পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন-এডিবি জাইকার চুক্তিও অকার্যকর

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করায় সহযোগী দুই সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে সম্পাদিত ঋণচুক্তিও স্বাভাবিকভাবেই অকার্যকর হয়ে গেছে। তবে একই প্রকল্পের জন্য ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে করা চুক্তিটি এখনো বহাল আছে।


অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও চুক্তিবদ্ধ ঋণদাতা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার এ কথা বলা হয়েছে। ইআরডির সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করায় এডিবি ও জাইকার সঙ্গে বহাল থাকা চুক্তিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সংস্থা দুটি পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চাইলে পুনরায় সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। ইআরডি সচিব বলেন, এডিবি বা জাইকার কাছ থেকে অর্থ প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
কোনো প্রকল্পে প্রধান অর্থায়নকারী সরে দাঁড়ালে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সহ-অর্থায়নকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির কার্যকারিতাও নষ্ট হয়ে যায় বলে ইআরডি কর্মকর্তারা বলেছেন। তবে ইআরডি সচিব জানান, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রধান অর্থায়নকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শফিকুল আজম বলেন, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী আমিনুল ইসলাম ও দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক এম এম প্রসাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আলোচনা চলছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওয়াশিংটন যাবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে এডিবির পক্ষ থেকে গতকাল সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন প্রত্যাহারের কথা বিশ্বব্যাংক তাদের জানিয়েছে। আর যেসব কারণে বিশ্বব্যাংককে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সেগুলো এডিবির কাছেও বোধগম্য। সুশাসন ও ব্যাংকের অর্থ ব্যবহারে যথাযথ তদারকির ক্ষেত্রে এডিবি ও বিশ্বব্যাংক একই ধরনের নিয়ম ও নীতি অনুসরণ করে থাকে।
জাইকার ঢাকা কার্যালয় থেকে গতকাল পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া দুঃখজনক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সহ-অর্থায়নকারী অন্যান্য সংস্থার অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জাইকার করণীয় জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। তবে এ বিষয়ে জাইকা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি ডলার, জাইকা ৪০ কোটি ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছিল। গত বছরের এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে আলাদাভাবে চারটি সংস্থার সঙ্গে সরকার ঋণচুক্তি সই করে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত ও সন্তোষজনক ছিল না যুক্তি তুলে শনিবার বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। সংস্থাটির এ সিদ্ধান্তকে অসম্মানজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও রহস্যজনক বলে মন্তব্য করে এটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এডিবির ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা গোবিন্দ বার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা অর্থ প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা দিইনি। তবে যৌথ অর্থায়নের চুক্তির শর্ত অনুযায়ীই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন সংক্রান্ত চুক্তির কার্যকারিতা হারিয়েছে।'
আইডিবির বিষয়ে ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার সঙ্গে করা ঋণচুক্তি এখনো কার্যকর হয়নি। তাই তাদের অর্থ বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু আইডিবির ঋণচুক্তি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। তাই আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল হয়নি। তবে তাদের প্রতিশ্রুত ১৪ কোটি ডলার খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.