নির্বাচন নিয়ে ইসি এখনো অন্ধকারে by কাজী হাফিজ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো অন্ধকারে নির্বাচন কমিশন। কবে হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন? বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংসদের মেয়াদ পূরণের আগেই, নাকি পরে? কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে? আদৌ নির্বাচন হবে কি না? এসব প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনাররা এখন সাধারণ মানুষের মতোই অন্ধকারে।


আগের কমিশনের মতো নির্বাচনী কোনো রোডম্যাপ প্রস্তুতের কথাও ভাবছেন না তাঁরা। 'দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়'- এমন মনোভাবে অনেকটা অলস সময় পার করছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেমন কাজ নেই নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও। বিশেষ করে কমিশন সচিবালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তাদের কর্মব্যস্ততা নেই বললেই চলে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি চেয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন সম্প্রতি। সংসদ বিলুপ্ত না হলে সংসদ সদস্যরা নিজেদের পদে বহাল থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। অন্যদিকে নির্বাচনী আইন বা আরপিও অনুসারে এ ধরনের লাভজনক পদে থেকে নির্বাচন করা যায় না বলেই অনেক আইনজ্ঞের ধারণা। সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের লাভজনক পদের বাইরে রাখা হলেও সংসদ সদস্যদের তা রাখা হয়নি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিদ্যমান আরপিও অনুসারে সংসদ সদস্য পদে থেকে কেউ নির্বাচনের জন্য যোগ্য হবেন না।'

কিন্তু আইনের এ সাংঘর্ষিক অবস্থা সম্পর্কে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো বক্তব্য বা উদ্বেগ নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এসব বিষয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে অফিস ছাড়ার আগে কালের কণ্ঠের প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো কিছু করার থাকলে তা করা হবে। আমরা আরপিওতে কী আছে, সংবিধানে কী বলা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখব।' নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা কমিশন এখনো নেয়নি। তবে আগের কমিশনের রেখে যাওয়া একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমাদের হাতে রয়েছে।'
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, 'আগামী সংসদ নির্বাচন কী ধরনের সরকারের অধীনে হবে, সে বিষয়টি আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।'
এর আগে গতকাল দুপুরে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, কমিশন এ বছরই উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনসহ শূন্য আসনগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। আর এ মাসে আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজে হাত দেওয়া হবে।

সংবিধান ও জাতীয় সংসদের মেয়াদ অনুসারে নির্বাচনের সময় রয়েছে দেড় বছরের কাছাকাছি। ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন আগের নির্বাচন কমিশন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন। ওই রোডম্যাপ সে সময় দেশে নির্বাচন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে অনেকটাই আশার আলো জ্বালায়। ওই সময় থেকে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনী আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটায় আগের নির্বাচন কমিশন।

এদিকে আগের কমিশনের পরিকল্পনা ছিল, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে ইচ্ছুক- এমন নতুন রাজনৈতিক দলকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নিবন্ধিত হওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন সে পরিকল্পনা অনুসরণের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি।
বেশ কিছু আইন সংস্কার করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন তথা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ থেমে গেছে। ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন আগের নির্বাচন কমিশন তিন মাস আগে তাঁদের বিদায়ের সময় এসব প্রস্তাব সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তাঁদের মতামত নেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় ওই সব সংস্কার প্রস্তাব কমিশনে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখনো সংস্কার প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে মতামত দেওয়ার সময় পায়নি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান কর্মতৎপরতা সম্পর্কে কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোটার তালিকা সঠিকভাবে হালনাগাদ করাকেই কমিশন এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.