হিন্দু বিয়ে নিবন্ধনে আইন করা হচ্ছে-আন্তঃধর্ম বিবাহ আইন নয়

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ নিবন্ধনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। দেশে এ ধরনের আইন প্রণয়নের উদ্যোগ এই প্রথম। খসড়া আইনে নিবন্ধন ব্যবস্থাকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ ইচ্ছা করলে বিয়ে নিবন্ধন করতে পারেন, আবার নাও পারেন।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২'-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে মুসলমানদের মতো হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের জন্যও 'মৌখিকভাবে' দানের (হেবা) দলিল নিবন্ধনের সুযোগ রেখে 'নিবন্ধন আইন (সংশোধন)-২০১২' অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
আন্তঃধর্ম বিবাহসংক্রান্ত কোনো আইন সরকার করবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। পাশাপাশি অর্পিত সম্পত্তির তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের সময়সীমা আরো ১৫০ দিন বাড়িয়ে ৩০০ দিন করা হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তির সময় ১২০ দিন নির্ধারণ করে 'অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০১২'-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন-২০১২
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহব্যবস্থাকে আইনের আওতায় আনতে 'হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন-২০১২' নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে বলে বৈঠক শেষে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, খসড়া আইনটি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হলেও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এটি ঐচ্ছিক থাকবে। কেউ চাইলে বিয়ে নিবন্ধন করতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন।
সচিব বলেন, হিন্দুদের বিয়ে হয় শাস্ত্রমতে। শাস্ত্রমতে হওয়া বিয়ের বৈধতা এতে নিশ্চিত থাকবে। বিদেশে যেতে আগ্রহী দম্পতিদের বিয়েসংক্রান্ত নথিপত্র নিশ্চিত করতে এ আইন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের কোনো সুযোগ নেই। খসড়া আইনেও তেমন কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
উল্লেখ্য, হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে ১৯৫০ সালে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন করা হয়। বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ এই প্রথম।
নিবন্ধন (সংশোধন) আইন-২০১২
মুসলমানদের মতো হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের জন্যও 'মৌখিকভাবে' দানের (হেবা) দলিল নিবন্ধনের সুযোগ রেখে 'নিবন্ধন (সংশোধন) আইন-২০১২' অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
এ আইন পাস হলে মাত্র ১০০ টাকা ফি দিয়ে মৌখিকভাবে দান করা সম্পত্তির দলিল নিবন্ধন করা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
২০০৫ সালে নিবন্ধন আইন সংশোধন করে মুসলমানদের জন্য হেবা করা সম্পত্তির দলিল নিবন্ধনের বিধান করা হয়। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও মৌখিক দানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হলো।
আন্তঃধর্ম বিবাহ আইন করা হবে না
মন্ত্রিসভার বৈঠকে আন্তঃধর্ম বিবাহ আইন প্রণয়নসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নতুন কোনো আইন করা হবে না এবং এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।
সচিব বলেন, যাঁরা কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করেন না, তাঁদের বিয়ের বৈধতার জন্য ১৮৭২ সালের একটি আইন রয়েছে। ওই আইনের আওতায় সম্প্রতি একজন নিবন্ধক নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন
অর্পিত সম্পত্তির তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের সময়সীমা আরো ১৫০ দিন বাড়িয়ে ৩০০ দিন নির্ধারণ করে 'অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০১২'-এর খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অর্পিত সম্পত্তির মালিকানা দাবির প্রামাণিক কাগজপত্র নিয়ে অবমুক্তির আবেদনের সময় গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৫০ দিন এবং সম্পত্তি প্রত্যর্পণের আবেদনের সময় ৯০ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিন করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
উল্লেখ্য, ১৫০ দিনের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির মৌজাভিত্তিক জেলাওয়ারি তালিকা প্রস্তুত করে গেজেট প্রকাশ করার বিধান রেখে অর্পিত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) পাস করে সরকার। বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে 'ক' তফসিলভুক্ত (ইজারা দেওয়া) সম্পত্তির তালিকা প্রকাশ করলেও 'খ' তফসিলভুক্ত (ইজারা না দেওয়া) অর্পিত সম্পত্তির গেজেট প্রকাশ করতে পারেনি ভূমি মন্ত্রণালয়। তাই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০০ দিন করা হয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) আইন
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত, যুগ্ম বিচারিক হাকিম আদালত এবং সহকারী বিচারিক হাকিম আদালত জেলা পর্যায়ের বাইরে স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
'কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট)-২০১২' অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) আইন, ২০১২-এর খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়াটি পাস হলে সরকার জেলা শহরের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরনের আদালত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আদালত প্রতিষ্ঠা করা হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান আইনে জেলা পর্যায়ের বাইরে এ ধরনের আদালত প্রতিষ্ঠার কোনো সুযোগ নেই। খসড়া অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত প্রয়োজনে জেলা শহরের বাইরেও বসতে পারবে।
এ ছাড়া বৈঠকে 'আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) আইন, ২০১২'-এর খসড়া জাতীয় সংসদে তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংসদ অধিবেশন মুলতবি থাকায় এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের বিধান রেখে আইনটি অনুমোদন করা হয়। ইতিমধ্যে আটটি মামলার চারটি নতুন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১২'-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি স্ট্র্যাটেজি) অনুমোদনের জন্য বৈঠকে উপস্থাপন করা হলেও তা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে এটি আবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.