মজিনা বললেন আমি হরতাল ঘৃণা করি

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বলেছেন, তিনি হরতাল ঘৃণা করেন। যেকোনো পরিস্থিতিতেই, যেকোনোভাবেই হরতাল দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকার গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।


সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হতে পারে বলে মজিনা আশা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, 'কবে কখন কিভাবে ঐকমত্য হবে, তা জানি না, যত শিগগির হয় ততই মঙ্গল।'
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা সেখানে বিআইপিএসএসের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামানের বিভিন্ন লিখিত প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর মজিনা আগত অতিথিদের করা কয়েকটি প্রশ্নেরও জবাব দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মজিনা হরতালের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, 'আই হেট হরতাল।' তিনি বলেন, 'হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার মতো কোনো কারণ আমি দেখি না।'
বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে মজিনা বলেন, 'বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারে পরিণত হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনসহ যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফর থেকেই মনে হয়, এখানে কিছু ঘটছে।'
মজিনা বলেন, 'এ দেশে গণতন্ত্র থাকা উচিত। কারণ এ দেশের সংস্কৃতিতে গণতন্ত্র রয়েছে। বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক কোনো শাসন স্থায়ী হতে পারেনি।'
দুই দলের সংলাপ নিয়ে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আহ্বানের পুনরুল্লেখ করে বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, বড় দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপায় নিয়ে ঐকমত্য হতে পারে।' তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে মজিনা বলেন, 'একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেকোনো পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ জন্য দলগুলোকেই আলোচনা করে পদ্ধতি বের করতে হবে।'
'গুম' হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মজিনা বলেন, 'হিলারি ক্লিনটন স্পষ্ট করে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীরই দায়িত্ব এসবের সমাধান করা।' তিনি জানান, আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, 'আগামী প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে আসবে। গত বছরের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে গেলেও এ বছর নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। এসব নিশ্চয়ই ওই প্রতিবেদনে উঠে আসবে।'
গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবারকেও সহযোগিতা করছে। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের ছয়টি কারণের কথা উল্লেখ করেন মজিনা। তিনি বলেন, 'প্রথমত বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়ন করছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন। তৃতীয়ত, ১০ হাজার ৫০০-র বেশি সেনা পাঠিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ। চতুর্থত, ৭০০ কোটির এই বিশ্বে কিছুদিন পরই জনসংখ্যা ৯০০ কোটি পেরিয়ে যাবে, এই অবস্থায় বাংলাদেশ তার নিজেদের খাবার নিজেরাই উৎপন্ন করছে। পঞ্চমত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ষষ্ঠত, মানবাধিকার ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে সহায়তা বাড়িয়ে চলেছে।'
মজিনা বলেন, 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি উন্নত ও আধুনিক সেনাবাহিনী হিসেবে দেখতে চাওয়া শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বরং এটা বিশ্বশান্তিসহ সামগ্রিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেই প্রয়োজন।' তিনি বলেন, 'হিলারিসহ অন্যরা কেন এসেছিলেন, কারণ সব মিলিয়ে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে।'
টিকফা চুক্তি প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, চার বছর ধরে এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি। টিকফা চুক্তি হলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের একটি পথ হবে।
সমুদ্রসীমা সম্পর্কে মজিনা বলেন, 'বাংলাদেশের নিজেদের সমুদ্র সম্পদ নিজেরাই রক্ষা করতে সক্ষম হবে, এটাই যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়।' তিনি বলেন, 'এ দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর দক্ষতার সঙ্গে নির্মিত হবে এবং পরিচালিত হবে, সেটাই আমরা চাই। এ ধরনের একটি প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রও পাশে থাকতে চায়।' সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

No comments

Powered by Blogger.