চরাচর-সংকটে সুন্দরবন by আজিজুর রহমান

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার সৃষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত বদ্বীপের সাগরপ্রান্তে অবস্থিত আশ্চর্য সুন্দর বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। পাঁচ হাজার ৩০০ বছরের প্রাচীন এ বনভূমি বাংলাদেশ ও ভারতের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।


বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন ও ক্ষিপ্র ও মাংসাশী প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল হচ্ছে এই সুন্দরবন।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ছয় হাজার ১৭ কিলোমিটারজুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। যা মোট আয়তনের ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং দেশের সমগ্র বনভূমির ৪৪ শতাংশ। সুন্দরবনের স্থলভাগের পরিমাণ হচ্ছে চার হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এবং জলাভূমির পরিমাণ হচ্ছে এক হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ বনের প্রায় ৭০ ভাগ স্থল এবং ৩০ ভাগ জল বা নদী-খাল ইত্যাদি। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ নদী-খাল-নালা রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে বড় নদী হচ্ছে পশুর। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নদ-নদী হচ্ছে_বলেশ্বর, শিবসা, ভোলা, আঙ্গার, পাঙ্গাশিয়া, হরডাঙ্গা, ভদ্রা, কালিন্দী, আন্ধারমানিক, রায়মঙ্গল, কপোতাক্ষ, কয়রা, মালঞ্চ, শেলা ইত্যাদি। সুন্দরবনের ৬২ শতাংশই বাংলাদেশে অবস্থিত। অবশিষ্ট ৩৮ শতাংশ ভারতে।
জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সমাহার এই সুন্দরবন। প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষ, উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম, ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩২৫ প্রজাতির পাখি, আট প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির মৎস্যসম্পদ নিয়ে সমৃদ্ধ এ বনাঞ্চল। গঙ্গা নদীবাহিত পলি ও মিঠাপানির সঙ্গে সমুদ্রের নোনাপানির সংমিশ্রণে সুন্দরবনে বিশেষ ধরনের নানা বৃক্ষের উদ্ভব ঘটেছে। দক্ষিণের সমুদ্র থেকে আসা লবণাক্ত পানি, পানির উষ্ণতা আর উত্তর থেকে আসা মিঠাপানির তাপমাত্রা এবং পলি মিলে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যে জলপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তা বিভিন্ন ধরনের খাড়ির মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, কুমির, হাঙ্গর, শুশুকসহ জলজ জীববৈচিত্র্যের জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ। এ ধরনের বিশেষত্ব এখানেই। ১৮৭৮ সাল থেকে সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত। এ বনটি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ঝঞ্ঝার তীব্র আঘাত থেকে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে আমাদের উপকূলীয় জনপদকে রক্ষা করে আসছে। দেশের বনজ ও প্রাণিসমাজেরও এক বিশাল উৎস সুন্দরবন। একই সঙ্গে আমাদের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থও জড়িত রয়েছে এ বনের সঙ্গে। এ বনটি বিশ্বে গর্ব করার মতো একটি সম্পদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা অর্থাৎ ইউনেসকোর বিশ্বসম্পদ ও ঐতিহ্য কমিটি ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে ৫২২তম বিশ্বসম্পদ ও ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.