কল্পকথার গল্প-আসুন, গান গাই আর হাঁটি by আলী হাবিব

ঝামেলার অন্ত নেই। কেবল নগরজীবনের কথাই বা বলি কেন? সবখানেই ঝামেলা। সকালবেলা লোডশেডিং মাথায় নিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠা তো প্রায় রুটিন হয়ে গেছে। আবার লোডশেডিংয়ের মধ্যেই রাতে ঘুমোতে যাওয়া। তা বেশ, বাড়িতে থাকার দরকার নেই। বাইরে বেরিয়ে পড়া যাক। বাইরে বেরিয়ে সহজে কোথাও যাওয়ার সুযোগও কম।


রাজধানী ঢাকার কথা ধরলে তো কথাই নেই। জ্যাম শব্দটি এখন আমাদের জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। শুধু কি ঢাকাতেই জ্যাম? ঢাকার বাইরে বের হতে গেলেও তো সেই জ্যামে ঘাম ছুটে যাচ্ছে, কিন্তু জ্যাম ছুটছে না। তা সে চট্টগ্রাম-কুমিল্লার দিকেই যান আর উত্তরবঙ্গের দিকে- জ্যাম নিত্যসঙ্গী। জ্যাম থেকে মুক্তি নেই। এর বাইরে সহজ উপায় কী হতে পারে? হেঁটে চলা। আজকাল হাঁটাহাঁটি বেশ জমে উঠেছে। সকাল-বিকেল নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করেন- এমন অনেককেই পাওয়া যাবে। এখানে-সেখানে সংগঠনও গড়ে উঠেছে। হাঁটলে শরীর ভালো থাকে- এটা বিজ্ঞান বলে। তবে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি হাঁটা নিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য দিয়েছেন। সদাশয় সরকারের জন্যও বিষয়টি একটি বড় সমস্যা সমাধানের উপায় হতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, হাঁটার সময় প্রতি পদে উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে এখন সরবরাহ করতে পারলেই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান অনেকটা হয়ে যাবে। শুধু কি হাঁটাহাঁটি? বিমান ওঠানামার যে শব্দ, সেটা থেকেও নাকি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব। খেলার মাঠে সমর্থকরা নিজেদের দলকে সমর্থন জোগাতে চিৎকার করলে সেই চিৎকার থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তাহলে মিছিলে ও জনসভায় যে স্লোগান দেওয়া হয়, সেখান থেকেও তো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। শব্দ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই কায়দাটি যাঁরা আবিষ্কার করেছেন, তাঁদের বাংলাদেশে নিয়ে এলে বোধ হয় রেন্টাল, কুইক রেন্টালের চেয়েও কুইকলি বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
সমস্যা কি এটা? হাজার সমস্যা আমাদের। আমরা ভালো থাকতে চাই। সুস্থ থাকতে চাই। 'জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা ভবে'- কথাটা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু তার পরও 'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে'- এই সত্যটিও আমাদের সবার জন্য প্রযোজ্য। আমরা সুস্থ থাকতে চাই। চাই দীর্ঘজীবন। এর জন্য কত কসরত। মেপে চলার দিন এসে গেছে। চলছে তেল বর্জনের চেষ্টাও। যদিও তেলের দাম দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের দীর্ঘজীবনের লোভ থাকতেই পারে। তো, আমরা না হয় সাধারণ মানুষ। এক জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই আমরা। দেবতারাও কিন্তু এর বাইরে নন। সেই সত্য যুগে দেবতারাও চেয়েছিলেন অমরত্ব। অমৃত পান করে অমর, অজর ও নিরাময় থেকে অক্ষয় হওয়ার ইচ্ছে হলো তাঁদের। সুমেরু পর্বতে ব্রহ্মার সঙ্গে দেবতাদের সভা হলো। অমৃত পাওয়া যাবে সমুদ্রের তলদেশে। সেই অমৃত তুলতে হলে সমুদ্র মন্থন করতে হবে। কিন্তু সমুদ্রকে মন্থন করা দেবতাদের জন্য অসম্ভব ব্যাপার। কাজেই অসুরদের সাহায্য। ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা অসুরদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে সমুদ্রমন্থনের সিদ্ধান্ত নিলেন। সমুদ্রমন্থনের কাজে অসুরদের নিয়োজিত করতে না পারলে অমৃত পাওয়া যাবে না। তাই এ ব্যবস্থা। দেবতা ও অসুরদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক না থাকলেও এটা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না তাঁদের। অমৃত পাওয়া নিয়ে কথা!
ব্রহ্মার পরামর্শে শুরু হলো প্রস্তুতি। নাগরাজ বাসুকিকে করা হলো মন্থনরজ্জু। দেবতাদের অনুরোধে বাসুকি বিশাল মন্দর পর্বতকে তুলে আনলেন। সেটাই হবে মন্থনদণ্ড। মন্দর পর্বতকে বসানো হলো কচ্ছপরূপী বিষ্ণুর অবতার কুর্মের পিঠে। বাসুকির লেজের দিকে ধরলেন দেবতারা। অন্যদিকে মুখের দিকে রাখা হলো অসুরদের। এখানেও বুদ্ধি খাটিয়েছিলেন দেবতারা। কারণ বাসুকির মুখের তীব্র শ্বাস দেবতাদের ক্ষতির কারণ হতে পারত। শুরু হলো দেবতাদের সমুদ্রমন্থন। এখান থেকে উঠে আসবে অভীষ্ট অমৃত। বহুকাল ধরে চলল সমুদ্রমন্থন। প্রথমে উঠে এলো দুধ ও ঘি। একে একে অনেক কিছুই উঠে আসতে শুরু করল। বিষ্ণুর কূটকৌশলে দেবতারা বেছে বেছে সেরা সম্পদগুলো নিজেদের ভাগে নিতে লাগলেন। আরো সম্পদ পাওয়ার আশায় সমুদ্রমন্থন চলতেই থাকল। সমুদ্রের তো রত্নের অভাব নেই। সেই রত্ন পাওয়ার আশায় দেবতারা মন্থন করে যাচ্ছেন। অতিরিক্ত মন্থনে উঠে আসতে শুরু করল কালকূট বিষ। তীব্র সে বিষের জ্বালায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠল চারদিকে। দেবতাদের কারো সাধ্য নেই সে বিষ পান করে হজম করার। অবশেষে মহাদেব সেই বিষ পান করে নীলকণ্ঠ হলেন।
অর্ধেক মন্থনে যেমন বিষ ওঠে, তেমন অনেক প্রবাদ চালু আছে। যেমন বলা হয়, লেবু অধিক কচলালে তেতো হয়ে যায়। একটি বিষয় নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত আলোড়ন ক্ষতিকর।
কিন্তু দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার, সুস্থ থাকার চিন্তা তো আমাদের আছেই। অসুস্থ হলে আমরা ওষুধ সেবন করি। কিন্তু অতিরিক্ত ওষুধ সেবন ভালো নয়। অতিরিক্ত ওষুধ সেবন মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগও তো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাহলে উপায়?
উপায় একটা আছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গান বাড়ায় প্রাণশক্তি। কাজের মধ্যে গান বাজলে কাজের ফল বেশি পাওয়া যায়। সৃজনশীল কাজের জন্য প্রয়োজন সুরললিত আবেশ- এ রকমই বলছে আধুনিক বিজ্ঞান।
অতএব অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ করে আসুন গান শুনি, গান শোনাই। গানে গানে প্রাণে প্রাণে সৃজন করি প্রাণশক্তি। হেঁটে হেঁটে বিদ্যুৎ উৎপাদন আর গানে গানে উন্নয়ন- ভাবা যায়!

লেখক : সাংবাদিক
habib.alihabib@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.