দাম তো বাড়ল, বিদ্যুৎ কই

উৎপাদনে বড় মাপের ঘাটতি মাথায় রেখে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। ভাবটা এমন, এটা রুটিন ঘটনা। শুধু এখনই দাম বেড়েছে তা নয়, আগামী আগস্ট মাসেও আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়বে_সেই ঘোষণাও দেওয়া হলো একই সঙ্গে! কোনো কিছুর দাম বাড়ানোর আগে যুক্তি প্রদর্শনের কোনো অসুবিধা হয় না।


তেমনি এবারও যুক্তি দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু একটা বিষয় কেউই আলোচনা করছে না। তা হচ্ছে, গ্রাহক বিদ্যুৎপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা পাচ্ছে কি? সরকার কি পারবে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে? নাকি মানুষকে ভাবতে বাধ্য করবে যে সরকার হচ্ছে 'ভাত দেবার ভাতার নয় কিল দেবার গোঁসাই'। ঘটনাচক্রে তেমনই মনে হয়। ২০০৮ সালে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দেখল তাদের বিলে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। ২০০৯ সাল কিংবা ২০১০ সাল বাদ গেল না এ মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে। এবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথম দফায় বিদ্যুতের দাম খুচরা বাড়বে গ্রাহক-পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ। তবে গণশুনানি না করেই এ মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার কারণে এখনই বলা যাচ্ছে না যে এই বৃদ্ধি এখানেই শেষ। কোন কারণে গণশুনানি হয়নি, এর কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি কিংবা দেয়নি। কিন্তু আভাস রয়েছে স্পষ্ট, আগামী মাসে এ গণশুনানি হবে এবং সেই শুনানির পর হয়তো এ বৃদ্ধির হার আরেক দফা বেড়ে যাবে। সুতরাং বিদ্যুতের কোনো সুখবর পাওয়া যেন সাধারণ গ্রাহকদের জন্য স্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির জন্য যেসব যুক্তি উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো গতানুগতিক। আগেও একই যুক্তি দেখানো হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এ খাতকে উন্নয়নের ধারায় প্রবাহিত করতে সরকার সচেষ্ট। প্রশ্ন হচ্ছে, এ চেষ্টার ফল কি সাধারণ মানুষ পেয়েছে? কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার যে আওয়াজ শোনা গিয়েছিল, সেই আওয়াজ অনুযায়ী কি তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে? বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের লালফিতার দৌরাত্ম্য, জ্বালানি সমস্যা ইত্যাদি কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করার ব্যাপারেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ সিস্টেম লস সহনীয় পর্যায়ে আনতে না পারার জন্য দুর্নীতিকেও দায়ী করা হচ্ছে সব সময়, যেমন উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কারণেও। এসব বিষয় বরাবরই বলা হচ্ছে। কিন্তু অবৈধ সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করে কিংবা সিস্টেম লস কমিয়ে আনার পরিবর্তে বারবার সাধারণ মানুষের ওপর এভাবে অর্থব্যয় চাপিয়ে দেওয়ার কাজটি নিয়মিত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে গতি কাঙ্ক্ষিত নয়। এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার ওপর এর কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য। একদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে না-পারার কারণে সরকার যে সমালোচনার মুখে পড়েছে, সেই সমালোচনা যে আরো বেড়ে যাবে_তাও নিশ্চিত করেই বলা যায়। মূল্যবৃদ্ধির সময়টিকেও এমনভাবে বাছাই করা হয়েছে, যা ভাবনার বিষয়। এ মুহূর্তে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জ্বরে আক্রান্ত দেশ। তারপর আবার শুরু হয়েছে সারা দেশে সেচ মৌসুম। বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাবে মানুষের। সে ক্ষেত্রে চাহিদা পূরণের দিকে প্রকৃত অর্থে নজর না দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করার যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তার পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.