হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন নতুন লেখকদের প্রেরণা

পাঠক নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে এক প্রতিক্রিয়ায় নারী নেত্রীরা বলেছেন, “সমকালীন জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ শুধু পাঠক সৃষ্টি করেছেন তা নয়, সাহিত্যের এই বটবৃক্ষ নতুন লেখক সৃষ্টির উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছেন। অনেক তরুণ-তরুণী হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্মের যশ-খ্যাতিতে নিজেদের উদ্দীপ্ত করে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। অনেকে সফলতার দ্বারপ্রান্তেও পৌঁছেছেন।”

এ ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তাকে শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার সঙ্গে তুলনা করে তারা বলেন, “এখানে লেখার মান কিংবা লেখার বিষয়বস্তু বিবেচ্য নয়। তিনি যা লিখেছেন, তা পাঠক মনে কতটা সাড়া ফেলেছে- তা বিবেচনায় নিয়ে বলা বলা যায় তিনি সত্যিই পাঠক নন্দিত ছিলেন। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেযোগ্য যে, বাংলা একাডেমীর বইমেলায় প্রধান আর্কষণ ছিল হুমায়ূন আহমেদের বই। আর প্রকাশনা ব্যবসা চাঙ্গা হয়েছিল তার বই ছেপে। আমরা একুশে বইমেলা এলে উন্মুখ হয়ে থাকতাম হুমায়ূন আহমেদের কী কী বই আসছে, তা কেনার জন্য। এতে একবাক্যে বলা যায় বিস্ময়কর জনপ্রিয়তার অধিকারী ছিলেন তিনি। টেলিভিশনের পর্দায় হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখলেই দর্শক যেভাবে নড়ে চড়ে বসতেন, তেমনটা বোধহয় আর হবে না।”
বার্তা২৪ ডটনেটের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। মানব সভ্যতার ইতিহাস, ধর্ম নিয়ে তার জানার পরিধি ছিল বিশাল, ছবি আকাঁও ছিল তার পছন্দের বিষয়। বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি। তিনি সাইন্সফিকসন লিখে তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান মনস্ক করেছেন।”

তিনি বলেন, “আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ছিল একমাত্র টিভি চ্যানেল।  তখন হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক বহুব্রীহি, অয়ময় এসব নাটক দেখার জন্য হাতের কাজকর্ম ফেলে টিভি সেটের সামনে বসতাম। হুমায়ূন আহমদের সৃষ্টিশীলতার একটি প্রমাণ হাসান রাজাকে আমাদের মাঝে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি।”

সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুননেছা হক এমপি বলেন, “ভালো মানুষ পৃথিবীতে বেশি দিন বাঁচে না। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝে আরো অনেক দিন বেঁচে থাকবেন এমন আশা অনেকের ছিল। কিন্তু সে আসা আমাদের পূরণ হলো না। উনি যদি বেঁচে থাকতেন তা হলে আমরা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টিশীল অনেক কিছু পেতাম। উনার মৃত্যুতে সাহিত্যর যে ক্ষতি হলো সেটা পূরণ হবার নয়।”

তিনি বলেন, “হুমায়ূন এমন একজন মানুষ ছিলেন যার লেখার হাত ছিল বিশাল। সাহিত্য, উপন্যাস, গল্প, নাঠক, সব কিছুতেই তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। হুমায়ূন আহমেদ রচিত নাটক গতরাতেও দেখেছি। আমি সবসময়েই সুযোগ পেলে তার রচিত নাটক দেখতাম। বিশেষ করে তার নাটকে হাস্যরসসহ উপজীব্যের অনেক বিষয় ছিল।”

ডিএমপি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শামীমা বেগম বলেন, “এ প্রজন্ম সৃষ্টিশীল একজন অভিভাবক হারালো। হুমায়ূন আহমেদ  মধ্যবিত্তের জীবনকে যেভাবে দেখেছেন তা লেখার মাঝে ফুটিয়ে তুলে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। তার লেখা মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো এখনো আমার মনে দাগ কাটে। তিনি নারী চরিত্রগুলো বিভিন্নভাবে নাটক, সিনেমা, গল্প, উপন্যাসে সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন।”

কর্মজীবী নারী’র প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী শিরিন আক্তার বলেন, “দেশে সব মানুষের মতো আমিও শোকাহত। তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এমন সময় হুমায়ূন মারা গেলেন যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, আমরা শক্তি হারিয়ে ফেললাম।”

তিনি বলেন, “হুমায়ূনের গল্পের হিমু চরিত্রটা অনেক সময় চিন্তা করে এর রহস্য খুঁজে পাই না।”

কথাশিল্পী ও গল্পকার ঝর্ণা রহমান বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের দেখার আঙ্গিক ছিল আলাদা। উপস্থাপকের ভঙ্গির মধ্যে এমন একটি বিশেষত্ব ছিল যাতে এই চেনা জগৎ ও জানা কথার মধ্যে আমরা নতুনত্ব খুঁজে পেতাম। তার লেখায় নারী স্বাধীনতাকে স্পষ্টভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং নারী জাগরণকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি যে প্রকৃতিতে মিশে যেতেন সেটা নুহাশ পল্লীতে না গেলে বুঝা যাবে না। এই নুহাশ পল্লী থেকে কত গল্প, উপন্যাসের সৃষ্টি আজ পাঠকের স্মৃতির খোরাক। তিনি মারা যাওয়াতে আমার মনে হচ্ছে আমার পরিবারের একজন সদস্যকে হারিয়েছি।”

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সভানেত্রী রোকেয়া কবীর বলেন, “হুমায়ূন ভাই আমার তিন/চার বছরের বড় হবেন। আমার বাড়ি নেত্রকোনায় এবং উনার বাড়িও নেত্রকোনায়। সেই হিসেবে হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কয়েক বার কথা হয়েছে। বিশেষ করে নেত্রকোনার উন্নয়ন, শিক্ষাসহ আরো নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। তার মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাভিভূত।”

No comments

Powered by Blogger.