বাপেক্সের মাধ্যমেই উত্তোলন করা হোক-তেলক্ষেত্রের সন্ধান

কৈলাসটিলা ও হরিপুরে তেল পাওয়ার সম্ভাবনার কথা আগেই অনুমান করা হয়েছিল। গত রোববার সরকার এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক যে ঘোষণা দিয়েছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এ দুটি গ্যাসক্ষেত্রকে তেলক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা দেয়।


এর আগে তেলের সন্ধান পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক তেলক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি সত্যিই এক বড় সুসংবাদ।
বাংলাদেশে যে জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়, এর পুরোটাই বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করতে হয়। সরকারকে এ খাতে মোটা অঙ্কের ভর্তুকিও দিতে হয়। এ দুটি ক্ষেত্র থেকে তেল ওঠানো গেলে এই চাপ অনেকটা কমবে। বলা যায়, জ্বালানিসংকটে থাকা বাংলাদেশের জন্য এই তেলক্ষেত্র দুটি বড় স্বস্তি এনে দিতে পারে।
এর পাশাপাশি আরও যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, পেট্রোবাংলার অধীন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি (বাপেক্স) পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপের ফল হিসেবে এ দুটিকে তেলক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের এই সাফল্য সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক। বাপেক্সকে আমাদের অভিনন্দন। দীর্ঘদিন ধরেই এ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং অর্থের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি রয়েছে দেশের বিভিন্ন সচেতন মহল থেকে। বাপেক্সের এই সাফল্য এ দাবির যৌক্তিকতাকে আরও জোরালো করল। আমরা আশা করব, এই প্রতিষ্ঠানের শক্তি-সামর্থ্য বাড়াতে সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে।
পেট্রোবাংলার তরফ থেকে এ দুটি তেলক্ষেত্রে তেলের মজুদ ও উত্তোলনযোগ্য তেলের পরিমাণ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, কৈলাসটিলা থেকে চার কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল ও হরিপুর থেকে এক কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন সম্ভব। বর্তমান বাজারমূল্যে এই তেলের দাম প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য কূপ খননের আগে মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলার পক্ষে নন। ফলে, এখন দ্রুত কূপ খনন করে তেল উত্তোলনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে এ ক্ষেত্রগুলো থেকে তেল উত্তোলন শুরু হবে। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে সরকার যথাযথ ও প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করবে। তবে কীভাবে ও কারা উত্তোলন করবে, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে কূপ খনন করার দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, দিলে কোন শর্তে—এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হতে হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের মাধ্যমে যদি উত্তোলন করা যায়, নিঃসন্দেহে সেটাই হবে উত্তম বিকল্প। এ ক্ষেত্রে বাপেক্সের যদি কোনো প্রযুক্তিগত বা মানবসম্পদগত ঘাটতি থাকে, তা পূরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নেওয়া যেতে পারে।
কৈলাসটিলা ও হরিপুরের তেল দেশ ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হোক, সেটাই আমাদের চাওয়া।

No comments

Powered by Blogger.