সরল গরল-একটি চাঞ্চল্যকর শিশুহত্যা মামলার শুনানি by মিজানুর রহমান খান

একটি সবুজ সুপারিগাছ। ছোট্ট অর্ণব গাছটির কচি ডগা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে চেক শার্ট, প্যান্ট। পায়ে স্কুলের জুতো। আমার কাছে অর্ণবের এটাই পরিচয়। ৫ মে ছিল তার জন্মদিন। টিয়া পাখি দেওয়ার নাম করে অর্ণবকে ডেকে নিয়েছিল মুকুল গাজী। অর্ণব ফিরেছিল লাশ হয়ে। তখন তার বয়স ছিল নয় বছর। ক্লাসে প্রথম হতো সে।


সাতক্ষীরার চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রাম। এর বাঁশবাগানের নালায় পড়ে ছিল অর্ণব দাসের লাশ। প্রতিহিংসায় ক্ষতবিক্ষত। তার ডান হাত কাঁধ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দুই চোখ ও চোয়াল উপড়ানো। মাথার খুলি ও দাঁতগুলো ভাঙা। দুই পায়ের রগ কাটা। তার ডান হাতটি আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আমি অর্ণবকে দেখেছি ছবিতে। ১৮ জুন হবে তার গুপ্তহত্যার ১০ বছর পূর্তি। হাইকোর্টে এখন শুধু ২০০৫ সালের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। হাইকোর্ট ক্রমানুসারে ডেথ রেফারেন্স বা হত্যা মামলার আপিল শুনে থাকেন। প্রধান বিচারপতির আদেশ, হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চে গ্রহণযোগ্য মৃত্যুদণ্ডাদেশ কনফারমেশনের রেফারেন্স’ শুনবেন। এখানে অগ্রাধিকার মানে হলো, ২০০৫ সালের মামলা এড়িয়ে এর পরের মামলার শুনানি করা যাবে না। অনেক আইনজীবী অবশ্য কদাচিৎ এমন উদ্যোগ নেন। দু-একটি ক্ষেত্রে হাইকোর্ট তা মঞ্জুরও করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে নিয়ম ভেঙে পেপারবুক তৈরি হয়েছে বলে জানা যায় না।
২৪ নভেম্বর ২০০৯। বিচারপতি মো. আরায়েস উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ তখন মৃত্যুদণ্ডাদেশ শুনতেন। এই বিচারক ইতিমধ্যে অবসরেও গেছেন। ২৪ নভেম্বরে তিনি একটি বিরল আদেশ দেন। এতে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্ণব হত্যা মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।
অর্ণব হত্যা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। অর্ণব হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিরাট গণমিছিল বেরিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিম এলাকা সফর করেছিলেন। আসামিদের প্রতি পক্ষপাত দেখানোর দায়ে ওসিসহ তিন কর্তাকে বরখাস্ত করেছিলেন। শিশু অর্ণবকে কেন খুন হতে হলো?
একটি ভাষ্যমতে, অর্ণবের বাবা ভূমিদস্যুদের চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সাতক্ষীরার এ অঞ্চলটি সাদা সোনার জন্য প্রসিদ্ধ। অনেক রাঘববোয়াল। শত শত বিঘা খাসজমিতে তাঁরা চিংড়িঘের করেন। অর্ণবেরা সম্পন্ন গেরস্থ। তাঁর বাবা জমিজমা ভালো বোঝেন। ওই খাসজমি উদ্ধারে ভূমিহীনদের দিয়ে তিনি মামলা করান। এ ছাড়া আছে একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনসংশ্লিষ্ট তিক্ততা। অর্ণবের বড় চাচা ১৯৯৬ সালে ইউপি চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ান। অল্প ভোটে হারেন। সেবার চেয়ারম্যান হন মতিয়ার রহমান। তিনি চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
অর্ণব হত্যা মামলায় খলিলুর রহমান ওরফে খলিল ও গোলাম ফারুকের মৃত্যুদণ্ড হয়। এরাই এখন জেলে। আরও চারজন পান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তাঁরা হলেন উল্লিখিত আওয়ামী লীগের নেতা মতিয়ার রহমান, আবদুস সাত্তার সর্দার, সুশীল কুমার রায় ও মুকুল গাজী। প্রায় ১৬ বছরের মুকুল (চুরি ও বালিকার শ্লীলতাহানির দায়ে কৈশোরেই কুখ্যাত) টিয়া পাখি দেওয়ার কথা বলে অর্ণবকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। মুকুল ধরা পড়ে। জামিনে গিয়ে রায় ঘোষণার আগেই পালিয়ে যায়। ২০০১ সালের জুলাইয়ের চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন আটজন। ২৮ নভেম্বর ২০০৭ রায় হয়। দুজন খালাস পান।
এ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তিনজন কীভাবে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান এবং কীভাবে পেপারবুক তৈরি হলো, পাঠক সেটা লক্ষ করুন। ১ জুলাই ২০০৮। বিচারপতি মো. আরায়েস উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আবদুস সাত্তার সর্দারকে জামিন দেন।
নব্বইয়ের দশকেও পাঁচ-সাত বছরের বেশি কারও জেল হলে আইনজীবীরা তাঁদের জন্য জামিন চাইতে দ্বিধায় থাকতেন। দীর্ঘ সময় বন্দিদশায় না থাকলে তাঁদের জন্য পারতপক্ষে জামিন চাওয়াই হতো না। এখন রীতি আগেরটাই আছে। কিন্তু অনুশীলনে বদল ঘটেছে ভীষণ রকম। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের গণজামিন দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিচার বিভাগ যদিও পৃথক হয়েছে।
বিচারক আরায়েস উদ্দিন অর্ণব হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সাত মাসের মাথায় প্রথমে ওই সাত্তারকে জামিন দেন। এবং আশ্চর্যজনকভাবে এ ঘটনার চার মাসের বিরতিতে একই বিচারকের আদেশেই জামিন পান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং কারাগারে থাকা অন্য দুই আসামি মতিয়ার রহমান ও সুশীল কুমার রায়।
বিচারক আরায়েস উদ্দিনের বেঞ্চে দুটি জামিন আদেশে তিনজনকে মুক্ত করার পর আসামিদের বিচক্ষণ আইনজীবীরা তৃতীয়বারের মতো তাঁর কাছেই প্রতিকারের জন্য ধরনা দেন। তাঁরা আসামিদের আপিল আবেদনের চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেন। বিচারক আরায়েস উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পেপারবুক দাখিলের নির্দেশ দেন। বিদ্যুৎগতিতে তা তামিল করা হয়। বিজি প্রেস ছেপে দেয় কাঙ্ক্ষিত পেপারবুক। এভাবে পেপারবুক তৈরির বিষয়ে একই ধরনের কিছু আদেশের কথা আমরা জানি। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা মান্য করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানিতেও ক্রমিকের ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব হয়নি।
অর্ণব হত্যা মামলার ঘটনাপ্রবাহের পেপারবুক পর্যায় থেকে আমি নজর রাখি। ‘আপনারা এত দ্রুত পেপারবুক তৈরি করলেন, অন্য ক্ষেত্রে তো করেন না’, কর্মকর্তাদের কাছে এ প্রশ্ন করে কোনো সদুত্তর পাই না। আমাকে বলা হয়, এর সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা রয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ধারণা পান, বিচারক আরায়েস উদ্দিন অবসরে যাওয়ার আগেই তাঁরা এর শুনানি শেষ করতে আগ্রহী। ১৮ মাসে বিচারক আরায়েস উদ্দিনের বেঞ্চ তিনবার ভেঙে যায়। যাবজ্জীবন দণ্ডিত তিন ব্যক্তি দুই দফায় জামিন নেন। এবং সবার মূল আপিলগুলোর চূড়ান্ত শুনানি শুধু তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেই সম্পন্ন করার প্রয়াসও আমরা দেখতে পাই।
মধ্য ডিসেম্বরে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। কী কারণে দুই বছর ডিঙিয়ে অর্ণব হত্যা মামলার শুনানি ঠিক হতে পারল? ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদউল্লাহ কিসলু বলেন, ‘আমরা যথারীতি এর বিরোধিতা করেছি।’ এখন ২০০৫ সালের মামলার শুনানি চলছে। ২০০৭ সালের মামলার শুনানি করতে রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত নয়। প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহ্বুবে আলমও এ কথায় সায় দেন।
১৭ ডিসেম্বর ২০০৯। বিচারপতি মো. আরায়েস উদ্দিনের বেঞ্চ। এর দৈনিক কার্যতালিকায় অর্ণব হত্যা মামলা ১ নম্বরে উল্লিখিত হিসেবে মুদ্রিত। এদিন উভয় পক্ষের শুনানি কিংবা রাষ্ট্রপক্ষের প্রবল বিরোধিতায় আদালত মামলাটি না শোনার সিদ্ধান্ত নেন। মামলাটি আউট অব লিস্ট হয়।
এরপর ধারণা হয়েছিল, অর্ণব হত্যা মামলা প্রধান বিচারপতির শর্তমতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই শুনানির জন্য আসবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির একটি লিখিত আদেশের ফটোকপি পাই। এতে লেখা আছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ কনফারমেশন পেপারবুক হবে ক্রমিকানুসারে। তবে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে আদালতের আদেশের কথাও আছে। গত ৪ মার্চ অর্ণব হত্যা মামলাটি নতুন একটি বেঞ্চে হঠাৎ শুনানির জন্য আসে। এবারের পর্বে আরও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে।
বিচারক মাশুক হোসেন আহমদ ও বিচারক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। গত ২১ মার্চে শুনানির জন্য এ বেঞ্চে মামলাটি আবার আসে। এদিনই খবর পাই, সুপ্রিম কোর্ট বারের তৎকালীন সভাপতি এ এফ এম মেসবাহউদ্দিন আহমেদ (সাবেক অতিরিক্ত বিচারক) পড়ন্ত বিকেলে আদালতে হাজির হন। তিনি মামলাটি আংশিক শ্রুত হিসেবে গণ্য করার আবেদন জানান এবং তা মঞ্জুর হয়।
উভয় পক্ষের অংশগ্রহণে শুনানি হয়। কোনো মামলার শুনানি শুরুর পর তা শেষ না হলে তা ‘আংশিক শ্রুত’ হিসেবে গণ্য হয়। কোনো মামলা একবার আংশিক শ্রুত হিসেবে চিহ্নিত হলে একটা বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। ওই বেঞ্চ ভেঙে গেলেও সংশ্লিষ্ট বিচারকদেরই সে মামলায় রায় দেওয়ার অধিকার জন্মায়।
২২ মার্চে জ্যেষ্ঠ আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়। এদিনের কার্যতালিকা দেখে অবাক হই। কারণ আংশিক শ্রুত হিসেবে অর্ণব হত্যা মামলাটি ছাপা হয়েছে। আমি কর্মকর্তাদের বলি, ‘ডিসেম্বরে বাদ দেওয়া এই মামলার শুনানি আদালত নতুন করে চাইলে নিশ্চয়ই হতে পারে। কিন্তু যার কোনো শুনানি হলো না, তা কী করে আংশিক শ্রুত বলে গণ্য হতে পারে?’ পরে শুনেছি, আইন কর্মকর্তারা বিষয়টির প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পরদিন দেখি, দৈনিক কার্যতালিকায় আংশিক শ্রুত কথাটির বিলোপ ঘটেছে। এর লিখিত কারণ নথিতে থাকাটা স্বাভাবিক। কেন ও কীভাবে আংশিক শ্রুত হলো। কেনই বা ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তা মুছে গেল? আমরা এখনো তা জানতে পারিনি।
তবে সেই থেকে প্রতিদিনের কার্যতালিকায় অর্ণব হত্যা মামলাটি মুদ্রিত হচ্ছে। গতকালও দেখেছি। গত ১৮ এপ্রিল নতুন অতিরিক্ত বিচারকেরা শপথ নেন। বেঞ্চ ভাঙে। বিচারক মাশুক আহমেদের সঙ্গে কনিষ্ঠ বিচারক হিসেবে এসেছেন অতিরিক্ত বিচারক আবদুর রব। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ এক সপ্তাহ সময় নেয়। যদিও এ বেঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তারা আমাকে জোর দিয়ে বলেন, তাঁরা তাঁদের নীতিগত অবস্থান থেকে সরে যাননি। তাঁরা এখনো মনে করেন, ২০০৫ ও ২০০৬ সালের সব ডেথ রেফারেন্স শেষ হলেই তবে ২০০৭ সালের মামলা শুনানির জন্য আসতে পারে। আইন কর্মকর্তারা এ কথা অবশ্য আদালতেও বারবার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তাঁরা ১৮ এপ্রিল হঠাৎ আদালতের কাছ থেকে এক সপ্তাহ সময় নেন। তাই প্রকারান্তরে মামলা শুনানির প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়লেন কি না, সেটা আমার মনে কাঁটার মতো বিঁধছে।
অর্ণব হত্যা মামলার দণ্ডিতদের মধ্যে একটি পারিবারিক, তথাকথিত রাজনৈতিক এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রভাবশালী যোগসূত্র দেখতে পাই।
প্রথমত, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম ফারুক হলেন সেই গোলাম ফারুক, যিনি জাতীয়তাবাদী একজন দাপুটে ছাত্রনেতা। খুলনার বিএল কলেজের ছাত্রদলের সাবেক নেতা। ক্যাম্পাসে শিবির কর্মী খুন ও পৃথক একটি অগ্নিসংযোগের মামলার তিনি আসামি ছিলেন। অন্যদিকে অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খলিল হলেন গোলাম ফারুকের চাচাতো ভাই। খলিল আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও বর্তমানে জামিনে থাকা সাত্তারের ছেলে।
দ্বিতীয়ত, ৩ এপ্রিল ২০০৬ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘মূলত রাজনৈতিক কারণে হয়রানিমূলকভাবে’ দায়ের করা কালীগঞ্জ থানার অর্ণব হত্যা মামলা থেকে সাত্তার ও খলিলের নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। আওয়ামী লীগের নেতা মতিয়ার তখন এ সুযোগ পাননি।
তৃতীয়ত, ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশে বিচার ঠেকে থাকে। অভিযুক্ত ও দণ্ডিত ব্যক্তিদের আইনজীবীদের বুলি একই। মামলার যেসব দুর্বলতার কথা বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জামিন নেন, মামলার বিচার স্থগিত করান, দণ্ডিত হয়েও তাঁরা সেই একই কথা বলে জামিন নিয়েছেন। প্রায় একই যুক্তিতে পেপারবুক করান। জরুরি শুনানি চান। অথচ এসব কারণ হাইকোর্ট অনেক আগেই অগ্রাহ্য করেন। ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিচার স্থগিত রাখার আদেশ বাতিল করেন। এর ৯০ দিনের মধ্যে ওই দুজনের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জোট সরকার। আমরা এই সাত্তার ও খলিলের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দেখেছি প্রয়াত বার সভাপতি ওজায়ের ফারুক ও নিজামুল হক নাসিমকে। বিচারপতি নিজামুল হক এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। এরপর এক-এগারো। ক্ষমতার পালাবদল ঘটল। বিচারিক আদালত ২০০৬ সালের ২০ নভেম্বর দুজনের নাম প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করেন। জরুরি অবস্থায় হতভাগ্য অর্ণব পরিবারের কাছে এ রায় ছিল বিরাট সান্ত্বনা।
চতুর্থত, বড় দুই দলের হেভিওয়েট আইনজীবী প্যানেলের যৌথ চেষ্টা। ধারণা করা যায়, চিংড়িঘেরের ধনবান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হিসাব কষেই বড় দুই দলকে একমঞ্চে এনেছেন। আরও একটি বিষয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নির্বাচিত বার সভাপতিকে সব সময় পছন্দ করেছেন। ২০০৮ সালের জুলাই। দণ্ডিত ওই সাত্তারের জন্য জামিন নেন টি এইচ খান (বিএনপির চেয়ারপারসনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা)। অবশ্য এর ঠিক চার মাস পর অক্টোবরে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি মতিয়ার ও সুশীলের জামিন নেন তৎকালীন বার সভাপতি শফিক আহমেদ (বর্তমানে আইনমন্ত্রী) ও হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী (বর্তমানে বিচারপতি)। অর্ণব হত্যা মামলায় দণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে এরপর জেলের বাইরে রইল বাকি দুই। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের জন্য এরপর এলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের আওয়ামীপন্থী সভাপতি এ এফ এম মেসবাহউদ্দিন। তবে তিনি একা নন। তাঁর সঙ্গে সক্রিয় আছেন সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান চেম্বারও।
আমরা অর্ণব হত্যা মামলার স্বাভাবিক শুনানি চাই। অর্ণবের চাচা নিশান চন্দ্র দাস মামলার বাদী। তিনি ২০০৩ সালে মামলার তদবির করতে ঢাকায় এসে চাপাতির কোপ খেয়েছেন। সবশেষে আমাদের শ্রদ্ধেয় কবি বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কথায় বলি: ‘খুন নিমখুন গুমখুন সব খুনই/ অপরাধ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই/ রাষ্ট্র বাদী হয়ে তার কিনারা করবেই-/ না পারলে, তার মর্যাদা হবে ক্ষুণ্ন/ প্রজা ভাববে বৃথাই রবরবা, ক্ষমতা যে তার শূন্য’।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.