বিএনপির অভিমত-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বিশ্বব্যাংকের অর্থ মিলতে পারে

ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে একগুঁয়েমি এবং দুর্নীতির পথ পরিহার করে পদ্মা সেতু তৈরিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বিশ্বব্যাংকের অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণের সুযোগ মিলতে পারে।


তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের বাতিল করা চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করে তাদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবিত শর্তের চেয়ে কঠিন বা বিরূপ শর্ত নিয়ে বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হলে বিএনপি তা মানবে না। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি তা বাতিল করবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এম কে আনোয়ার এ কথা বলেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
লিখিত বক্তব্যে এম কে আনোয়ার সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বব্যাংক সরকারকে এই সার্টিফিকেট দিয়েছে। দুর্নীতির দায়ে সরকারের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিশ্বব্যাংক শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তাদের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প, উন্নয়ন সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরাও এ দ্বারা প্রভাবিত হবে। একই সঙ্গে তাদের সহায়তায় নির্মিতব্য প্রকল্পগুলোতে অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টিও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
সরকারকে পরামর্শ দিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, 'অপেক্ষাকৃত কঠিন শর্তে বিকল্প অর্থায়নের সন্ধান না করে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে না ফেলে বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। বিশ্বব্যাংকের বাতিল করা চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ এখনো রয়েছে।'
এম কে আনোয়ার বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তার সুদ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য। কিন্তু অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ নিলে সুদের হার ৬ শতাংশের কম হবে না। নির্মাণ ব্যয়ও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। আর বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়া হলে ব্যয় চার গুণ বাড়বে। এতে সুদ-আসল পরিশোধের দায় জনগণকে বহন করতে হবে এবং তা দেশে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সংকট তৈরি করবে। বাণিজ্যিকভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে বাংলাদেশ আরো ৫০ গুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন এম কে আনোয়ার। দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত বলে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করছেন। তিনি বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কয়েক ব্যক্তির উগ্র অর্থ লালসার শিকার হয়েছে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের মান-মর্যাদা। এটি সম্পূর্ণ জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ও কলঙ্কজনক।
এক প্রশ্নের জবাবে এম কে আনোয়ার বলেন, 'সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা যা বলছেন, তা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ বলছেন, এটি বিশ্বব্যাংকের মত নয়, সাবেক প্রধানের মতামত। আবার বলছেন, এটি তাঁর ব্যক্তিগত মত। যোগাযোগমন্ত্রী বলছেন, চমক দেখাবেন। আজকের প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদ গঠনের পর থেকেই আমাদের চমক দেখাচ্ছেন। শেয়ারবাজার লুটপাট করে চমক দেখিয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আরেকটি চমক। সাংবাদিক হত্যাও চমক। আরো আছে কুইক রেন্টালের চমক, দুর্নীতিবাজদের রক্ষার চমক। সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা ঠিক নয়।'
বিশ্বব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনৈতিক বা ড. ইউনূসের ইস্যু জড়িত নয় দাবি করে এম কে আনোয়ার বলেন, বিশ্বব্যাংক সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ তুলেছে। তাদের অভিযোগ মূলত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, তাঁর মালিকানাধীন সাকোর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সরকার ইচ্ছা করলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করলে উদ্ভূত সমস্যার হয়তো সমাধান সম্ভব।
এক প্রশ্নের জবাবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির সময় দুর্নীতির দায়ে মোশাররফ হোসেন পদত্যাপ করেছেন। কিন্তু এখন আবুল হোসেনকে রক্ষায় এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, বিশেষ কারণেই তাঁদের রক্ষার চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, মুশফিকুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.