বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-রাষ্ট্রীয় অর্থে 'পারিবারিক' প্রতিষ্ঠান

চেতনা ও চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয় ধারণ করবে বৈশ্বিক পরিসর_ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো নিয়ে এমন প্রত্যাশা আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময়ই হোঁচট খায়। আমরা দেখে আসছি, কীভাবে দলবাজি, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক অনিয়ম, কোটারি সংঘাতের মলিন ছায়ায় ঢাকা পড়ে জ্ঞানচর্চার চিলতে রোদ্দুর।


দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও ব্যক্তির স্বার্থের কাছে কীভাবে উপেক্ষিত হয় সামষ্টিক কল্যাণ। রংপুরে প্রতিষ্ঠিত দেশের নবীনতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বেগম রোকেয়ার উপাচার্য আরেক কাঠি সরেস। বৈশ্বিক চেতনার একটি বিদ্যাপীঠকে তিনি অবলীলায় বন্দি করে ফেলেছেন পারিবারিক গণ্ডিতে। তিনি যেভাবে নিজের কন্যা, ভাই, ভায়রা, ভায়রার পুত্র-কন্যাসহ আত্মীয়স্বজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন, তা সত্যিই নজিরবিহীন। পারিবারিক সম্পর্কের বাইরেও একটি বিশেষ এলাকা থেকে তিনি যেভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে চলছেন, তাও কি কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা ধারণ করে? বৃহস্পতিবার সমকালের প্রধান সংবাদের উপজীব্য তারই নানা কীর্তি। এটা স্বস্তিকর যে, বিলম্বে হলেও এসব অনিয়মের ব্যাপারে স্থানীয়দের প্রতিবাদ কর্মসূচি ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রতি সাড়া মিলেছে। উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি। আমরা চাই, সব অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তিনি যেভাবে গত চার বছর ধরে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে প্রশ্নবিদ্ধ সব কাজ করেছেন, তাতে করে তার খুঁটির জোর স্পষ্ট। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিটি তাও খতিয়ে দেখবে। জাতি গঠন ও সুশাসনের স্বার্থেই এসব অনিয়মের অবসান ও প্রতিকার হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রীয় অর্থে 'পারিবারিক' মৌরসিপাট্টা আর চলতে দেওয়া যায় না। বর্তমান উপাচার্যের আমলের সমস্ত নিয়োগও পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। ভালো হয় তদন্তকালে উপাচার্য যদি দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি পান। তাকে শীর্ষ কেদারায় বসিয়ে তারই বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত নির্বিঘ্নে পরিচালনা কঠিনই বটে। একই সঙ্গে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে যাতে মেধা ও যোগ্যতাই নিয়োগপ্রাপ্তির একমাত্র মাপকাঠি হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। শুরুতেই যদি পারিবারিক ও গোষ্ঠীস্বার্থের গলিঘুপচি দিয়ে মেধাহীন ও তোষকরা ঢুকে পড়ে, তা গাণিতিক হারে মেধাহীনতা, অনিয়ম ও তোষণেরই জন্ম দিতে থাকবে। তাতে করে আর যা-ই হোক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.