আক্তারী জাহান এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে আরেকবার প্রমাণ করে দিল অধ্যবস্যায় আর পরিশ্রম মানুষকে বহুদ‍ূর নিয়ে যেতে পারে।

বগুড়া নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আক্তারী জাহান।
বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার মুনসুর রহমান ওরফে ইউসুফের ছোট মেয়ে আক্তারী জাহান। বসবাস করেন পাড়ার এক গলির মাথায় জীর্ণ একটি ভাড়া বাড়িতে।

বাড়ির পাশে উপশহর বাজার সংলগ্ন মাত্র দু’ফুট চওড়া ও তিনফুট প্রস্থ্য একটি ঘরে সেলুন বসিয়ে নাপিতের কাজ করেন ইউসুফ। আশপাশে বেশ কয়েকটি বিলাসী সেলুন থাকায় ইউসুফের ছোট্ট এই ঘরে স্বভাবিকভাবেই গ্রাহক অনেক কম থাকে।

দোকান আর বাড়ি ভাড়া দিয়ে যে টাকা উবৃত্ত থাকে তা দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালানো তার জন্য অসম্ভব প্রায়। তাই আয় বাড়াতে স্ত্রী সাহিদা বেগম ছোট মেয়ে আক্তারী জাহানকে নিয়ে বেছে নেন বিড়ি তৈরির পেশা।

বড় মেয়ে তামান্না আক্তার বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ইংরেজীতে সম্মান (তৃতীয় বর্ষের) অধ্যয়ন করার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে কিছুটা বাড়তি আয় করেন। যা তার নিজের এবং এইচ.এস.সিতে অধ্যয়নরত ছোট ভাই সাঈদের পড়াশুনার খরচ চালাতে সাহায্য করে।

আক্তারী জাহান বাংলানিউজকে জানান, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর টাকার অভাবে বই কিনতে পারেননি তিনি। এক আত্মীয়ের মেয়ের পুরাতন বই এনে পড়তে হয়েছে তাকে। কলেজে বেতন মওকুফ করানোর জন্য কয়েক দফা তার মা কলেজে গিয়ে শিক্ষকদের অনুরোধ জানালে কাজ হয় তাতে। এমনকি পারিশ্রমকি ছাড়াই কয়েকজন শিক্ষক তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন।

তিনি আরও জানান, বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও বড় বোন যেহেতু ইংরেজীতে অনার্স পড়েন তাই তারও ইচ্ছে ছিলো ভালো ফলাফল করে ইংরেজীতে অনার্স পড়বেন। তাই বিড়ি তৈরির পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন তিনি।

আক্তারীর মা সাহিদা বেগম বাংলানিউজকে জানান, আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ছেলে মেয়েদের ভাল পোশাক ও খাবার দিকে পারেননি তারা।

নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে জানান, তারা তিনভাই বোন-ই তার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছে। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারীরই জানা। যে কারণে তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের বেতন নেওয়া হতো না।

তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষ তার প্রতি সদয় হবেন বলেও দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.