দুদককে ক্ষমতাহীন করা ঠিক হবে না-ইইউর উদ্বেগ

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তা আঁচ করা যায় নেতা-নেত্রীদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে। ক্ষমতাসীনেরা যেমন বিরোধী দলের সব কাজে ষড়যন্ত্র খুঁজছে, তেমনি বিরোধী দলও ১৬ মাস না যেতেই সরকার পতনের হুংকার ছাড়ছে। এতে দেশবাসী তো বটেই, বিদেশি কূটনীতিকেরাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।


ইউরোপ দিবস উপলক্ষে গত শনিবার ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত স্টিফেন ফ্রোইনের কণ্ঠেও সেই উদ্বেগই প্রতিধ্বনিত হলো। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির স্বার্থে জাতীয় সংসদকে কার্যকর করা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার যে তাগিদ দিয়েছেন, তাও বিবেচনার দাবি রাখে।
দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশিদের অযাচিত উপদেশ কাম্য নয়। আবার এও ঠিক যে, সরকার ও বিরোধী দলের সংঘাতপূর্ণ অবস্থানই তাদের নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে কাজ করলে বিদেশিদের হরহামেশা উপদেশ শুনতে হয় না, দেশবাসীকেও নিয়ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় না। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের সূচনাটি ভালোই ছিল বলা যায়। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিরোধী দলের যোগদান এবং দ্রুততম সময়ে সংসদীয় কমিটিগুলো গঠন ছিল ইতিবাচক ঘটনা। কিন্তু তার পরই তুচ্ছ কারণে বিরোধী দল সংসদ বর্জন করতে থাকে। দীর্ঘ বিরতির পর গত অধিবেশনে তারা সংসদে ফিরে এলেও আগামী বাজেট অধিবেশনে যোগ দেবে কি না, সে ব্যাপারেও সংশয় রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ইইউর রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করি। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাও অনুধাবনযোগ্য। সংসদে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হলে বিরোধী দল অভিযোগ করার সুযোগ পাবে না। তারা রাজপথ গরম করতে পারবে না।
সেই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিচার বিভাগ সম্পর্কে ইইউর রাষ্ট্রদূতের সতর্কবাণীও আমলে নেওয়া প্রয়োজন। দুর্নীতি যে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রধান বাধা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ধারণাসূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের অবস্থান থেকে সরে এলেও সরকারি খাতে দুর্নীতি খুব কমেছে বলা যাবে না। দুর্ভাগ্যজনক যে, রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে বুলন্দ আওয়াজ তুলে ক্ষমতায় এলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার বদলে এর হাত-পা বেঁধে ফেলা হবে আত্মঘাতী। এ ব্যাপারে যে শুধু বিদেশিরাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা-ই নয়, দুদকের চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়াও ছিল নেতিবাচক। দুদককে দুর্বল করে দুর্নীতি কমানো যাবে না। আর দুর্নীতি কমাতে না পারলে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি সফল হবে না, দেশের অগ্রগতিও কঠিন হয়ে পড়বে। দুর্নীতি বন্ধে সরকারের প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হোক, সেটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.