হাওরপারের দুটি গ্রামে আর্সেনিকের ছোবল

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরপারের কয়েকটি গ্রামের লোকজন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত গ্রাম দুটি হলো টাঙ্গুয়ার হাওরপারের গোলাবাড়ি ও ভান্ডারচাকর। অন্য গ্রামগুলো হলো: চতুর্ভুজ, হলহলিয়া ও চরগাঁও গ্রাম। তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গ্রামবাসীর কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, জুন মাসে শিশু ও নারীসহ ৪০ জন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের ৩০ জন গোলাবাড়ি ও পাঁচজন ভান্ডারচাকর গ্রামের। বাকিরা অন্য তিন গ্রামের। তিনি জানান, রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নলকূপের পানি পান করেই তাঁরা আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি তিনি জুন মাসেই লিখিতভাবে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম বলেন, ‘ওই গ্রামগুলোর নলকূপের পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিক থাকার বিষয় আমাদের জানা ছিল না। গোলাবাড়ি ও ভান্ডারচাকর গ্রামের আর্সেনিক আক্রান্তদের অধিকাংশই নলকূপের পানি পান করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এত দিন পর্যন্ত শুধু গোলাবাড়ি গ্রামের নলকূপটিতে ২৫০ পিপিবি (পাস্ট পার বিলিয়ন) মাত্রার আর্সেনিক উপস্থিতির তথ্য ছিল। আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৫০ পিপিবি।’ তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও তাঁরা আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর কোনো তথ্য পাননি বলে জানান।
সূত্র জানায়, গত ২৫ জুন উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি ও ভান্ডারচাকর গ্রামের কয়েকজন তাঁদের হাত, পা ও পেটে ছোপ ছোপ দাগ, চুলকানি ও ঘায়ের সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তাঁদের দেখে চিকিৎসকেরা বলেন, তাঁরা আর্সেনিকে আক্রান্ত।
এনজিওকর্মী লিপিকা তালুকদার বলেন, ‘গত এক মাসে গোলাবাড়ি ও ভান্ডারচাকর গ্রামে অনেক লোকই আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশুদ্ধ পানি পান ও বেশি করে শাকসবজি খাওয়া এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
গোলাবাড়ি গ্রামের পূর্ব দিকের গ্রামটির নাম ভান্ডারচাকর। এ গ্রামের চার শতাধিক লোকের জন্য একটি মাত্র নলকূপ। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগ সম্পর্কে ধারণা না থাকা, আর্থিক অসচ্ছলতা এবং দুর্গম হাওরাঞ্চল হওয়ার কারণে অনেকেই এখনো চিকিৎসা পাননি। আবার নলকূপের পানি পান করে আর্সেনিকে আক্রান্ত হলেও গ্রামে আর কোনো নলকূপ না থাকায় গ্রামবাসী বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে রয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহামঞ্চদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.