শিশুশ্রম বন্ধ হোক by ছাবি্বর আহমদ অপু

আজ ১২ জুন, আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। শিশুশ্রম আমাদের ক্ষেত্রে যে সহনীয় হয়ে উঠেছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যে কোমল হাতে বই-খাতা থাকার কথা সে হাতে তারা হাতুড়ি তুলে নিচ্ছে। ইট ভাঙছে, শ্রমিক হয়ে কাজ করছে। দেশে এক কোটি শিশু কায়িক শ্রমে নিয়োজিত।


কঠিন দরিদ্রের কারণে দেশের হাজার হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। শিশুরা অস্বাস্থ্যকর ও প্রাণ সংকটাপন্ন পরিবেশে কাজ করে। তারা সেখানে নানা ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম যেমন উটের জকি, অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তি, চুরি, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধামূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে অস্কার পুরস্কার বিজয়ী চলচ্ছিত্র 'স্লামডগ মিলিয়নিয়ার' অনেকের দেখার কথা। সেখানে শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে তাদের অঙ্গহানি ঘটিয়ে রাস্তায় উপার্জনে নামিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দর্শক মহলে করুণ আবেদন সৃষ্টি করেছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশেও এমন কাহিনীর আমদানি ঘটছে। তবে সিনেমায় নয়, একেবারে বাস্তবে।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, ঢাকায় শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এমনকি পাঁচ-ছয় বছর বয়সী শিশুদের বিভিন্ন কঠিন পরিশ্রমের কাজ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ শিশুশ্রমিক আছে, যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ মারাত্মক শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত।
শিশুশ্রম প্রতিরোধ বিষয়ে এখন সব মহলে ভাবনাচিন্তা চলছে। সে সঙ্গে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার রক্ষার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৫৪ সাল থেকে সারাবিশ্বে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ এই শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী প্রথম ২২টি দেশের অন্যতম। তাছাড়া জাতিসংঘ ও আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থার বিভিন্ন কনভেনশনে বাংলাদেশ অনেক আগেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে দেশের বেশকিছু আইন কঠিনভাবে শিশুশ্রমকে বাধাদান করে। বাংলাদেশের সংবিধানে ২৮ অনুচ্ছেদে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হলেও কঠিন সত্য হলো, বাংলাদেশে ১৪ বছরের নিচে শিশুদের শ্রম অবৈধ নয়। ফলে শিশুশ্রমের ধাপটি সমানতালে চলছে শিল্প কারখানায়, গার্মেন্টে এমনকি রিকশাচালকদের মধ্যেও। অথচ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৫৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ১২ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নিয়োগ করা যাবে না। ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কলকারখানায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ১৫ বছরের নিচের কোনো শিশুকে পরিবহন খাতে কাজ দেওয়া যাবে না। ১৬ বছরের নিচে সাধারণ কারাগারে রাখা যাবে না কিংবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। এ নীতিটি বাস্তবসম্মত সন্দেহ নেই। তবে বাস্তবতার রূপ আলাদা। দেশে এখনও দারিদ্র্যের ভয়াবহতার মাত্রা ব্যাপক।
শিশুরাই সুশোভিত ও গৌরবময় আগামীর পথনির্দেশক। তাই বাংলাদেশের আইনে শিশুদের যে অধিকার রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য সকলের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীল আচরণ অবশ্যই কাম্য। আমাদের সমাজব্যবস্থা আইনের জটিল পথ তৈরি করলেও নিজের স্বার্থে জিইয়ে রেখেছে শিশুশ্রম। সে সমাজ যদি বদলানো না যায় তবে শিশুশ্রমের কঠিন অভিশাপ থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না। তাই অমানবিক শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে চাই সচেতনতা ও নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধ।
sabbir.mc@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.